গোলরক্ষক ছাড়া লিভারপুলের 'ইস্তাম্বুল-প্রেম' জমে না!

শিরোপা নিয়ে উল্লাস লিভারপুল খেলোয়াড়দের। ছবি: এএফপি
শিরোপা নিয়ে উল্লাস লিভারপুল খেলোয়াড়দের। ছবি: এএফপি
>উয়েফা সুপার কাপে চেলসিকে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লিভারপুল

ম্যাচ শেষে আশির দশকে হলিউডের ‘রকি’ সিনেমার বিখ্যাত সেই সংলাপটাই মনে করিয়ে দিলেন ইয়ুর্গেন ক্লপ। রিংয়ে লড়াই শেষে সিনেমার ক্লান্ত-বিধ্বস্ত নায়ক সিলভ্যালেস্টার স্ট্যালোন ‘ইয়ো আদ্রিয়ান’ বলে চেঁচিয়ে ডাকছিলেন তাঁর প্রেমিকাকে। ইস্তাম্বুলে কাল উয়েফা সুপার কাপে স্নায়ুক্ষয়ী জয়ের পর লিভারপুল কোচও স্মরণ করলেন আরেক আদ্রিয়ানকে। মাইক্রোফোনের সামনে ‘ইয়ো আদ্রিয়ান’ বলে ক্লপ যখন চিৎকার করে উঠলেন স্প্যানিশ গোলরক্ষকের তখন নিশ্চয়ই ভীষণ গর্ব হয়েছে।

ইস্তাম্বুলের সঙ্গে লিভারপুলের ‘পরিণয়’ আজকের নয়। এ শহরেই ২০০৫ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে এসি মিলানের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে লিভারপুলকে জিতিয়েছিলেন জের্জি দুদেক। আন্দ্রি শেভচেঙ্কোর পেনাল্টিটা ঠেকিয়েছিলেন পা দিয়ে। সে ম্যাচটি ইতিহাসে তকমা পেয়েছে ‘মিরাকল অব ইস্তাম্বুল’। তুরস্কের এ শহরেই লিভারপুলকে উয়েফা সুপার কাপ জেতালেন আরেক গোলরক্ষক, ১০ দিন আগেও যাঁর কোনো ক্লাব ছিল না, সেই তিনি কি না লিভারপুলের একাদশে প্রথম সুযোগ পেয়েই বনে গেলেন নায়ক! দুদেকের মতো সেই পা দিয়েই পেনাল্টি ঠেকালেন তিনিও।

ঠিক ধরেছেন, আদ্রিয়ানের কথাই বলা হচ্ছে। জুনের শেষ দিকে ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড তাঁকে ছেড়ে দেয়। ক্লাব খুঁজতে থাকা আদ্রিয়ানকে দলে টানেন ক্লপ। অভিজ্ঞ অ্যালিসনের ‘ব্যাক আপ’ হিসেবে। লিগের প্রথম ম্যাচে ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক চোটে পড়ায় সুযোগটা পেয়ে যান আদ্রিয়ান। চেলসির বিপক্ষে এ ম্যাচে নির্ধারিত সময়ে ১-১ গোলে ড্র করেছিল লিভারপুল। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে দুই দল একটি করে গোল করলে ২-২ গোলে অমীমাংসিত থাকে ম্যাচ। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। আর স্নায়ুচাপের এ পরীক্ষায় লিভারপুল ৫-৪ ব্যবধানের জয় পেয়েছে আদ্রিয়ান পা দিয়ে একটি স্পটকিক রুখে দেওয়ায়। চেলসির স্ট্রাইকার ট্যামি আব্রাহামের শটটি রুখে দেন এ গোলরক্ষক। এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো উয়েফা সুপার কাপ জিতল লিভারপুল। তাদের চেয়ে এ শিরোপা শুধু বার্সেলোনা ও এসি মিলানই বেশি সংখ্যকবার (৫) জিতেছে।

ইংল্যান্ডের এ দুই হেভিওয়েট ক্লাবের মুখোমুখি হওয়া মানেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কাল যেমন ৩৬ মিনিটে অলিভার জিরুর গোলে চেলসি এগিয়ে গেলেও লিভারপুল সমতায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি। তবে এর পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে রবার্তো ফিরমিনোকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত। অ্যালেক্স অক্সালেড-চেম্বারলিনকে তুলে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে মাঠে নামান ক্লপ। বিরতির পর খেলা শুরুর ৩ মিনিটের মাথায় সাদিও মানেকে দিয়ে গোল করান ফিরমিনো। এরপর ৯৫ মিনিটে মানেকে দিয়ে আরও একটি গোল করিয়েছেন ফিরমিনো। সত্যিই দুজনের বোঝাপড়াটা যেন ‘টেলিপ্যাথিক’!

ম্যাচের রেফারি স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট। ছেলেদের ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার তিনিই প্রথম নারী রেফারি। ছবি: এএফপি
ম্যাচের রেফারি স্টেফানি ফ্র্যাপার্ট। ছেলেদের ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার তিনিই প্রথম নারী রেফারি। ছবি: এএফপি

চেলসি সমতায় ফিরেছে ১০১ মিনিটে বিতর্কিত পেনাল্টির সিদ্ধান্ত থেকে। ভিডিও রিপ্লেতে, দেখা গেছে চেলসির ট্যামি আব্রাহামকে লিভারপুল গোলরক্ষক আদ্রিয়ান বাধা দিয়েছিলেন ঠিকই তবে সেটি পেনাল্টি দেওয়ার মতো অপরাধ ছিল না। কিন্তু ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান মাঠের রেফারি। স্পটকিক থেকে চেলসিকে সমতাসূচক গোলটি এনে দেন জর্জিনহো। মজার ব্যাপার, টাইব্রেকারে এই আব্রাহামের পেনাল্টি আটকেই সেই গোল হজমের শোধ তুলেছেন আদ্রিয়ান!

প্রায় দুই মাস আগে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইউরোপ-সেরা হয়েছে লিভারপুল। কালকের ম্যাচটা ছিল দুই পর্যায়ের (চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী ও ইউরোপা লিগ জয়ী) দুই সেরা—অর্থাৎ সেরার সেরা হওয়ার লড়াই। ক্লপ সেখানেও জিতে বুঝিয়ে দিলেন সামনের মৌসুমটা একেবারে মন্দ হবে না।