কেমন হলেন বাংলাদেশের নতুন কোচ

বাংলাদেশ দলের কোচ হিসেবে রাসেল ডমিঙ্গোকে বেছে নিয়েছে বিসিবি। এর আগে তাঁর সাক্ষাৎকারে খুশি হয়েছিলেন বিসিবির কর্তারা। কেমন কোচ ডমিঙ্গো, বাংলাদেশের জন্য কতটুকু উপকারে আসতে পারেন তিনি?

রাসেল ক্রেইগ ডমিঙ্গো—বড় পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে, তবে আছে কোচিংয়ের বিশাল অভিজ্ঞতা। যে বয়সে একজন ক্রিকেটারের ক্যারিয়ার শুরু হয়, ঠিক সে বয়সেই খেলা ছেড়ে তিনি বেছে নিয়েছিলেন খেলা শেখানোর পেশা। খেলোয়াড়ি জীবনে তেমন একটা ভালো ব্যাটসম্যান ছিলেন না। খেলেছেন দ্বিতীয় সারির লিগে, তখনই উপলব্ধি করেন খেলে সফল হতে পারবেন না, তবে থাকতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটের সঙ্গেই। খেলা ছেড়ে অর্জন করলেন স্পোর্টস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং মার্কেটিংয়ের ওপর ডিগ্রি। এরপর মাত্র ২৫ বছর বয়সেই দক্ষিণ আফ্রিকার ইস্টার্ন প্রভিন্স যুব দলের কোচের দায়িত্ব পেয়ে গেলেন।

বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন ডমিঙ্গো। ছবি: এএফপি
বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব পেয়েছেন ডমিঙ্গো। ছবি: এএফপি

পরের ১২ বছরে দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব-১৩, অনূর্ধ্ব-১৯ , বি দল ও এ দলের দায়িত্ব পালন করেন ডমিঙ্গো। ২০০৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া ক্রিকেটের অন্যতম সেরা দল ওয়ারিয়র্সের দায়িত্ব ছেড়ে জাতীয় দলের দায়িত্ব নেন মিকি আর্থার। এতে ওয়ারিয়র্স কোচের দায়িত্ব পান ডমিঙ্গো। সে সময় ওয়ারিয়র্সের প্রতিভাবান খেলোয়াড়েরা সুবিধা করতে পারছিলেন না, তখন ডমিঙ্গো সিদ্ধান্ত নিলেন দলের ব্যাটসম্যানদের বিশেষজ্ঞ কারও কাছ থেকে শিখতে হবে। এ সমস্যার সমাধানে দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান গ্যারি কারস্টেনকে নিয়ে ৩৫ দিনের ক্যাম্প করলেন।

এরপর কারস্টেন ভারতের কোচ হয়ে জিতলেন বিশ্বকাপ। ভারতকে নিয়ে গেলেন টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। অন্যদিকে রাসেল ডমিঙ্গো ওয়ারিয়র্সকে জেতালেন দুটি ট্রফি, তাঁর দলের ৬ জন সুযোগ পেলেন দক্ষিণ আফ্রিকা জাতীয় দলে। দল হিসেবে খুব বেশি ট্রফি জিততে না পারলেও ধারাবাহিক ভাবে সফল হতে থাকে ওয়ারিয়র্স।

২০১১ বিশ্বকাপ জিতিয়ে ভারত থেকে বিদায় নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ হন গ্যারি কারস্টেন। কোচ হয়েই নিজের সহকারী হিসেবে বেছে নিলেন ডমিঙ্গোকে। এক বছরের মাথায় সহকারী কোচ থেকে টি-টোয়েন্টি দলের হেড কোচে উন্নীত হলেন ডমিঙ্গো। ২০১৩ সালে গ্যারি কারস্টেনের বিদায়ের পর তিন সংস্করণেই প্রধান কোচের দায়িত্ব পান ডমিঙ্গো। তাঁর অধীনে ১৩ টেস্ট সিরিজের ৮টিতে জয়ী হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান থেকে সাতে নেমে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে তিনি টেনে তোলেন দুইয়ে।

ডমিঙ্গোর সময়ে ২২ ওয়ানডে সিরিজের ১৪টিতে জয়ী হয়ে ওয়ানডেতে শীর্ষ দল হিসেবে জায়গা করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। বিশ্বকাপের নকআউট ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র জয়টি আসে তাঁর সময়েই। টি-টোয়েন্টিতে ৪২ ম্যাচের মধ্যে ২৩ জয় এসেছে এ সময়। তাঁর অধীনে ২০১৫ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৭ সালে ওটিস গিবসনের হাতে দায়িত্ব দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা দল ছাড়েন ডমিঙ্গো।

উপমহাদেশের কোনো দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই ডমিঙ্গোর। দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরেও কোনো দলের সঙ্গে কাজ করেননি তিনি। তাঁর কোচিংয়ে বিশেষ ব্যাপার হলো, ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে মিশে যান, কিন্তু ক্রিকেটাররা যেন তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন, সেদিকেও থাকেন সর্বদা সচেষ্ট।

আরও পড়ুন: