মেসির সঙ্গে ডিনারে বসা হয়নি, আক্ষেপ রোনালদোর

পাশাপাশি হাসিমুখে বসে মেসি-রোনালদো। কাল মোনাকোয় উয়েফা বর্ষসেরা অনুষ্ঠানে। ছবি: টুইটার
পাশাপাশি হাসিমুখে বসে মেসি-রোনালদো। কাল মোনাকোয় উয়েফা বর্ষসেরা অনুষ্ঠানে। ছবি: টুইটার
>মোনাকোর গ্রিমালদি ফোরামে কাল চ্যাম্পিয়নস লিগ ড্র ও উয়েফা বর্ষসেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রশংসায় ভাসিয়ে দিয়েছেন একে-অপরকে। জানিয়েছেন নিজেদের মুগ্ধতার কথা

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী? সে আর বলতে! সেটি মাঠের লড়াইয়ে। পেশাদারত্বের কারণে দুজন নিজেদের সর্বোচ্চটুকুই নিংড়ে দেন একে-অপরের বিপক্ষে। কিন্তু মাঠের বাইরের দুনিয়াটা আলাদা। সেখানে একে-অপরের প্রতি মুগ্ধতাই প্রকাশ করলেন দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। একজন তো খোলাখুলিই জানিয়ে দিলেন, স্পেন কতটা ‘মিস’ করেন আর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকেও কতটা মনে পড়ে।

বলা হচ্ছে লিওনেল মেসিক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কথা। প্রায় ১৫ বছর ধরে দুজন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। ফুটবল ইতিহাসে তাঁদের মতো দ্বৈরথ আর আছে কি না, তা গবেষণার বিষয়। প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অন্য এক মাত্রায় নিয়ে যাওয়া এ দুই বিশ্বসেরা ফুটবলার এর আগে অনেকবারই জানিয়েছেন একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও মুগ্ধতার কথা। কাল মোনাকোর গ্রিমালদি ফোরামে উয়েফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে আরও একবার দেখা গেল তা—পাশাপাশি বসে মেসি ও রোনালদো। মাইক্রোফোন হাতে রোনালদোই আরও একবার ভুল ভাঙালেন ফুটবলপ্রেমীদের, ‘আমাদের সম্পর্কটা ভালো।’

পাঁচবার করে বর্ষসেরা এ দুই ফুটবলারের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছেদ পড়ে ২০১৮-১৯ মৌসুমে। রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে গত বছরের জুলাইয়ে জুভেন্টাসে নাম লেখান রোনালদো। এতে লা লিগায় দুজনকে আর মুখোমুখি দেখার সুযোগ নেই। উয়েফার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে দুজন পাশাপাশি উপভোগ করেছেন একে-অপরের সঙ্গ, হাসিমুখে কথাও বলেছেন তাঁরা। উয়েফা বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের নাম ঘোষণার আগে রোনালদোই বললেন নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে, ‘আমরা মঞ্চটা (প্রতিদ্বন্দ্বিতা) ১৫ বছর ধরে ভাগ করে নিচ্ছি, সে আর আমি। ফুটবলে এটা কখনো ঘটেছে কি না, জানি না। একই মঞ্চে সব সময় সেই দুজনই, এটা মোটেও সহজ নয়।’

ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথাও সেরেছেন দুই তারকা। ছবি: টুইটার
ফিসফিস করে নিজেদের মধ্যে কথাও সেরেছেন দুই তারকা। ছবি: টুইটার

ফুটবলপ্রেমীরা দুজনের সম্পর্ককে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচে দেখতেই ভালোবাসেন। কিন্তু রোনালদো জানিয়ে দিলেন ভেতরের কথা, ‘প্রায় ১৫ বছর এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরও আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক। আমাদের এখনো একসঙ্গে ডিনারে বসা হয়নি। ভবিষ্যতে হয়তো হবে।’

মেসি-রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা অন্য মাত্রা পেয়েছে লা লিগায়। রিয়াল ছাড়ার পর পর্তুগিজ তারকার কি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীকে মনে পড়ে? অবশ্যই। মেসি ছিলেন বলেই তো রোনালদো প্রতিদিন উন্নতি করার খিদে টের পেয়েছেন। কিংবা তার উল্টোটা। জুভেন্টাস তারকা বলেন, ‘অবশ্যই আমি স্পেনে খেলা মিস করি। মেসি ও আমার মধ্যে অসাধারণ লড়াই ছিল। আমরা একে-অপরের উন্নতিতে সাহায্য করেছি। ফুটবল ইতিহাসে এটাই সেরা দ্বৈরথ। ইতিহাসের অংশ হতে পারা ভালো। আমি যেখানে আছি সে-ও সেখানেই আছে।’

রোনালদোর এখন ৩৪ বছর চলছে। মেসি বয়সে তাঁর চেয়ে দুই বছরের ছোট। আর্জেন্টাইন তারকার সঙ্গেই অবসর নেওয়ার ইচ্ছে আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে রোনালদো বলেন, ‘সে আমার চেয়ে দুই বছরের ছোট। কিন্তু এ বয়সে আমিও ভালো (ফিটনেস) আছি। আশা করি আগামী বছরও আমি এখানে আসতে পারব। এরপরের দুই বছর কিংবা তৃতীয় বছরেও। এতে যারা অপছন্দ করে তারা আমাকে দেখবে এখানে।’

মেসির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রোনালদো। ছবি: টুইটার
মেসির সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন রোনালদো। ছবি: টুইটার

রোনালদো ইতালিতে পাড়ি জমালেও স্পেন থেকে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর খেলা দেখেন মেসি। নিজেই জানালেন সে কথা। আরও জানালেন, রোনালদোর সঙ্গে তাঁর সুন্দর প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। ‘ক্রিস্টিয়ানোর সঙ্গে সুন্দর দ্বৈরথ ছিল। আসল লক্ষ্য ছিল গোল করার আগে জয়ের চেষ্টা করা। তবে নিজে গোল করার পাশাপাশি জিততে পারলে ভালো। আর লা লিগায় রোনালদোকে পাওয়া ছিল দারুণ ব্যাপার। বিশেষ করে সে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড় হওয়ায়। এখন সে আরেকটি দুর্দান্ত ক্লাবে আছে এবং আমরা স্পেন থেকে তার খেলা দেখি।’

দেখতে তো হবেই। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বলে কথা! দুজনের রণক্ষেত্র হয়তো বদলেছে, কিন্তু মনের মধ্যে কেউ কারও এতটুকু পেছনে পড়তে চান না। আর তাই রোনালদোও হয়তো ইতালিতে বসে মেসির খেলা দেখেন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নতুন কী করছেন, কোথায় তাঁকে ছাপিয়ে যাচ্ছেন—এসব আর কি। কিন্তু মাঠের বাইরে এলেই দুজন ‘ভিনগ্রহ’-এর ফুটবলার থেকে রক্ত-মাংসের মানুষ বনে যান। মানবিক গুণাবলির পরিচয় দিয়ে নিজেদের ব্যাপারে বলেন, ‘আমাদের সম্পর্কটা ভালো।’

ভার্জিল ফন ডাইকের পেছনে থেকে রানার্স আপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে মেসিকে। আর রোনালদো হয়েছেন তৃতীয়। তবে মেসি-রোনালদো পাশাপাশি বসে একে-অপরের প্রশংসা করছেন, মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন—গ্রিমালদি ফোরামের এ দৃশ্য অনেক দিন মনে রাখবেন ফুটবলপ্রেমীরা।