ইমরানকে 'ইট' মারতে গিয়ে 'পাটকেল' খেলেন শেবাগ

আমেরিকানদের ইংরেজি উচ্চারণ বুঝতে পারেননি শেবাগ! ছবি : এএফপি
আমেরিকানদের ইংরেজি উচ্চারণ বুঝতে পারেননি শেবাগ! ছবি : এএফপি

ইংরেজি বৈশ্বিক ভাষা। সব দেশের মানুষই নিজেদের কাজে এ আন্তর্জাতিক ভাষা ব্যবহার করে। তবে রাষ্ট্র ভেদে ভাষাটির উচ্চারণশৈলী ভিন্ন। উপমহাদেশের মানুষ যেভাবে ইংরেজি বলে, যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সেভাবে বলে না। আবার যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপিয়ানদের ইংরেজি বাচনভঙ্গি অন্য রকম। আফ্রিকার মানুষদেরও রয়েছে নিজস্ব উচ্চারণ। একই কথা খাটে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও। তাই ভাষা এক হলেও এক দেশের মানুষের আরেক দেশের ইংরেজি উচ্চারণ বুঝতে সমস্যা হয়। এই একই সমস্যায় পড়েছেন সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ!

ঘটনাটা খুলে বলা যাক। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। ভাষণটি যেমন আলোচিত তেমনি সমালোচিতও। সমালোচনাকারীদের মধ্যে সিংহভাগই ভারতীয়, পাকিস্তানের সঙ্গে যাদের বৈরিতা চিরকালীন। এর মধ্যে আছেন ভারতীয় ক্রীড়া তারকারাও। ভারতের সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী যেমন রয়েছেন, তেমনি বীরেন্দর শেবাগও চুপ করে থাকেননি।

এদিকে, জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ইমরান। এমএসএনবিসি টিভি চ্যানেলের টক শো ‘মর্নিং জো’-তে গিয়েছিলেন তিনি। অনুষ্ঠানে হাসতে হাসতে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানকে বিশ্বকাপ জেতানো সাবেক এ অধিনায়ক। বক্তব্যের একপর্যায়ে ইমরান বলেন, ‘এই অর্থহীন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে টাকা ঢালছে, চীন তখন প্রথম বিশ্বের অবকাঠামো গড়ে তুলছে। চীনে গিয়ে দেখুন ওদের অবকাঠামো। আমি তো নিউইয়র্কে এসে দেখছি গাড়িগুলো ধাক্কা খাচ্ছে।’

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে ভারতীয়দের চক্ষুশূল হয়েছেন ইমরান। ছবি : এএফপি
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে ভারতীয়দের চক্ষুশূল হয়েছেন ইমরান। ছবি : এএফপি

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জো স্কারবরো অবশ্য ইমরানকে ছেড়ে কথা বলেননি। তিনিও ঠাট্টাচ্ছলে জবাব দেন, ‘আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে না আপনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। মনে হচ্ছে ব্রংক্সের (নিউইয়র্কের এক শহর) কোনো ভোটার যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো নিয়ে অভিযোগ করছেন।’

এখানেই গোল বেঁধেছে। স্কারবরো যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ফলে তাঁর উচ্চারণে আমেরিকান টান থাকবেই। তিনি ‘ভোটার’ শব্দটা এমন করে উচ্চারণ করেছেন, হুট করে মন দিয়ে না শুনলে মনে হবে তিনি ভোটার নয়, ‘ওয়েল্ডার’ বলেছেন, যার অর্থ লোহার ঢালাইকর! ‘ভোটার’ শব্দের সঙ্গে যার অর্থের পার্থক্য আকাশ-পাতাল!

>

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার পর থেকে ভারতীয়দের চক্ষুশূল হয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। সাবেক ভারতীয় ওপেনার বীরেন্দর শেবাগও তার ব্যতিক্রম নন। তবে ইমরানের সমালোচনা করতে গিয়ে সেদিন একটি ভিডিও টুইট করে নিজেই ভজকট পাকিয়ে ফেলেছেন ভারতের সাবেক এ ওপেনার

শেবাগের সেই টুইট। ছবি : শেবাগের টুইটার অ্যাকাউন্ট
শেবাগের সেই টুইট। ছবি : শেবাগের টুইটার অ্যাকাউন্ট

ভারতের সাবেক ওপেনার শেবাগ ইমরানের টক শো-র ভিডিও টুইটারে শেয়ার করে মন্তব্য করেন, ‘সঞ্চালক বললেন, আপনার কথা ব্রংক্সের ঢালাইকরের মতো। কিছুদিন আগে জাতিসংঘে জঘন্য বক্তৃতার পর এই লোকটা সম্ভবতা নিজেকে ছোট করার নতুন নতুন পথ বের করছে।’

ব্যস, আর পায় কে! শুরু হয় শেবাগের মুণ্ডুপাত। আল জাজিরা ইংলিশের ডিজিটাল সম্পাদক ফারাস গণি সেই টুইটের জবাবে লেখেন, ‘ওয়েল্ডার? শেবাগ, ভিডিওটা আবার শোনো। বারবার শোনো।’ কলাম লেখক মেহের তাহার বলেন, ‘ভোটারকে ওয়েল্ডার বানাচ্ছে ভারতীয়রা, ২০১৯ সালের সবচেয়ে হাসির খবর এটা। প্রথমত, ভোটারের মতো সহজ একটা শব্দের উচ্চারণ বুঝতে পারল না, দ্বিতীয়ত, ওয়েল্ডার শব্দটাকে একটা গালি হিসেবে ব্যবহার করল। জঘন্য।’

পরে খোদ সেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জো স্কারবরো টুইট করে বিষয়টা পরিষ্কার করেন, ‘তোমরা কি নিয়ে কথা বলছ? আমি “ভোটার” বলেছি। “ওয়েল্ডার” নয়। স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে আমি ব্রংক্সের ভোটার বলেছি। ব্রংক্সের “ওয়েল্ডার” বলার চিন্তাও করব না কখনো!’

স্কারবরোর টুইটের পর পাকিস্তানিরা যেন শেবাগকে নিয়ে ঠাট্টা করার নতুন উপলক্ষ পেয়ে যায়। একজন টুইটার ব্যবহারকারী বলেন, ‘অধিকাংশ ভারতীয়র যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলার ধরন বুঝতে সমস্যা হয়। মজার ব্যাপার, ভারতীয়রা একজন অক্সফোর্ড থেকে গ্র্যাজুয়েট করা প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করছে যেখানে তাদের নিজেদের প্রধানমন্ত্রীই এককালে চা বিক্রেতা ছিল।’ আরেক জন লিখেছেন, ‘শব্দটি ভোটার, ওয়েল্ডার নয়। হয় তুমি কানে শোনো না অথবা ওরা যেভাবে ইংলিশ উচ্চারণ করে সেটা বোঝো না। যা বোঝো না সেটা শোনার দরকার নেই, টুইটও করার দরকার নেই। খামোখা নিজেকে লজ্জায় ফেলা।’ আরেকজন বলেন, ‘আত্মসম্মান থাকলে ক্ষমা চাও এখন, আমার মনে হয় যা তোমার একদমই নেই।’

এত শত সমালোচনার পরও শেবাগ সে টুইটটি মুছে দেননি।