৭৬ বছরেও দেশসেরা রানী হামিদ

দাবা বোর্ডে মগ্ন রানী হামিদ। ছবি: দাবা ফেডারেশন
দাবা বোর্ডে মগ্ন রানী হামিদ। ছবি: দাবা ফেডারেশন

শিরোপা ধরে রাখতে শেষ রাউন্ডে দরকার ছিল জয়। সেই জয় তুলে নিয়ে ৩৯তম জাতীয় মহিলা দাবায় অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশ আনসারের আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার রানী হামিদ। ৯ ম্যাচে তাঁর পয়েন্ট সাড়ে ৮। ৭৬ বছর বয়সে জাতীয় দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে রানী হামিদ এতটাই উৎফুল্ল, যেন এই প্রথম চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পেয়েছেন! কিন্তু জাতীয় নারী দাবায় এটি তাঁর ২০তম শিরোপা।

কাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পুরোনো ভবনে শেষ রাউন্ডে রানী হামিদ জিতেছেন মানিকগঞ্জের মহিলা ফিদে মাস্টার নাজরানা খান ইভার বিপক্ষে। তাঁর খেলা দেখে গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব বলছিলেন, ‘তিনি আক্রমণাত্মক খেলতে ভালোবাসেন। আর খেলার প্রতি এতটাই আত্মনিবেদন যে এখনো তিনি দারুণ খেলে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেন।’ রানী হামিদ নিজেও জানালেন এখনো দেশসেরা হওয়ার রহস্য, ‘এখন তো ৭৬ চলছে। আগেই বলেছি, আমি খেলার আনন্দে খেলছি। হয়তো আমি ভালো খেলেছি বা অন্যরা খারাপ খেলেছে, তাই চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তবে এবার একটু একটু শেকি ছিলাম। সবাই তো চায় চ্যাম্পিয়ন হতে। আমিও চেয়েছি।’

চার দশক ধরে দাবার নিয়মিত মুখ রানী হামিদ। বাংলাদেশের দাবা বলতেই তাঁর মুখ ভেসে ওঠে। নিজেও ভাবেননি এত দিন খেলা চালিয়ে যাবেন। কিন্তু তাই বলে সাফল্য–ক্ষুধা কমছে না তাঁর বরং গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান ভবিষ্যৎ সাফল্য দিয়ে, ‘১৯৭৭ সালে ঢাকায় মেয়েদের দাবা শুরু হয়। সেটা বেসরকারিভাবে। আমি তখন পুরোপুরি গৃহিণী। অথচ খেলায় চলে এলাম। এরপর ১৯৭৯ সালে প্রথম নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শুরু থেকে খেলে প্রথম ছয়বার টানা চ্যাম্পিয়ন হই। জাতীয় মিটে ২০টা শিরোপা বোধ হয় বিশ্ব রেকর্ড। আমি আসলে নিশ্চিত না। ৭৬ বছর বয়সে একজন চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলেছে। তাকে সরিয়ে ৭৭ বছর বয়সে আমি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তুলতে চাই। তাই আগামী বছরটাও খেলার ইচ্ছা রাখি।’

৮ পয়েন্ট নিয়ে জনতা ব্যাংক অফিসার ওয়েলফেয়ার সোসাইটির আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার শারমীন সুলতানা শিরিন রানারআপ হয়েছেন। ৭ পয়েন্ট নিয়ে টাইব্রেকিং পদ্ধতিতে এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেস একাডেমির আহমেদ ওয়ালিজা তৃতীয় ও মানিকগঞ্জের নজারানা খান ইভা চতুর্থ। সাড়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেজ একাডেমির মহিলা ফিদে মাস্টার নোশিন আঞ্জুম পঞ্চম। ৬ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ থেকে দশম মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার সামিহা শারমীন সিম্মী, তাসনিয়া তারান্নুম অর্পা, বগুড়ার উম্মে তাসলিমা প্রতিভা তালুকদার, এলিগেন্ট ইন্টারন্যাশনাল চেজ একাডেমির ওয়াদিফা আহমেদ ও ইশরাত জাহান দিবা।

কাল শেষ রাউন্ডে মহিলা মাস্টার শিরিন জারিনকে, ওয়ালিজা মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার জান্নাতকে, মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার নেশিন আলোকে, মহিলা ক্যান্ডিডেট মাস্টার সিম্মী ইশরাত জাহান লিজা, প্রতিভা জান্নাতুল ফেরদৌসীকে, অর্পা ঝর্না বেগমকে, দিবা কিশোয়ার সাজরীন ইভানাকে হারান। ৯ রাউন্ড সুইস লিগ পদ্ধতির এই জাতীয় মিটে ৫৮ জন খেলোয়াড় ছিলেন এবার।