'আইপিএলের দল পায় ১৫০ কোটি টাকা, বিপিএলে দেড় টাকাও নয়'

শুধু ট্রফি জিতলেই মুখে হাসি থাকে না বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির। প্রথম আলো ফাইল ছবি
শুধু ট্রফি জিতলেই মুখে হাসি থাকে না বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>বিপিএলে লাভের ভাগ চায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। বিসিবি কি আয় ভাগাভাগি করতে রাজি?

দুদিন আগে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল জানিয়েছে, প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে চুক্তি নবায়ন করতে হবে। এই ঘোষণার পর বিপিএলের আরও অনেক বিষয় চলে আসছে সামনে। এ ঘোষণার পর ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোও কিছু দাবি তুলে ধরেছে। এর মধ্যে একটি—আয়ের ভাগ চায় (রেভিনিউ শেয়ার) তারা।

ফ্র্যাঞ্চাইজি সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর গড়ে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ হয় একটা দল গড়তে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে যারা দল গড়ে তাদের খরচ আরও বেশি। কিন্তু টুর্নামেন্টে শক্তিমত্তায় পার্থক্য থাকলেও শেষ পর্যন্ত সবার লাভের খাতাটাই শূন্য। ট্রফি জিতলেই তাই শত ভাগ খুশি হওয়া কঠিন! রাজশাহী কিংসের প্রধান নির্বাহী তাহমিদ আজিজুল যেমন বললেন, ‘গত তিন বছরে আয় ভাগাভাগির বিষয়টা বলতে বলতে গলা শুকিয়ে গেছে! প্রতি বছর কত লোকসান গোনা যায়? আইপিএলে ভারতের একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি দল বছরে ১৫০ কোটি টাকা লাভের ভাগ পায়। আমরা দেড় টাকাও পাই না! পৃথিবীর সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে রেভিনিউ শেয়ার হয়। না হলে দল চলবে না। আমরা বিপিএল হৃদয় দিয়ে খেলি, প্যাশন দিয়ে খেলি। কিন্তু এভাবে তো চলা কঠিন।’

আর লোকসান গুনতে চায় না বলে এবার যেমন চিটাগং ভাইকিংসের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপ সরে দাঁড়িয়েছে বিপিএল থেকে। তারা ছেড়ে দিচ্ছে চিটাগং ভাইকিংস। সিলেট সিক্সার্সেরও মালিকানা বদল হওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। কিন্তু এত বড় বিনিয়োগের প্রণোদনাও তো চাইবেন বিনিয়োগকারীরা। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর এক কথা, খেলাটা ক্রিকেট হলেও ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট মানেই ব্যবসা। সেই ব্যবসা তাঁরা আর লোকসানে করতে চান না।

লোকসান আইপিএলের দলগুলোকেও শুরুর দিকে গুনতে হয়েছে। প্রথম আসরে যেমন কেবল কলকাতা নাইট রাইডার্সই লাভের মুখ দেখেছিল। দীর্ঘ মেয়াদে লাভের ভালো সম্ভাবনা থাকলে স্বল্পমেয়াদের লোকসান মেনে নিতে রাজি থাকেন বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু আইপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যে সুবিধা পায়, বিপিএলে তেমনটা নয়।

আইপিএলের আয়ের উৎস মূলত স্পনসরশিপ, গ্রাউন্ড স্পনসরশিপ, টিভি সত্ত্ব, টিকিট মানি। আয় ভাগাভাগি হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে। আইপিএলের প্রথম মৌসুমে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) ৮০ শতাংশ লাভের ভাগ দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। পরে সেটি ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। সে হিসেবেই গত বছরও প্রতিটি দল ১৫০ কোটি রুপি লাভের ভাগ পেয়েছে। আইপিএলের একটি আয়ের বড় উৎস টিভি স্বত্ব। চার বছর (২০১৮-২০২২) মেয়াদে স্টার ইন্ডিয়ান আইপিএলের টিভি স্বত্ব পেয়েছে ১৬ হাজার ৪৩৭ কোটি রুপি। প্রতি ম্যাচের মূল্য ৫৪ কোটি রুপি। ২০০৮ সালে আইপিএল শুরু হওয়ার পর বিসিসিআই ১০ বছরে আয়করই দিয়েছে ৩৫০০ কোটি রুপি। আয় করেছে ১২ হাজার কোটি রুপিরও বেশি।

ভারতের এই বিশাল বাজারের তুলনায় বিপিএল এক অর্থে কিছুই নয়। গত বছর বিপিএলের আয় সাকল্যে ৩৫ কোটি টাকা। বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য জালাল ইউনুসের তাই দাবি, এ আয় যদি তাঁরা ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে ভাগাভাগি করেন পরের বছর টুর্নামেন্ট আয়োজন করাই কঠিন হয়ে পড়বে, ‘আমাদের বাজার কি আইপিএলের সমান? তারা শত শত কোটি টাকা আয় করে। আমরা সে তুলনায় কিছুই নয়। এর মধ্যে অনেক খরচ আছে। মাঠের খরচ আছে। আম্পায়ার, মাঠ পরিচর্যা, নানা খাতে লোকবল, নিরাপত্তা কর্মীর খরচ আছে। সব খরচের পর যদি ২০ কোটি টাকাও না রাখতে পারি পরের বছর টুর্নামেন্ট কীভাবে আয়োজন করব? এখন সব ভাগাভাগি করার পর ধরেন থাকল ৫ কোটি টাকা। এই টাকার জন্য কি এত বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করা যায়?’

তবে আলোচনাটা যেহেতু উঠেছে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বিষয়টি আলোচনা করবে এবার। তারা জানতে চাইবে কত শতাংশ লাভ চায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এরই মধ্যে চুক্তি নবায়ন-প্রসঙ্গে সব দলকেই চিঠি দিয়েছে বিসিবি। ঈদের পর একে একে সবার সঙ্গে বসার কথা গভর্নিং কাউন্সিলের।