জীবন এখন বাংলাদেশেরও

অবশেষে জাতীয় দলের হয়ে নিজের গোল করার ক্ষমতা দেখালেন নাবীব নেওয়াজ জীবন। ছবি: প্রথম আলো
অবশেষে জাতীয় দলের হয়ে নিজের গোল করার ক্ষমতা দেখালেন নাবীব নেওয়াজ জীবন। ছবি: প্রথম আলো
>গতকাল ভুটানের বিপক্ষে আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে ৪-১ গোলের বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। জোড়া গোল করেছেন নাবীব নেওয়াজ জীবন।

গোলটা কি জীবন করল!

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সে এক অভিজ্ঞ গণমাধ্যমকর্মীর কণ্ঠে উচ্ছ্বাস ও চোখে মুখে অবিশ্বাস। নাবীব নেওয়াজ জীবন সাইড ভলিতে যে দুর্দান্ত গোলটি করলেন, সেটির সঙ্গে অতীতের বিচার করেই তিনি অবাক। ইদানীং বাংলাদেশের কোনো স্ট্রাইকারের পা থেকে এমন গোল আসলে চোখ একটু কচলাতেই হয়। তার ওপর গোলদাতার নাম যেখানে জীবন!

জীবনকে নিয়ে অনেক সমালোচনা। তিনি গোল করতে পারেন না। ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে এমন ধারণা তৈরিতে খোদ জীবনের দায়ও কম নয়। জাতীয় দলের জার্সি পরে অনেকবারই গোল মিসের বিলাসিতা দেখিয়েছেন। বেশি দূর যাওয়ার প্রয়োজন নেই। গত ১০ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের যৌথ বাছাইয়ের ম্যাচটির দিকেই তাকান। তাজিকিস্তানের দুশানবেতে আফগানদের বিপক্ষে ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা ম্যাচের শেষ সময়ে গোল করার সহজতম সুযোগটিও নষ্ট করেছিলেন। ইয়াসিন খানের ব্যাকহিল গোলমুখ থেকে প্রথম স্পর্শেই বলটা জালে জড়িয়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তা না করে সময়ক্ষেপণ করে সেটি নষ্ট করেন। এর আগে জুনে বিশ্বকাপের প্রাক-বাছাইয়ের দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে লাওসের বিপক্ষে তিনটি গোল করার সহজ সুযোগ হেলায় হারান তিনি।

আফগানিস্তান ম্যাচের ১৯ দিনের মধ্যেই সেই জীবনই সৌরভ ছড়ালেন। তাও একটি নয় দুই- দুইটি। এ জন্য কোচ জেমি ডে বড় একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন। সাধারণত জীবন জাতীয় দলের জার্সিতে খেলে থাকেন ‘নাম্বার নাইন’ পজিশনে। কিন্তু গতকাল ৪-২-৩-১ ফরমেশনে নাম্বার নাইন থেকে সরিয়ে এনে একটু পেছনে দ্বিতীয় স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানো হয় তাঁকে। এতেই বাজিমাত। জাতীয় দলের জার্সিতে প্রথমবারের মতো মূল স্ট্রাইকারের পেছন থেকে খেলেই জীবন হয়ে উঠলেন বাংলাদেশের তুরুপের তাস। ঘরোয়া ফুটবলে আবাহনী লিমিটেডের হয়ে এই পজিশনে খেলেই শেষ মৌসুমে করেছিলেন ১৭ গোল।

জাতীয় দলের ‌‌‘মিস মাস্টার’ হিসেবে খ্যাত স্ট্রাইকার জীবন যেন গতকাল গোলের হতাশা দূর করার পণ নিয়েই নেমেছিলেন। গোলের খাতা খুললেন ১২ মিনিটে হেড করে। জামাল ভূঁইয়ার ক্রসে গোলমুখ থেকে মাথা ছুঁইয়ে জালে পাঠালেন। ৩৯ মিনিটে তাঁর করা দ্বিতীয় গোলটি অনেক দিন চোখে লেগে থাকার কথা। ডান প্রান্ত থেকে ইব্রাহিমের ক্রসে দুর্দান্ত সাইড ভলিতে করা সেই গোলটি মুগ্ধ করেছে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের।

এর আগে জাতীয় দলের হয়ে শেষ গোলটি জীবন করেছিলেন ২০১৬ সালের মার্চে আরব আমিরাতের বিপক্ষে। স্বাগতিক আরব আমিরাতের বিপক্ষে সে ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল ৬-১ গোলে। গতকালকের আগে ২১ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ওটাই ছিল জীবনের শেষ গোল। এর আগে ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একটি গোল আছে । তবে সেটি ফিফার দ্বিতীয় পর্যায়ের স্বীকৃত ম্যাচ ছিল।

জীবনের পায়ে প্রায় তিন বছর পরে দেখা গেল আন্তর্জাতিক গোল। স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচ শেষে খুব উচ্ছ্বসিত , ‘আমি এই দিনটার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম। জাতীয় দলে অনেক গোল মিস করেছি। এ জন্য আমাকে নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়। আমার বিশ্বাস ছিল একবার গোল পেয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না। সেই গোলটা পেয়ে গেলাম। এখন থেকে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামতে পারব।’

জাতীয় দল বাদ দিলে এই বছরটা ছিল জীবনেরই। শেষ মৌসুমে বেশ কয়েকটি ম্যাচে আবাহনীর প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছেন জীবন। এএফসি কাপের ২ গোল ছাড়াও চলতি প্রিমিয়ার লিগে তাঁর পায়ে গোলের ফোয়ারা ছুটেছে। কখনো কখনো তাঁর গোলের সুরভি গ্যালারিতে পর্যন্ত পৌঁছে যায়। লিগে ২৪ ম্যাচ খেলে ১৭ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় ছিলেন তৃতীয় স্থানে। এর মধ্যে আছে একটি হ্যাটট্রিকও। কিন্তু অভিজ্ঞ এই স্ট্রাইকার জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামলেই কেন যেন গোলের রাস্তা হারিয়ে ফেলতেন।

তাই প্রশ্নই উঠে গিয়েছিল আবাহনীর জীবন কেন বাংলাদেশের হন না! গতকালের পর থেকে সে প্রশ্নে আপাতত যতি টানলেন ২৯ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। গতকাল রাতের পর থেকে এখন বলা যায় , জীবন এখন বাংলাদেশেরও। শুধু দেখার অপেক্ষা আগামী মাসে বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে কাতার ও ভারতের বিপক্ষে কতটুকু জ্বলে উঠতে পারেন তিনি।