চ্যাম্পিয়নস লিগে 'মৃত্যুফাঁদে' বার্সেলোনা

বেশ কঠিন গ্রুপই পেয়েছে বার্সেলোনা। ছবি : টুইটার
বেশ কঠিন গ্রুপই পেয়েছে বার্সেলোনা। ছবি : টুইটার
>এই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে কে কোন গ্রুপে খেলবে, তা নিশ্চিত হয়েছে গতকাল। ফ্রান্সের মোনাকোতে হওয়া অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়েছে কার গ্রুপে কে পড়েছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক, চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার লড়াইয়ে গ্রুপ পর্বে কোন কোন ক্লাবকে পেল বার্সেলোনা, আর সেই গ্রুপ পেরিয়ে তাদের দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়াটা কতটুকু সহজ বা কঠিন হবে।

এবার চ্যাম্পিয়নস লিগে বেশ কঠিন গ্রুপই পেয়েছে বার্সেলোনা। বার্সেলোনার গ্রুপ ‘এফ’কে এবার বলা হচ্ছে মৃত্যুফাঁদ। প্রতিবারই কোনো না কোনো গ্রুপ ‘মৃত্যুফাঁদ’ বিশেষণ পায় চারটি দলের মধ্যে যে গ্রুপের চারটি বা অন্তত তিনটি দল বেশি শক্তিশালী থাকে। এবার লিওনেল মেসিদের ভাগ্যে পড়েছে অমন গ্রুপ। মেসি-সুয়ারেজরা এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের গ্রুপ পর্বে লড়বেন জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড, ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান ও চেক প্রজাতন্ত্রের স্লাভিয়া প্রাহার সঙ্গে।

বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। সুইস কোচ লুসিয়ান ফাভরের অধীনে গত মৌসুম থেকে আবারও ক্ষুরধার ফুটবল খেলা শুরু করেছে দলটি। গত মৌসুমের শেষ দিকে খামোকা কিছু পয়েন্ট না হারালে হয়তো বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে তারাই জার্মান লিগ জিতে যেত। যদিও জার্মান সুপার কাপে বায়ার্নকে হারানোর ফলে একদম খালি হাতে ফিরতে হয়নি তাদের।

ডর্টমুন্ডের সবচেয়ে বড় শক্তি তাদের তারুণ্য ও কোচের প্রজ্ঞা। ইউরোপের বিভিন্ন ক্লাব থেকে হেলাফেলায় পড়ে থাকা খেলোয়াড়দের তুলে এনে কোন এক জাদুমন্ত্রবলে উজ্জীবিত করে তুলেছেন ফাভরে। পাকো আলসাসেরের কথাই ধরুন। বার্সেলোনায় যত দিন ছিলেন, মূল একাদশে নিয়মিত সুযোগ হয়নি তাঁর। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে আসার পর থেকে গোলবন্যা বইয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে গত মৌসুমে ৩২ ম্যাচে ১৯ গোল করা আলসাসের এবারও লিগে এই পর্যন্ত দুই ম্যাচে করেছেন দুই গোল। যে জাডোন সানচো ম্যানচেস্টার সিটির মূল একাদশে সুযোগ পাননি কখনো, সে সানচো এখন বিশ্বের অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন।

আক্রমণভাগে আলসাসের ও সানচো ছাড়াও রয়েছেন দলের অধিনায়ক মার্কো রয়েস, মারিও গতসা। এ মৌসুমে আবার নিয়ে আসা হয়েছে থরগান হ্যাজার্ড, জুলিয়ান ব্রান্টের মতো তরুণ প্রতিভাধর খেলোয়াড়দের। মিডফিল্ডে বেলজিয়ান তারকা অ্যাক্সেল উইটসেলকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য রয়েছেন টমাস ডেলেনি, মাহমুদ দাহুদ ও জুলিয়ান ভাইগেলের মতো বুদ্ধিদীপ্ত খেলোয়াড়েরা। রক্ষণভাগও বেশ শক্তিশালী তাদের। পুরোনো যোদ্ধা মার্সেল স্মেলতজার ও লুকাস পিশচেকের পাশাপাশি ড্যান-অ্যাক্সেল জাগাদু, ম্যানুয়েল আকাঞ্জি, রাফায়েল গেরেইরোর মতো তরুণেরাও রয়েছেন। শুধু লেফটব্যাক পজিশনে যা একটু সমস্যা ছিল, সেটাও তারা পূরণ করেছে তরুণ জার্মান লেফটব্যাক নিকো শুলজকে দলে আনার মাধ্যমে।

সব মিলিয়ে ডর্টমুন্ড বেশ শক্তিশালী। দ্রুতগতির প্রতি-আক্রমণনির্ভর ফুটবল খেলে বার্সেলোনাকে যদি হারিয়েও দেয়, আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। আর দ্রুতগতির প্রতি-আক্রমণনির্ভর খেলায় ভালভার্দের দল এখনো যে কতটা কাঁচা, সেটা গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালেই দেখা গেছে লিভারপুলের বিপক্ষে। আর প্রতিপক্ষের মাঠে খেই হারিয়ে ফেলার উদাহরণ বার্সেলোনার আছেও একাধিক। গত বছর রোমার মাঠে গিয়ে ম্যাচ হেরে এসেছিল, এবার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা সত্ত্বেও লিভারপুলের মাঠে গিয়ে হেরে এসেছে। ডর্টমুন্ডের ওয়েস্টফলেনস্টাডিওনে খেলতে গেলে এমনিতেই যেকোনো ক্লাবকে যথেষ্ট প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। লিওনেল মেসিরা আগে কখনো এই মাঠে খেলতেও আসেননি। ফলে নিজেদের মাঠে ডর্টমুন্ড যে বার্সেলোনাকে হারিয়ে দেবে না, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ ইউরোপীয় প্রতিযোগিতার কোনো ম্যাচে বার্সেলোনার সঙ্গে ডর্টমুন্ডের দেখা হয়েছিল সেই ১৯৯৭ সালের উয়েফা সুপার কাপ ফাইনালে। দুই লেগের সেই ফাইনালে প্রথম লেগে ২-০ গোলে জিতেছিল বার্সা, পরের লেগটা ১-১ গোলে ড্র করে শিরোপা জিতে নেয় তারা।

শুধু ডর্টমুন্ড না, বার্সার কপালে চিন্তার ভাঁজ বাড়িয়ে দিয়েছে গ্রুপে ইন্টার মিলানের অন্তর্ভুক্তি। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়ে যাওয়া ইন্টার মিলান ও এই মৌসুমের ইন্টার মিলানের মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক। ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নরা এবার চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে আসছে নতুন উদ্যমে। দলে এসেছেন নতুন কোচ আন্তোনিও কন্তে। গত দশকে মাঝারি মানের ইতালিয়ান দলে পরিণত হয়ে যাওয়া জুভেন্টাসকে আবারও ইতালির সেরা ক্লাবে পরিণত করেছেন যিনি। এবার একই লক্ষ্যে ইন্টারে এসেছেন এই ইতালিয়ান কোচ। আর সঙ্গে করে এনেছেন কিছু কার্যকরী খেলোয়াড়কে, যেসব খেলোয়াড় তাঁর দর্শনের সঙ্গে যায়। খামোকা খেলোয়াড় কিনে দল ভারী করেননি। দলে এসেছেন রোমেলু লুকাকু, আলেক্সিস সানচেজ, স্টেফানো সেনসি ও নিকোলো বারেলা, ডিয়েগো গডিন। ৩-৫-২ ছকে দলকে খেলিয়ে জুভেন্টাস ও চেলসির মতো ইন্টারেও জয়যাত্রা অব্যাহত রাখতে চান তিনি।

গতবার গ্রুপ পর্বে ইন্টারকে হারানো মোটামুটি সহজ হলেও এবার অত সহজে ইন্টার বার্সার কাছে বশ মানবে না হয়তো।

গ্রুপের বাকি দল স্লাভিয়া প্রাহা। তিন পরাশক্তির মধ্যে এই স্লাভিয়াই বলতে গেলে পুঁচকে দল। স্লাভিয়ার বিপক্ষে দুই ম্যাচে পুরো ছয় পয়েন্ট পাওয়াই লক্ষ্য থাকবে বার্সেলোনার। যদিও চ্যাম্পিয়নস লিগে এর আগে কখনো এই দলের মুখোমুখি হননি মেসিরা।