লাভের ভাগ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দিতে চায় না বিসিবি

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে লাভের ভাগাভাগাগিতে আপত্তি বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের। ছবি: প্রথম আলো
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে লাভের ভাগাভাগাগিতে আপত্তি বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসানের। ছবি: প্রথম আলো
>দেশের ক্রিকেটে এখন আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে বিপিএল। বিপিএল থেকে সব ফ্র্যাঞ্চাইজি বাদ দিয়ে দিচ্ছে বিসিবি। কিন্তু হঠাৎ কেন এই সিদ্ধান্ত?

আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট হারের ক্ষত এখনো শুকায়নি। ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। এরই মধ্যে নতুন ‘ইস্যু’ এসে গেছে দেশের ক্রিকেটে। আর সেটি সরবরাহ করেছে স্বয়ং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি, যেটি নিয়ে নিশ্চিত আলোচনা-সমালোচনা হবে বিস্তর।

বিসিবি এবার কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই রাখতে চায় না বিপিএলে। সব দলের মালিক থাকবে তারাই। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক, থাকা-খাওয়া, যাতায়াত খরচ, দলের কোচিং স্টাফ সরবরাহ সবই হবে এবার বিসিবির তত্ত্বাবধানে। বিসিবি কেন এই সিদ্ধান্ত নিল? বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান জানিয়েছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যে দাবি-দাওয়া তুলেছে সেটি কোনোভাবেই এই সংক্ষিপ্ত সময়ে মানা সম্ভব নয়। সেগুলো না কি বিপিএলের মূল নিয়মের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আবার অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি নাকি এক বছরে দুই বিপিএলও চায় না।

তবে এবার বিপিএল নিয়ে হইচই শুরুটা হয়েছে রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে ঢাকা ডায়নামাইটস ছেড়ে যাওয়া সাকিব আল হাসানের চুক্তির পরই। যদি বিসিবি সভাপতি দাবি করছেন, শুধু সাকিবের দলবদলের কারণে এত কিছু হচ্ছে, তা নয়। তবে খানিক পরে তাঁরা কথায় বোঝা গেল, সাকিবের এভাবে দলবদল তাঁরা মানতে পারেননি, ‘খেলোয়াড় ধরে রাখার নিয়ম আছে। আরেক দল থেকে এভাবে খেলোয়াড় নিয়ে নিতে পারেন না। কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে এই নিয়ম নেই। এটা সবাই জানে। বিশেষ করে যারা বাইরে খেলতে যায়। সাকিবেরই তো বেশি জানার কথা। সাকিবকে বলেন না বলতে যে এ বছর হায়দরাবাদে না চেন্নাইয়ে খেলব। (বলা) সম্ভব না। শুধু বাংলাদেশেই তারা এমনটা করতে চায়। এগুলো অনেক হয়েছে। কিন্তু হতে পারে না। এবার আমরা নিয়ম করব আইপিএলের আদলে।’

আইপিএলের আদলে নিয়ম করার কথা বলছেন বিসিবি সভাপতি। কিন্তু আইপিএলে যেভাবে লাভের ভাগ দেওয়া হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো, সেভাবে বিপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করতে ঘোর আপত্তি নাজমুল হাসানের, ‘লাভের ভাগ দেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের ৮০ কোটি টাকা দেওয়া হোক, ৪০ কোটি টাকা দিয়ে দেব। ৮ কোটি টাকা নেওয়া হতো ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছ থেকে। আমরা ১ কোটি দিয়েছি। ৭ কোটি তো ছেড়েই দিয়েছি। আর কী চায় ওরা? আমরা চাই বিপিএলে যারা আসবে দেশের খেলার উন্নয়নে, খেলোয়াড় উন্নয়নে আসবে। ব্যবসা করা জন্য নয়। এখানে মুনাফা হওয়ার সুযোগ নেই।’

বিশ্বের প্রায় সব ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টেই মুনাফার উদ্দেশ্যেই দল গড়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। যদি ‘ব্যবসা’ না করার সুযোগই থাকে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কেন বিনিয়োগ করবে বিপিএলে? সামনে যদি বড় বড় বিনিয়োগকারীরা বিপিএলে টাকা ‘লগ্নি’ করতে না আসে, টুর্নামেন্ট গভীর সংকটে পড়ে গেল না? বিসিবি সভাপতি আত্মবিশ্বাসী, বিপিএলের ভবিষ্যৎ মোটেও অন্ধকার নয়, ‘অন্ধকার কেন হবে? আমরা চালাব। এখানে অন্ধকারের কিছু দেখছি না। (ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর) লোকসানই যদি হয় তাহলে ৮০ লাখ টাকার খেলোয়াড়কে ৪ কোটি টাকা দিয়ে নিত না! লোকসান হলে এত দাম নিয়ে কেউ নিত না। আরও লাভ করতে চায় ওরা।’

বিসিবি সভাপতির দাবি, তাঁর কাছে অন্তত ২০ খেলোয়াড় এসেছেন যাঁরা নিজেদের দল নিজেরাই বাছাই করতে চান। নাজমুল জানালেন, এভাবে দলবদল চলবে না। সব খেলোয়াড়কে নিতে হবে নিলাম থেকে, ‘একজনকে দেখে দেখে বাকিরাও শুরু করছে। সব বন্ধ। সবাই নিলামে আসবে। নিলাম থেকে নেবে। নিলামের পর রিটেনশন থাকবে। রিটেনশন থেকে খেলোয়াড় অদলবদল করতে পারবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।’