'লাখ-লাখ টাকাই সবকিছু নয়'

বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে মাহবুবুর রহমান সুফিলের আরামবাগে ফেরার গুঞ্জন। ছবি: প্রথম আলো
বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে মাহবুবুর রহমান সুফিলের আরামবাগে ফেরার গুঞ্জন। ছবি: প্রথম আলো
>আসন্ন মৌসুমে নিজের পছন্দের ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলার জন্য ক্লাব বদলের ইঙ্গিত দিয়েছেন মাহবুবুর রহমান সুফিল। শোনা যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস ছেড়ে আরামবাগে ফিরে এসেছেন জাতীয় দলের এই ফরোয়ার্ড।

টাকা পেলে ফুটবলাররা সাইড বেঞ্চে বসে থাকতেও রাজি। দেশের ফুটবলের এটা নিয়মিত ঘটনা। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে ক্লাব বদল করেন। কিন্তু খেলার সুযোগ না পেয়ে সাইড বেঞ্চে বসে থেকে পার করে দেন মৌসুম। ভবিষ্যতের কথা না ভেবে এক মৌসুমের টাকাটাই যেন তাদের কাছে সব। জাতীয় দলের দুই গোলরক্ষকের একই ক্লাবে খেলার ঘটনা দেখা গেছে বাংলাদেশে। তবে স্রোতের বিপরীতে হাঁটার মতো ফুটবলারও আছেন। জাতীয় দলের তরুণ ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল স্রোতের উল্টোদিকে যেতে চাইছেন।

মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সুফিলকে ধরে রাখতে চেয়েছিল বসুন্ধরা কিংস। বিশ্বস্ত সূত্রমতে টাকার অঙ্কে প্রায় ৬০ লাখ। কিন্তু নিয়মিত খেলার জন্য ও নিজের মূল পজিশনে (ফরোয়ার্ড) খেলার জন্য সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তরুণ এই ফরোয়ার্ড। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে বসুন্ধরার প্রস্তাবের চেয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা কমে আরামবাগ ক্রীড়াসঙ্গে ফিরে এসেছেন সুফিল। আরামবাগ থেকেই আগের মৌসুমে বসুন্ধরায় যোগ দিয়েছিলেন।

শেষ মৌসুমে বসুন্ধরার জার্সিতে মাঠে খুব একটা অনিয়মিত ছিলেন না। ২৪ ম্যাচের মধ্যে খেলেছেন ১৮টিতেই। এর মধ্যে একাদশে ছিলেন ১৩ ম্যাচে। কিন্তু প্রথাগত ফরোয়ার্ডকে খেলতে হয়েছে রাইটব্যাক পজিশনে। নামের পাশে যোগ হয়নি কোনো গোলও। তাই নতুন মৌসুমে নিজের পছন্দের ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলার জন্যই ক্লাব বদলের পথে হাটতে যাচ্ছেন সুফিল।

ক্লাব বদল নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও তাজিকিস্তানে রওনা হওয়ার আগে ব্যক্তিগত বার্তাটা ঠিকই দিয়েছেন সুফিল। নিজের পজিশনে খেলার আগ্রহ গুরুত্বই বেশি তাঁর কাছে, ‘লাখ লাখ টাকা বেশি পাওয়ার চেয়ে আমার কাছে খেলাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি এমন দলে খেলতে চাই, যেখানে নিয়মিত খেলতে পারব এবং নিজের পছন্দের পজিশনেই। ইতিমধ্যে রাইটব্যাকে খেলে আমার অ্যাটাকিং চরিত্র কমে গিয়েছে। এটা নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। এভাবে চলতে থাকলে জাতীয় দল থেকেও আমার বাদ পড়ার সম্ভাবনা আছে। ফলে ক্লাবের হয়ে নিয়মিত ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলাটা জরুরি।’

আরামবাগে যোগ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে অবশ্য এখনই ভাবতে চান না সুফিল। তাঁর কথায় সবচেয়ে বেশি খুশি হওয়ার কথা জাতীয় দলের কোচ জেমি ডের। ‘রাইটব্যাক’ সুফিলকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি হতাশা ছিল জাতীয় দলের কোচেরই। চেনা ছন্দে ফিরে পেতে চাচ্ছিলেন তাঁর প্রিয় ফরোয়ার্ডকে। জাতীয় দলের একজন কোচ কেনই-বা চাইবেন না!

গতি আর বলের নিয়ন্ত্রণ কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত গোল করতে জুড়ি নেই শ্রীমঙ্গলের এই ছেলের। গত বছর সেপ্টেম্বরে ঘরের মাঠে সাফ ফুটবলে ভুটানের বিপক্ষে নিজের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচেই চোখজুড়ানো গোল করেছিলেন। সতীর্থ মিডফিল্ডার ইমন বাবুর লব বক্সের ডান প্রান্তে পড়তেই গতিতে ভুটানিজ ডিফেন্ডারদের পেছনে ফেলে ভলি, দূরের পোস্ট দিয়ে বল জালে।

এর আগে মার্চে লাওসের বিপক্ষে অভিষেকের ম্যাচেও করেছিলেন গোল। সুফিলের গায়ে জাতীয় দলের জার্সি তুলে দিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ওর্ড। ভিয়েনতিয়েনের সে ম্যাচে ২-১ গোলে হারের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৯২ মিনিটে ত্রাণকর্তা হয়ে হাজির বদলি নামা অভিষিক্ত সুফিল। নতুন জার্সির ঘ্রাণ গায়ে লেগে থাকতে থাকতে গোল করে বাংলাদেশকে ফিরিয়েছিলেন সমতায়।

নিশ্চয় ভুলে যাওয়ার কথা নয়, গত বছর এশিয়ান গেমসের কথা। সেখানেও করেছিলেন এক গোল। থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র হওয়া ম্যাচে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছিলেন তিনিই। সিনিয়র বা অনূর্ধ্ব-২৩ দল ছাড়াও বয়সভিত্তিক অন্য জাতীয় দলেও তাঁর পায়ে গোল দেখা গেছে নিয়মিতই। গত বছর ভুটানে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৮ সাফে ভারতের বিপক্ষে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ৪-৩ গোলে ম্যাচ জয়ের কথাও নিশ্চয়ই ভোলেননি? ওই ম্যাচে সমতাসূচক গোলটি এসেছিল তাঁর হেডেই। তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এএফসি অনূর্ধ্ব-১৯ বাছাই পর্বেও তিন ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন ৩ টি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয়ের ম্যাচে জোড়া গোল এসেছিল সুফিলের পা থেকে। আর মালদ্বীপের বিপক্ষে তাঁর একমাত্র গোলেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।

সেই ফরোয়ার্ডকে রাইটব্যাক হিসেবে খেলতে দেখে কষ্ট হচ্ছিল জেমির। ফলে সুফিলে ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলার আকুলতার কথা শুনে নিশ্চয় খুশি হওয়ার কথা বাংলাদেশের ব্রিটিশ কোচের।