হতাশ হওয়ার কিছুই দেখছেন না বিসিবি সভাপতি

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। ফাইল ছবি
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। ফাইল ছবি
>আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হেরেছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনা চলছে চারপাশে। বিসিবি সভাপতি অবশ্য হারের ব্যাখ্যা দিয়ে ক্রিকেটারদের পাশেই দাঁড়ালেন। তিনি হতাশ হওয়ার কিছুই দেখছেন না।

বিপর্যয়? তা বলাই যায়। দেশের বেশির ভাগ ক্রিকেটপ্রেমীই কথাটির সঙ্গে একমত হবেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হার বিপর্যয়ই তো! অনেকের কাছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দেয়ালে পিঠ ঠেকার মতো অবস্থাও। একটি হারে হয়তো সব শেষ হয়ে যায়নি। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হার বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান আজ এ হারের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে খেলোয়াড়দের পাশেই দাঁড়ালেন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট হারে পুরোনো প্রশ্নটা আবারও উঠেছে নতুন করে—জাতীয় দলের পাইপলাইনের শক্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কি না? হার নিয়ে কথা বলার আগে এ প্রশ্নের জবাব দিলেন বিসিবি সভাপতি, ‘প্রথম কথা হলো আমি এর সঙ্গে একেবারেই একমত নই। একেবারেই না। আজকে যে স্কোয়াডটি দেওয়া হলো এখন এখানে যদি আমি দুটি নতুন ছেলের নাম দিই দেখবেন তাদের কেউই ঘুরেফিরে সেরা একাদশে সুযোগ পাবে না। খেলাবে তো অন্য একাদশ, তাহলে লাভটি কি হবে?’

নাজমুল হাসান মেনে নেন, ‘আমরা তো সুযোগই দিতে পারছি না। সুযোগই যদি না দিই তাহলে পাইপলাইনে খেলোয়াড় আছে কিনা এটা বুঝবেন কীভাবে? এটি এক নম্বর ব্যাপার। কেন দিচ্ছে না কিংবা ভুল করছে সেটি আমি বলছি না। এটিরও ব্যাখ্যা আছে, সেটি পরে বলছি।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে কোনোমতে দুই শ পার করতে পেরেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে দুই শ রানও করতে পারেনি তারা। নাজমুল হাসান মনে করেন, ১৭০ কিংবা ২০০ রান করে টেস্ট ম্যাচ জেতা সম্ভব না। তবে বিসিবি সভাপতি মনে করেন, এটি বাংলাদেশ দলের আসল চিত্র নয়, ‘আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের এই অবস্থা না। এটি আমাদের আসল চিত্র না। দলে এখন তামিম নেই, কিন্তু দেখেন, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদের মতো খেলোয়াড় আছে। এই মুশফিক বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। আমার দেখা বাংলাদেশের আজ পর্যন্ত ক্রিকেট দেখি তাহলে আমার হিসেবে সে সেরা ব্যাটসম্যান। তামিম সেরা ওপেনার বাংলাদেশের। সাকিব বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। এই বিশ্বকাপে ও ছিল সেরা খেলোয়াড় বলে আমি মনে করি। রিয়াদ একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। বহু ম্যাচ সে আমাদের জিতিয়েছে। এরা কেউ শেষ হয়ে যায়নি।’

দলের এসব সিনিয়র খেলোয়াড়ের অফ ফর্ম থাকতেই পারে বলে মনে করেন নাজমুল হাসান। তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন কোনো খেলোয়াড় আনার চিন্তা বিসিবি সভাপতির মাথায় নেই, ‘অফ ফর্ম তো থাকতেই পারে। এদের এখন বাদ দিয়ে নতুন খেলোয়াড় আনতে হবে এমন কোনো চিন্তাই আমার মাথায় আসে না। হয়তো অনেকেই ভাবছেন যে তারা শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু না, আমি এখনো মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে তামিম, সাকিব, মুশফিক, রিয়াদ এরা যেকোনো দলের বিরুদ্ধে, যেকোনো বোলারের বিপক্ষেই সেঞ্চুরি করতে পারে। আমার এবার ধারণা ছিল যে মুশফিক এই টেস্টেই সেঞ্চুরি করবে। তবে হয়নি, এমনটা হতেই পারে।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা একটু বেশি সিরিয়াস ছিলেন বলে মনে করেন বিসিবি সভাপতি। তিনি উদাহরণ দেন, ওপর সারির দলগুলো যখন বাংলাদেশের কাছে হেরেছে তখন কিন্তু তারা শেষ হয়ে যায়নি। আফগানদের কাছে টেস্ট হারে এত হতাশ হওয়ার কিছু দেখেন না বিসিবি সভাপতি। খেলোয়াড়দের পারফর্ম করার তাগিদ দিলেন নাজমুল হাসান, ‘এত হতাশ হওয়ার কিছু দেখছি না আমি। পারফর্ম করতে হবে এবং আমি বিশ্বাস করি আমাদের ছেলেদের সেই প্রতিভা আছে। আমাদের আগামীর যে খেলোয়াড় আছে তারা কাউকে ভয় পাবে না। গত টেস্ট ম্যাচটিতে আমার মনে হয়েছে ওরা একটু বেশি সিরিয়াস হয়ে গিয়েছিল। বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েছিল। ওদেরকে বলেছি যে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। প্রত্যেকটি খেলোয়াড় আমাদের ভালো। ওদের হয়তো একজন, দুজন ভালো। তাই ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খেলায় হারজিত আছে। কিন্তু আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি আমাদের দল যে কাউকে হারাতে পারে।’

বাংলাদেশ দল ঘুরে দাঁড়াবে বলেই মনে করেন বিসিবি সভাপতি। পারফরম্যান্সের দিক থেকে দলের কেউ-ই শেষ হয়ে যায়নি মনে করেন তিনি। সৌম্য সরকার ও লিটন দাসকে টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটার মনে করলেও সুযোগ না থাকায় তাঁদের দলে নেওয়ার কথাও বললেন নাজমুল হাসান, ‘এই টেস্টে সাকিব, রিয়াদ, মুশফিক- এরা যদি রান না করে তাহলে করবেটা কে। অবশ্যই সৌম্য-লিটনের কথা আমি যা মনে করি, ওরা টেস্ট ক্রিকেটার না। ওদের আমরা নিয়েছিলাম টি-টোয়েন্টির জন্যই। তারা অনেক ভালো টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যান। যেহেতু তামিম নাই, যেহেতু ইমরুল তাঁর বাচ্চার অসুস্থতার জন্য ছুটিতে গেছে। আমাদের হাতে অপশন ছিল না। এটা বুঝতে হবে। এ রকম হলে কিছুই হবে না। এখানে হয় নাই। আপনারা মনে করছেন ওরা শেষ। কিন্তু আমি মনে করি, ওরা ঘুরে দাঁড়াবে। এখন পর্যন্ত কেউ শেষ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’

ক্রিকেটে জেতার কথা বলে কিছু আছে, এমন কিছুতে বিশ্বাস নেই বিসিবি সভাপতির। তাঁর মতে, জেতারই কথা ছিল এমন কোনো খেলা নেই। অ্যাশেজের উদাহরণ দিয়ে তাঁর প্রশ্ন, তৃতীয় টেস্ট কেউ চিন্তা করেছে যে ইংল্যান্ড জিতবে? ইংল্যান্ড অসাধারণ খেলেছে। তার মানে অস্ট্রেলিয়া কি খারাপ হয়ে গেছে? জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের পাশে দাঁড়ানোর কথাই বললেন বিসিবি সভাপতি, ‘ আপনারা আমাদের ছেলেদের এত ছোট করে দেখবেন না, ওদেরকে সাহস দেন। আমরা কাউকেই ভয় পাই না। আমাদের সামনে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। আমরা সেটা জিতব। ওদের বলেছি, হারো বা জিতো- সাহস নিয়ে খেলবা। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে বিশ্বকাপের ম্যাচটি হারার পরে ওদের মনের বলটা মনে হয় একটু দুর্বল হয়ে গেছে। ওদের শরীরী ভাষা রক্ষণাত্মক।’