স্মিথের জন্যই স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই টেস্ট

>
মাথায় বল লাগছে স্মিথের। ছবি: এএফপি
মাথায় বল লাগছে স্মিথের। ছবি: এএফপি

ইংল্যান্ডঃ ২৫৮ ও ৭৮/৪ (২৬ ওভার পর্যন্ত)
অস্ট্রেলিয়াঃ ২৫০/১০. এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইংল্যান্ড ৮৬ রানে এগিয়ে

লর্ডস টেস্টে কি কোনো ইতিবাচক ফল আসবে? চতুর্থ দিন শেষেও এখনো দুই দলের একটি করে ইনিংস বাকি। চতুর্থ দিন শেষে যত রানের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ুক ইংল্যান্ড, কাল ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়াকে আবার অলআউট করে ম্যাচ জিতে নেবে, সে আশা বার্মি আর্মির সবচেয়ে কড়া সদস্যও মনে হয় না করেন। তবু এই লর্ডস টেস্টের কথা মনে রাখবেন সবাই। মনে রাখতে হবে স্টিভ স্মিথের জন্যই।

প্রথমেই কয়েকটি বলের বর্ণনা দেওয়া যাক। একদম নিখুঁত হতে চাইলে পাঁচটি বল। ৯০ মাইল গতির কাছাকাছি জফরা আর্চারের স্পেলের আরেকটি শর্ট বল ছিল প্রথমটি। আর্চারের গতিকে পাত্তা না দিয়ে পুল করলেন স্মিথ, ফিল্ডারের সামনে দিয়ে হাপিত্যেশ বাড়াতে বাড়াতে সে বল চলে গেল সীমানার ওপাশে। তৃতীয় বলটি অফ স্টাম্পের ওপর, স্বভাবজাত ভঙ্গিতে ঠেকালেন সেটা স্মিথ। পরের বলটা একটু ওপরে রাখা হয়েছিল, মিড অন দিয়ে সপাটে চালালেন স্মিথ, আরেকটি চার। পরের বলটাও খুব একটা খারাপ ছিল না। কিন্তু স্মিথের ওদিকে নজর দেওয়ার সময় কোথায়! পেছনের পায়ে দাঁড়িয়ে কভার দিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। ফিল্ডাররা দৌড়ালেন বটে, কিন্তু চার যে আটকানো সম্ভব নয় সেটা দৌড় শুরু করার আগেই টের পাওয়া গেছে।

স্মিথের মারা ১৪টি বাউন্ডারির ১৩তম ছিল সেটি। সর্বশেষটির সঙ্গে স্মিথের আজকের ব্যাটিং একদমই যায় না। দুর্দান্ত রক্ষণের সেরা প্রদর্শনীতে মুগ্ধ করা স্মিথ বলটা একদমই বুঝতে পারেননি, ব্যাটের ছোঁয়া নিয়ে স্লিপ কর্ডনের পাশ দিয়ে আরেকটি স্লিপ না রাখার হতাশা সৃষ্টি করে দড়ি পার হলো সে বল। এর এক বল পরেই যেভাবে আউট হয়েছেন তার সঙ্গেও স্মিথের ব্যাটিং খাপ খায় না। সোজা স্টাম্পের বল খেলার চেষ্টা না করে ছেড়ে দিয়েছেন, এলবিডব্লু! তবু ড্রেসিংরুমে ফেরার সময় তালির অভাব হলো না। কারণটা লুকিয়ে আছে শুরুতে পাঁচ বলের কথা বলে যে বলটি বর্ণনা করা হয়নি তাতে।

৭৭তম ওভারের প্রথম বলে চার খাওয়ার পরও আর্চার হাল ছাড়েননি, পরের বলটিতেও বাউন্সার দিয়েছেন। সে বল খেলতে গিয়ে একটু গরবর হয়ে গেল স্মিথের। বল গিয়ে আঘাত হানল বাঁ কানের নিচে। সরাসরি উন্মুক্ত স্থানে ওভাবে বল আঘাত হানায় উইকেটের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েন। দলের ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এসে পরীক্ষা করে দেখেন স্মিথকে। একটু পরে দাঁড়িয়ে উঠে আবার খেলার ইচ্ছে জানিয়েছিলেন স্মিথ। কিন্তু অত বড় ঝুঁকি নেননি ডাক্তার রিচার্ড শ। মাঠ ছেড়ে চলে আসতে হয় স্মিথকে। ৮০ রানে স্মিথ তখনই মাত্র দলকে দুই শ পার করিয়েছেন।

ঠিক ৯ ওভার পরেই আবার ফিরে এসেছেন স্মিথ। মাত্র ১৫ রানের জুটি গড়ে সিডল ফিরে গেছেন দলকে ২১৮ রানে রেখে। সবাইকে বিস্মিত করে ফিরলেও স্মিথ নিজেও খুব বেশি কিছু করতে পারেননি। প্রথম তিন বলে দুটি চার মারলেও মাথায় পাওয়া আঘাত যে তাঁকে নাড়িয়ে দিয়েছে সেটা ব্যাটিং দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। পুরো ইনিংসে অদ্ভুতরে ভঙ্গিতে পা নেড়ে ও বল ছেড়ে অবলীলায় দেড় শর বেশি বল খেলা স্মিথ ফেরার পর মাত্র ৯ বল টিকতে পেরেছেন। তাতে তিন চারে ১২ রান করেই ফিরেছেন। তাঁর বিদায়ের পর অস্ট্রেলিয়াও আর মাত্র ১৬ রান যোগ করতে পেরেছে।

১২ রান খুব নগণ্য হলেও তা দিয়েই স্মিথের আজকের পারফরম্যান্সের মূল্যায়ন করা যায়। যেখানে সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছেন, আর্চারের গতি কিংবা ব্রডের নিয়ন্ত্রণের সামনে হতবুদ্ধ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন, সেখানে স্মিথ আরও একবার দেখিয়েছেন কীভাবে লড়তে হয়। মাথায় আঘাত পাওয়ার পর দেখিয়েছেন। আঘাত পাওয়ার আগের করা ৮০ রানের প্রতিটি মুহূর্তে দেখিয়েছেন। তার সুবাদেই এজবাস্টনের পর লর্ডসেও ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও ইংল্যান্ডের চেয়ে মাত্র ৮ রান পিছিয়ে থেকে প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার। ব্রড আর্চারের সামনে পড়ে ১০২ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও অস্ট্রেলিয়া যে এত দূর আসতে পারবে এ নিয়ে তাই সন্দেহ ছিল না। ১৬২ রানে শেষ পূর্ণাঙ্গ ব্যাটিং সঙ্গী টিম পেইন ফেরা পরও না!

স্মিথের কল্যাণে প্যাট কামিন্স আড়ালে চলে গিয়েছিলেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার আড়াই শ ছোঁয়া ইনিংসে তাঁর অবদানও কম নয়। শুধু ২০ রান করেছেন বলেই নয়, ৮০টি বল খেলে অন্য প্রান্তে স্মিথকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন বলে। নিজের দায়িত্বটাও পূরণ করেছেন। ৮ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ইংল্যান্ডকে দ্রুত রান তুলতে দেননি এই ফাস্ট বোলার। পর পর দুই বলে জেসন রয় ও জো রুটকে ফিরিয়ে দিয়েছেন পঞ্চম ওভারেই। ৯ রানে দুই উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের রান তোলার গতিতে পরে বাঁধ দিয়েছেন পিটার সিডল। ৫৫ রানের জুটি গড়া জো ডেনলি ও ররি বার্নসকে ৭ রানের মধ্যে ফিরিয়ে দিয়ে ইংলিশদের বেঁধে রেখেছেন সিডল।