৭ ম্যাচ, ২ জয়, হজম ১৮ গোল - রিয়াল ঠিক আছে তো?

প্রশ্ন অনেক জিনেদিন জিদানের সামনে, জবাব খোঁজার সময় কম। ছবি: এএফপি
প্রশ্ন অনেক জিনেদিন জিদানের সামনে, জবাব খোঁজার সময় কম। ছবি: এএফপি
রোমার বিপক্ষে প্রাক-মৌসুমে সবশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে কাল ২-২ গোলে ড্র করেছে রিয়াল মাদ্রিদ, পরে হেরেছে টাইব্রেকারে। এ নিয়ে সাত ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের মধ্য রিয়াল জিতেছে মাত্র দুই ম্যাচে, গোল করেছে ১৪টি, খেয়েছে ১৮টি।


টিক-টক, টিক-টক। ঘড়ির কাঁটা এগোচ্ছে, আর জিনেদিন জিদানের কপালে ভাঁজ যেন আরও বাড়ছে। শনিবার সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লিগ শুরু হচ্ছে জিদানের রিয়াল মাদ্রিদের, দিন বাকি আর চারটি। কিন্তু নতুন মৌসুম শুরুর আগে এ কী অবস্থা রিয়াল মাদ্রিদের!

প্রাক-মৌসুমের সপ্তম ও সবশেষ প্রস্তুতি ম্যাচটা রিয়াল খেলেছে কাল, রোমার বিপক্ষে, রোমের স্তাদিও অলিম্পিকোতে। মাঝে তুরস্কের ফেনেরবাচে ও অস্ট্রিয়ার রেড বুল সালজবুর্গের বিপক্ষে জয় দুটি যদিও বা কিছুটা আশার রেণু সঞ্চার করেছিল, রোমার বিপক্ষে ২-২ ড্র শেষে তা অনেকটাই উধাও, পরে টাইব্রেকারে হেরেছেও রিয়াল। আবারও উন্মোচিত রিয়ালের রক্ষণভাগের দুর্বলতা—পুরো প্রাক-মৌসুমজুড়েই যা ভুগিয়েছে।

৭ ম্যাচে রিয়াল এ নিয়ে গোল খেয়েছে ১৮টি, করেছে ১৪টি, ম্যাচ জিতেছে দুটি। সে জয় দুটিও আবার তুলনামূলক দুর্বল ফেনেরবাচে ও সালজবুর্গের বিপক্ষে, ফেনেরবাচেকে পাঁচ গোল দিলেও খেয়েছে তিনটি। বায়ার্ন মিউনিখ, অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ, টটেনহাম, আর্সেনাল—অপেক্ষাকৃত বড় দলের বিপক্ষেই ভুগেছে রিয়াল, এর মধ্যে নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকোর কাছে তো হেরেছে ৭-৩ গোলে।

হ্যাঁ, শুধুই প্রীতি ম্যাচ, এখানে কোচরা পরীক্ষা-নিরীক্ষাই বেশি করেন বলে রিয়াল কিছুটা স্বস্তি খুঁজে নিতে চাইতে পারে। প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ম্যাচে, বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়াল অন্য রূপ নিয়ে আসে সাধারণত। কিন্তু মৌসুম শুরু হতে বাকি আর চার দিন, এত দিনে তো রিয়ালের খেলার একটা ছন্দ খুঁজে পাওয়ার কথা ছিল। প্রাক-মৌসুমের সাত ম্যাচ তা বলে না। গত মৌসুমের স্মৃতিও তো দুঃস্বপ্ন হয়ে উঁকি দেয়।

যেখানে লিগ শিরোপার দৌড়ে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা আর এই মৌসুমে অনেক অদলবদলের মধ্য দিয়ে যাওয়া অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও খেলায় ছন্দ খুঁজে নিয়েছে অনেকটা, রিয়াল যেন এখনো বুঝেই উঠতে পারছে না, খেলার কৌশল কী হবে! পরশু রোমার বিপক্ষে ম্যাচেই সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুই ছকে দল সাজিয়েছেন জিদান। সালজবুর্গের বিপক্ষে আগের ম্যাচেই ১-০ গোলে জয় এনে দেওয়া ৩-৫-১-১ ফরমেশন প্রথমার্ধে, তিন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারের পাশে দুই উইংব্যাক হিসেবে মার্সেলো ও কারভাহাল থাকায় যেটিকে ৫-৩-১-১ ছকও বলা যায়, সেখানে দ্বিতীয়ার্ধে পুরো খোলনলচে বদলে চার আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় হ্যাজার্ড-ভিনিসিয়ুস-বেনজেমা-ইয়োভিচকে খেলিয়েছেন জিদান। ৬১ মিনিটে বেনজেমার বদলি নামিয়েছেন গ্যারেথ বেলকে, কিছুক্ষণ পর ইসকোকে নামিয়েছেন হ্যাজার্ডের বদলে। মজার ব্যাপার, দ্বিতীয়ার্ধে তর্কসাপেক্ষে সেরা খেলোয়াড় ছিলেন এই বেলই, যাঁর সঙ্গে জিদানের সম্পর্ক আর যা-ই হোক, মধুর নয়।

প্রথমার্ধে ৩-৫-১-১ ছকে পাঁচ ডিফেন্ডারকে নিয়ে খেললেও রিয়াল দুই গোলই খেয়েছে সে সময়ে, গোল দুটি করেছেও অবশ্য তখনই। ১৬ মিনিটে লুকা মদরিচের পাস ধরে মার্সেলোর ডান পায়ের দারুণ শটে রিয়ালের এগিয়ে যাওয়া, ৩৪ মিনিটে পেরোত্তির গোলে ম্যাচে সমতা। যে গোলে ভুল রিয়াল ডিফেন্ডার নাচোর, ওপরে উঠে বল কেড়ে নিতে গিয়ে পারেননি, উল্টো রোমা উইঙ্গার নিকোলো জানিওলোর সামনে একা হয়ে পড়েন কাসেমিরো। সেই ‘ওয়ান-অন-ওয়ান’-এ সহজেই জেতা জানিওলোর ক্রসে গোল পেরোত্তির। ৩৯ মিনিটে কাসেমিরোই রিয়ালকে আবার এগিয়ে দিলেও, সেই গোলের উদ্‌যাপনের রেশ শেষ হওয়ার আগেই পরের মিনিটে বল রিয়ালের জালে। চেঙ্গিস উন্দারের দারুণ পাস চার রিয়াল ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে গেল এডিন জেকোর কাছে, এদার মিলিতাওয়ের চ্যালেঞ্জ এড়িয়ে বসনিয়ান স্ট্রাইকারের গোল করতে খুব একটা সমস্যা হয়নি।

রক্ষণ দুর্বলতা তো আছেই, রিয়ালের বড় দুশ্চিন্তা, দলে নতুন আসা খেলোয়াড়েরা এখনো ঝলক দেখাতে পারেননি। লেফটব্যাক ফারলান্দ মেন্দি তো চোটেই, হ্যাজার্ড-ইয়োভিচরাও এখনো দলে জায়গা পাকা করার দাবি তোলার মতো কিছু করতে পারেননি। জিদানও কী কৌশল সাজাতে হিমশিম খাচ্ছেন? এখন পর্যন্ত প্রাক-মৌসুমে ৪-২-৩-১, ৪-৩-৩, ৪-৪-২, ৩-৪-৩, ৩-৫-১-১...পরীক্ষা-নিরীক্ষা কি একটু বেশিই করছেন ফরাসি কিংবদন্তি?

মৌসুম শুরুর এত কাছে চলে এসে রিয়াল ভক্তদের একটু দুশ্চিন্তা না হয়ে পারে না!