তোরেসকে আবেগি বিদায় ইনিয়েস্তার

গতকাল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেছেন স্পেনের তারকা স্ট্রাইকার ফার্নান্দো তোরেস। ছবি : টুইটার
গতকাল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেছেন স্পেনের তারকা স্ট্রাইকার ফার্নান্দো তোরেস। ছবি : টুইটার
>

গতকাল দেড় যুগের দীর্ঘ ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন ফার্নান্দো তোরেস। তাঁর বিদায়ে আবেগমাখা চিঠি লিখেছেন বিশ্বকাপজয়ী স্পেন দলের সতীর্থ আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা।

স্পেন ফুটবল দলের সবচেয়ে গৌরবময় মুহূর্তটা এসেছিল এই দুজনের হাত ধরেই। ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালে যখন কেউ গোল করতে পারছিল না, তখন ফার্নান্দো তোরেসের ডিফেন্সচেরা এক পাস সেস ফ্যাব্রিগাস হয়ে খুঁজে নিয়েছিল আন্দ্রেস ইনিয়েস্তাকে। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে ওই রকম এক সুযোগ থেকে গোল করতে ভুল করেননি ইনিয়েস্তা।

সেই গোলের ওপর ভর করেই বিশ্বকাপ জিতেছে স্পেন। ফুটবল ঐতিহ্যে গৌরবান্বিত এক দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ফুটবলীয় সাফল্য। ইনিয়েস্তার ক্যারিয়ারেরও সবচেয়ে দামি গোল বৈকি! সে গোলের কারিগরের অবসরের খবরে ইনিয়েস্তা আবেগপ্রবণ হবেন না, তা কি হয়?

গতকাল নিজের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন ফার্নান্দো তোরেস। জাপানি ক্লাব সাগান তোসুর এই স্ট্রাইকার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ভিসেল কোবের বিপক্ষে। কাকতালীয়ভাবে, স্পেন জাতীয় দলের সাবেক সতীর্থ ইনিয়েস্তা আর ডেভিড ভিয়া খেলেন ভিসেল কোবের হয়ে। ফলে, তোরেসের শেষ ম্যাচটা হয়ে গেল ‘বুড়ো’ স্প্যানিশদের মিলনমেলা। বিদায়টা ঠিক সুখকর হয়নি তোরেসের জন্য, ৬-১ গোলে হারতে হয়েছে ইনিয়েস্তা দলের সঙ্গে। তাতে কী? এ ধরনের ম্যাচে ফলাফল যে গৌণ হয়ে যায়!

প্রিয় বন্ধুর ক্যারিয়ারের শেষ দিনটা আবেগী এক লেখক বানিয়ে দিয়েছে ইনিয়েস্তাকে। ইনস্টাগ্রামে ইনিয়েস্তার চিঠিতে ফুটে উঠেছে বয়সভিত্তিক দল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দুই বন্ধুর অনেক স্মৃতি, ‘অদ্ভুত লাগছে আমার, অদ্ভুত সুন্দর একটা বিষয় এটা। এত দিন পর আবারও আমরা এক হয়েছি, তোমার শেষ ম্যাচটা খেলার জন্য। আমার হয়তো আরও কিছু ম্যাচ বাকি আছে, কিন্তু তোমার ক্যারিয়ার আজ শেষ হয়ে গেল। কী অদ্ভুত দেখো, জীবন আমাদের একই সঙ্গে বিশ্বের অন্যপ্রান্তে নিয়ে এসেছে, জাপানে। আর এখানেই খেলতে খেলতে তোমাকে বিদায় জানাচ্ছি আমরা! ব্যাপারটা কিন্তু বেশ মজার! ফুটবল আমাদের বিশ্বের বিভিন্ন কোনায় নিয়ে গেছে। দেখো, আজ আমরা কোথায়! জাপানের তোসুতে, তুমি আর আমি একটা ফুটবল ম্যাচ খেলছি। কিন্তু এটা কোনো সাধারণ ম্যাচ নয়, তোমার শেষ ম্যাচ। কে ভেবেছিল তুমি তোমার শেষ ম্যাচটা এখানে খেলবে?’

তোরেসের বিদায়ে ইনিয়েস্তা খুলে বসেছেন স্মৃতির ঝাঁপি, ‘বিশ বছর আগে এই ফুটবলের কল্যাণেই আমরা এক হয়েছিলাম, আমরা তখন শিশু ছিলাম। তুমি আমার কাছে সারা জীবন ‘এল নিনো’ই (তোরেসের ডাকনাম) থাকবে। আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। আমরা যখন একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হলাম, দুজনের চোখেই ছিল স্বপ্নের মায়াঞ্জন। সে গোলটার কথা মনে পড়ছে, অনূর্ধ্ব-১৬ ইউরোতে যে গোলটা আমাদের হয়ে তুমি করেছিলে। গোল করার পর তুমি টিভির সামনে এসে আমাকে উৎসর্গ করেছিলে। আমি তখন চোটে পড়েছি, বাসায় বসে বসে মন খারাপ করে খেলা দেখছি। আমি কখনই তোমার ওই উপহার ভুলব না।’

দুই বন্ধুর স্বপ্নই ছিল বিশ্বকাপ জেতার, জানিয়েছেন ইনিয়েস্তা, ‘অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে আমরা ভালো খেলতে পারলাম না। তখনই তুমি একটা জার্সিতে লিখেছিলে, “একদিন না একদিন আমরা আসল বিশ্বকাপটা জিতবই!”’ বলা বাহুল্য, দুই বন্ধু সেই প্রতিজ্ঞা পূরণ করেছেন বেশ ভালোভাবে।

সে জার্সিটা এখনো পরম যত্নে নিজের কাছে রেখেছেন ইনিয়েস্তা, 'স্পেনে যখন আমাদের দেখা হবে, আমি তোমাকে সে জার্সিটা আবার দেখাব। এই অসাধারণ সম্পদটা আর কেউ দেখেনি কখনো। তবে এটা সত্যি কথা, আমাদের বন্ধুত্বের কাছে পৃথিবীর কোনো সম্পদই তুলনীয় নয়, ফার্নান্দো।'

তোরেসকে এখন থেকেই মিস করা শুরু করে দিয়েছেন ইনিয়েস্তা, 'আজ আমার আর ভিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে তুমি। তারপর বাড়ি চলে যাবে। তবে এটা মনে রেখো, আজকে যে বলটা দিয়ে আমরা খেলব, সেটার মন অনেক খারাপ থাকবে! অবসরের পর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করো ফার্নান্দো। সুখে থাকো। কি অদ্ভুত না, এখনো তুমি অবসর নাওনি কিন্তু আমি এখনই তোমাকে মিস করা শুরু করে দিয়েছি!'