এমন কাউকে দেখেননি স্টিভ ওয়াহ!

অ্যাশেজের শুরুতেই রাঙালেন স্মিথ। ছবি: এএফপি
অ্যাশেজের শুরুতেই রাঙালেন স্মিথ। ছবি: এএফপি
এজবাস্টনে দুই ইনিংসে দুর্দান্ত দুটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন স্টিভ স্মিথ। দলের বিপদের মুখে বারবার তাঁর এমন লড়াই মুগ্ধ করেছে সাবেক খেলোয়াড়দের


সিরিশ কাগজ নিয়ে প্রস্তুত ছিল বার্মি আর্মি। দুয়ো ধ্বনি শোনা যাচ্ছিল গ্যালারি থেকেও। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর টেস্টে প্রত্যাবর্তন হচ্ছে অ্যাশেজেই। সেখানে প্রথম দিন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে আবেগে লাফ দেওয়া স্টিভ স্মিথের কানে তালির সঙ্গে কিছুটা শ্লেষাত্মক বাণীও শুনতে হয়েছিল। কিন্তু গতকাল যখন আরেকবার ব্যাট ওঠালেন স্মিথ, এবার অনেকটাই সৌম্য-শান্ত ভঙ্গিতে; তখন আর বিদ্রূপ ছিল না ইংলিশ সমর্থকদের মুখে। তাদের চোখে মুখে তখন বিস্ময় আর অবিশ্বাস্য এক ব্যাটিং কীর্তির দেখার প্রশস্তি।

হবে নাই-বা কেন? অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর ক্যারিয়ার কম লম্বা ছিল না। দুটি বিশ্বকাপজয় করেছেন, ১৯ বছরের ক্যারিয়ারের শেষ ১৫ বছর অ্যাশেজে হার কী সেটাই জানতেন না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সঙ্গে ৩৪ বছর জড়িয়ে থাকা সেই ওয়াহ পর্যন্ত বলতে বাধ্য হচ্ছেন স্মিথের মতো কাউকে দেখেননি। স্টিভ ওয়াহর মতো ঠান্ডা মাথার এক ব্যক্তির আবেগে ভেসে কোনো কিছু বলার সম্ভাবনা এতটাই কম যে কথাটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতেই হচ্ছে!

২০০১ সালের পর থেকে ইংল্যান্ডের মাটিতে অ্যাশেজ জেতা হচ্ছে না অস্ট্রেলিয়ার। দেড় যুগ পুরোনো সে স্বাদ ফিরে পেতে প্রতিপক্ষের মাটিতে সর্বশেষ অ্যাশেজ জেতা অধিনায়কের শরণাপন্ন হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। স্টিভ ওয়াহকে দলের মেন্টর হিসেবে ডেকে আনা হয়েছে। সে দায়িত্ব পালন করার ফাঁকেই ওয়াহ কাল মধ্যাহ্ন বিরতিতে কথা বলেছেন চ্যানেল নাইনের সঙ্গে। তখনো এজবাস্টন টেস্টের নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাননি স্মিথ, অপরাজিত ছিলেন ৯৮ রানে। তাতেও ওয়াহর স্তুতিতে কম পড়েনি, ‘আমি ওর মতো কাউকে দেখেনি। সে যেভাবে প্রস্তুতি নেয়, সেটা অসাধারণ। সে আগে থেকেই সব ভেবে রাখে। আমার দেখা যে কারও চেয়ে বেশিবার বলে ব্যাট চালায়। সে যখন ব্যাট করতে নামে তখন অনেকটা ঘোরের মধ্যে থাকে।’

স্মিথের প্রশংসায় এখানেই থামেননি ওয়াহ। মাত্র পঞ্চম অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে অ্যাশেজে টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পেয়েছেন স্মিথ। ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ ইংল্যান্ডের মাটিতে এ কীর্তি করা ওয়াহ স্মিথকে বিশ্বের অন্য সব ব্যাটসম্যানের চেয়ে আলাদা চোখে দেখতে শুরু করেছেন, ‘সে জানে সে কী করবে। সে জানে প্রতিপক্ষ কী করবে, তাকে কীভাবে আউট করার চেষ্টা করবে। ওকে দেখে মনে হয়, সব উত্তর ওর জানা। সে অসাধারণ এক খেলোয়াড়। আমার মনে হয় না এমন কাউকে আমি দেখেছি এবং রানের জন্য ওর যে ক্ষুধা এটা কারও নেই। ওর টেকনিক দুর্দান্ত, অনন্য। সে জানে কী করছে এবং কীভাবে রান করতে হয়। সে প্রত্যেকটা বল বিশ্লেষণ করে। সে অনেকটা কম্পিউটারের মতো, প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর দেয়।’

স্মিথের ১৪৪ ও ১৪২ রানের সুবাদেই জয় দিয়ে অ্যাশেজ শুরু করার আশা করতে পারছে অস্ট্রেলিয়া। অথচ প্রথম দিন ১২২ রান তুলতে ৮ উইকেট হারিয়ে বসেছিল দলটি। আর আজ পঞ্চম দিনের খেলা যখন শুরু হবে, তখন ইংল্যান্ডই পিছিয়ে থাকবে। সারা দিন ব্যাট করে জয়ের জন্য আরও ৩৮৫ রান করতে হবে ইংল্যান্ডকে। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন টুইটারে তাই কালই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমি যত দিন ধরে খেলেছি এবং খেলা দেখেছি, তাতে আমার দেখা সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান হলো স্টিভ স্মিথ। এই লোক একটা জিনিয়াস!’