প্রতি গোলের দাম ১১৫ কোটি টাকা!

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি অ্যালেক্সিস সানচেজ। ছবি: এএফপি
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি অ্যালেক্সিস সানচেজ। ছবি: এএফপি
>

বড় আশা করে আর্সেনাল থেকে অ্যালেক্সিস সানচেজকে নিয়ে এসেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। উদ্দেশ্য ছিল এক ঢিলে তিন পাখি মারা। সেরা খেলোয়াড়কে নিয়ে আসলে গানারদের শক্তি কমবে, নিজেদের রাইট উইঙ্গারের সমস্যা মিটবে, ভালো না খেলা হেনরিখ মিখিতারিয়ানকে ইউনাইটেড থেকে সরানোও যাবে। অদল-বদলের এই পরিকল্পনা ইউনাইটেডের জন্য এখন আর দুর্দান্ত মনে হচ্ছে না

‘সাদা হাতি’ বাগধারাটার অর্থ ফুটবল বিশ্বে এখন হয়তো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের চেয়ে ভালো করে কেউ বুঝবে না। সাদা হাতি হচ্ছে যার পেছনে প্রচুর খরচ হয়, কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পাওয়া যায় না। সানচেজকে নিয়ে ইউনাইটেডেরও এখন একই হাল হয়েছে। অথচ কত আশা করেই না সানচেজকে দলে নিয়ে এসেছিলেন তৎকালীন কোচ হোসে মরিনহো!

বহুদিন ধরেই ইউনাইটেডের একজন আদর্শ রাইট উইঙ্গারের দরকার ছিল। হুয়ান মাতা, হেনরিখ মিখিতারিয়ান, হেসে লিনগার্ড, মার্কাস রাশফোর্ড, অ্যাশলি ইয়াং বা আন্তোনিও ভ্যালেন্সিয়াদের কেউই প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করছিলেন না। সে সমস্যা কাটানোর জন্যই প্রিমিয়ার লিগে তখনকার অন্যতম সেরা খেলোয়াড় অ্যালেক্সিস সানচেজকে আর্সেনাল থেকে উড়িয়ে এনেছিল ইউনাইটেড, বিনিময়ে হেনরিখ মিখিতারিয়ানকে পাঠিয়েছিল আর্সেন ওয়েঙ্গারের দলে। প্রতিপক্ষের সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড়টিকে দলে আনার তৃপ্তি তো ছিলই, সঙ্গে বহুদিনের রাইট-উইং সমস্যা সমাধানের স্বস্তিও ছিল। কিন্তু সেই স্বস্তিকে অস্বস্তিতে পরিণত করতে বেশি দিন সময় নেননি সানচেজ।

ইউনাইটেডে এসে যেন ফুটবল খেলতে ভুলে গেলেন। ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার আগে দুর্দান্ত, কিন্তু যোগ দেওয়ার পর জঘন্য—এই তালিকায় অ্যানহেল ডি মারিয়া, রাদামেল ফালকাও, মরগান স্নাইডারলিন, ডেলে ব্লিন্ড, মেমফিস ডিপাই, মাত্তেও দারমিয়ান, রোমেলু লুকাকুদের সঙ্গে যোগ দিলেন তিনিও। হিসাব করে জানা গেছে, ইউনাইটেডে প্রতি গোল করার পেছনে প্রায় ১১৫ কোটি টাকা করে পেয়েছেন সানচেজ!

ব্যাপারটা একটু খোলাসা করা যাক। আর্সেনাল থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পেছনে সানচেজের সবচেয়ে বড় অনুঘটক ছিল বেতনের অঙ্ক। বিশাল বেতনের বিনিময়ে ইউনাইটেডে নাম লিখিয়েছিলেন। প্রতি সপ্তাহে ন্যূনতম সাপ্তাহিক বেতন হিসাবে সানচেজ পকেটে পোরেন ৩ লাখ ৯১ হাজার পাউন্ড, বাংলাদেশি টাকায় যা চার কোটি টাকারও বেশি। এ ছাড়া যে ম্যাচে মূল একাদশে থাকেন সে ম্যাচের জন্য বাড়তি ৭৫ হাজার পাউন্ড বোনাস পান। তা ছাড়া বার্ষিক বোনাস হিসেবে সানচেজকে আরও ১১ লাখ পাউন্ড দেয় ইউনাইটেড (১১ কোটি ৪০ লাখ টাকার মতো)।

ইউনাইটেডের হয়ে খেলার জন্য চুক্তিপত্র স্বাক্ষরের সময়েই সাইনিং বোনাস হিসেবে আরও দুই কোটি পাউন্ড পেয়েছিলেন সানচেজ, টাকার হিসেবে ২০৭ কোটি টাকার একটু বেশি। প্রতি মৌসুমে যদি অন্তত ৩০ ম্যাচে প্রথম একাদশে থাকেন, তাহলে ইউনাইটেডের কাছ থেকে আরও ২০ লাখ পাউন্ড পাওয়ার কথা ইউনাইটেডের। কপাল ভালো, ১৩টির বেশি ম্যাচে প্রথম একাদশে থাকা হয়ে ওঠেনি সানচেজের, এতটাই বাজে খেলেছেন!

গত ১৯ তারিখ পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে দেখা গেছে, সানচেজের পেছনে ইউনাইটেডের শুধু মূল বেতন-বাবদ খরচ হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি পাউন্ড, টাকার হিসেবে ৫৭০ কোটি টাকা। অন্যান্য বেতন-বোনাসের কথা না হয় বাদই থাক! ২০২২ পর্যন্ত সানচেজের সঙ্গে চুক্তি করেছে ইউনাইটেড, চুক্তির পুরোটা সময় যদি ইউনাইটেডেই কাটিয়ে দেন, তাহলে সানচেজের পেছনে আরও প্রায় সাড়ে নয় কোটি পাউন্ড খরচ হবে ইউনাইটেডের।

গত দুই বছরে ৪৫ ম্যাচ খেলে পাঁচ গোল করেছেন আর নয়টা গোলে সহায়তা করেছেন সানচেজ। অর্থাৎ প্রতি গোল করার জন্য সানচেজ পাচ্ছেন ১ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড বা ১১৫ কোটি টাকা, প্রতি গোলে সহায়তা করার জন্য পাচ্ছেন ৬১ লাখ পাউন্ড বা প্রায় ৬৪ কোটি টাকার মতো! প্রতি মিনিট খেলার জন্য পাচ্ছেন ২১ লাখ টাকা করে। ভাবা যায়!

অথচ সানচেজকে যখন ক্লাবে নিয়ে আসা হয়েছিল, হাসতে হাসতে তৎকালীন কোচ হোসে মরিনহো বলেছিলেন, ‘ওকে আমরা অনেক কম দামেই পেয়েছি। ফ্রি ট্রান্সফারে পেয়েছি, ফ্রি!’ দলবদল ফি বাবদ আর্সেনালকে কিছু দেওয়া লাগেনি ইউনাইটেডের, শুধু হেনরিখ মিখিতারিয়ানকে পাঠিয়েই হয়ে গিয়েছিল, এটাই বলতে চেয়েছিলেন মরিনহো।

ইউনাইটেডের মালিকপক্ষ এখন মরিনহোর কাছে ‘ফ্রি’–এর সংজ্ঞা নতুন করে জানতে চাইতেই পারেন!