পেস আগেই গেছে, এখন স্পিন নিয়েও হতাশা

মিরাজরা আজ ছিলেন নখদন্তহীন। ছবি: এএফপি
মিরাজরা আজ ছিলেন নখদন্তহীন। ছবি: এএফপি
>শ্রীলঙ্কার উইকেটে স্পিনারদের ওপরই বেশি ভরসা। কিন্তু সাকিবের অনুপস্থিতিতে বাংলাদেশের স্পিন আক্রমণ হয়ে গেছে বৈচিত্র্য ও নখদন্তহীন।

সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে বাংলাদেশের বোলিং নিয়েই যে মূল চিন্তা সেটা কোচ খালেদ মাহমুদ অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কথায় কিংবা অন্য সব আলোচনায় সে চিন্তার সবটুকুই ছিল পেস বোলারদের ঘিরে। স্পিন আক্রমণের কথা ভুলেই যেতে বসেছিলেন সবাই।

আলোচনাটা পেস নির্ভর হওয়ার কারণ ছিল। শ্রীলঙ্কা যাত্রার আগের দিন হঠাৎ করে ছিটকে গেছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রায় একই মুহূর্তে নাম কাটা পড়েছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। বিশ্বকাপে নতুন বলের দায়িত্ব নেওয়া দুই বোলারই ছিটকে পড়লে আলোচনা পেস আক্রমণকে ঘিরেই তো হবে। সে আলোচনার স্রোত বেড়েছে প্রস্তুতি ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই তড়িঘড়ি করে শফিউল ইসলামকে ডেকে পাঠানোয়।
একদিকে মাশরাফি-সাইফউদ্দিনের অনুপস্থিতি যেমন বাংলাদেশ দলে পেস আক্রমণে শূন্যতা সৃষ্টি করেছে, ওদিকে সাকিব আল হাসানের অনুপস্থিতিও যে অনেক বড় প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে সে কথা আড়ালেই চলে গিয়েছিল। স্কোয়াডে তাইজুল ইসলামকে ডেকে আনা হয়েছে কিন্তু দলের ব্যাটিং লাইনআপ ছোট না করলে তাঁর যে সুযোগ পাওয়া হচ্ছে না সেটা এক রকম জানাই ছিল। তাই তিনজন অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের ওপরই ভরসা রাখা হয়েছিল। মেহেদী হাসান মিরাজ ও মোসাদ্দেক হোসেন তো আছেনই, কাল অনুশীলনে হাত ঘুরিয়ে মাহমুদউল্লাহও প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন।

শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপে বাঁ হাতির আধিক্য নতুন নয়, তাই হয়তো অফ স্পিনারদের ওপর এত ভরসা করা। নতুন বল তুলে দেওয়া হয়েছিল মেহেদী হাসান মিরাজকে। প্রথম উইকেট পতনের পর দুই প্রান্তে দুই বাঁহাতি দেখে মোসাদ্দেক হোসেনের দেখা মিলতেও দেরি হয়নি। ফলে চকচকে দুটি নতুন বলে দুই দিক থেকে দুই স্পিনারের বোলিং দেখারও সুযোগ হলো।
কিন্তু শুধুমাত্র বাঁহাতি ব্যাটসম্যান বলেই যে ডান হাতে করা অফ স্পিন দিয়ে তাদের আটকানো যায় না সেটা সপ্তম ও অষ্টম ওভারেই বুঝিয়ে দিয়েছেন কুশল পেরেরা ও দিমুথ করুণারত্নে। দুজনেই বাংলাদেশের দুই অফ স্পিনারকে দুটি করে চার মেরে জানিয়ে দিয়েছেন বল ঘোরানোর দক্ষতা না থাকলে শুধুমাত্র অ্যাঙ্গেল ব্যবহার করে সব সময় সফল হওয়া যায় না। দুই ওভারে ১৮ রান তুলে অধিনায়ক তামিমের পাওয়ার প্লেতে দুই প্রান্তে স্পিনার ব্যবহার করার ইচ্ছে শেষ করে দেন লঙ্কানরা।

এরপরও বাংলাদেশের স্পিনাররা বল করেছেন। করুণারত্নকে আউটও করেছেন মিরাজ। এর মাঝে ৩২তম ওভারে ১ ম্যাচের বিরতি শেষে আবার ওয়ানডেতে বল করতে দেখা গেল মাহমুদউল্লাহকে। ওই ওভারে ৪ রান দিলেও তাঁকে পরে আনার সুযোগ মেলেনি। এর আগেই বাংলাদেশের দুই স্পিনারের দক্ষতার পরীক্ষা নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্যাটিং উইকেটে প্রায় একই ধরনের স্পিনারদের নিয়ে বৈচিত্র্যহীন আক্রমণ সাজানোর ফলও পেয়েছে বাংলাদেশ। উইকেট তুলে নেওয়ার দায়িত্বটা নিতে হয়েছে পেস আক্রমণকেই । শফিউল-রুবেলরা খুব ভালো করেছেন, সেটা বলা যাচ্ছে না। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মাটিতে স্পিন আক্রমণের তুলনায় তাদের অবদানটাই যা একটু পাতে তোলার মতো!
৭ ওভারে ৪৫ রানে উইকেটশূন্য মোসাদ্দেক। মিরাজ ৯ ওভার বল করে ৫৬ রানে ১ উইকেট। তিন স্পিনার মিলে ১৭ ওভারে ১০৫ রান দিয়েছেন। মোস্তাফিজুর রহমান আজ প্রথম ৬ ওভারে ৪৫ রান দিয়েছেন, প্রতিপক্ষ তিন শ ছাড়ানো স্কোর করেছে, সে সব চিন্তা করলে অনেক ভালো। কিন্তু শ্রীলঙ্কার মাটিতে ম্যাচ জিততে চাইলে যে স্পিনারদের আরও দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়। রান আটকানো এবং উইকেট তুলে নেওয়া-দুটি কাজই করতে হয় স্পিনারদের। সে দায়িত্ব পালনে আজ পুরোপুরি ব্যর্থ স্পিন আক্রমণ।