দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনী

অন্তিম মুহূর্তে হার বাঁচানো গোল, আবেগে মাঠেই শুয়ে পড়লে দিদিয়ের। ছবি: সৌরভ দাশ
অন্তিম মুহূর্তে হার বাঁচানো গোল, আবেগে মাঠেই শুয়ে পড়লে দিদিয়ের। ছবি: সৌরভ দাশ

৯০ মিনিটের খেলা চলছে। শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের প্রথম সেমিফাইনালে তখন ২-১ গোলে পিছিয়ে চট্টগ্রাম আবাহনী। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে উঠেছে আবাহনী। পুরো ম্যাচেই এ প্রান্ত দিয়ে একের পর এক আক্রমণ করে গেছে দলটি, প্রতিবারই তা ব্যর্থ হয়েছে। এবারও কি তাই হবে? নিজেদের আয়োজিত টুর্নামেন্ট থেকে এভাবে বাদ পড়ে যাবে তারা! সে চিন্তাটা কিছুক্ষণের জন্য দূর হলো। উইং থেকে বল এল ডি-বক্সের ভেতর। একদম ফাঁকায় থাকা দিদিয়েরের জোরালো শট গোলরক্ষকের গ্লাভসে লাগলেও জালে যাওয়া আটকানো যায়নি। ২-২! শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের জয়ে শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপের ফাইনালে উঠে গেছে চট্টগ্রাম আবাহনী।

দ্বিতীয়ার্ধের অন্তিম মুহূর্তের গোলে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন দিদিয়ের। দ্বিতীয়ার্ধের একদম শুরুতেও এ কাজটা করতে হয়েছিল তাঁকে। সেবার অবশ্য ডি-বক্সের মাঝে নয়, ডান প্রান্তে ছিলেন। ৪৬ মিনিটে ঠান্ডা মাথায় দিদিয়ের নেওয়া শট গড়াতে গড়াতে জালে যাওয়ার পরই সমতায় ফিরেছিল চট্টগ্রাম আবাহনী।

ম্যাচ না দেখলে মনে হতেই পারে, মারুফুল হকের দল বারবার বেঁচে ফিরেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো খেলার ধরন, বল পজেশন ও আক্রমণে এগিয়ে ছিল চট্টগ্রাম আবাহনীই। কিন্তু দারুণ সব সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি দলটি। দায় অনেকটাই পড়বে মন্টেনেগ্রোর স্ট্রাইকার লুকা রতকোভিচের ওপর। বারবার ভালো জায়গায় বল পেয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে না পারার ব্যর্থতা গোল পেতে দেয়নি তাঁকে। এরই ফাঁকে ২৯ মিনিটে এগিয়ে গেছে গোকুলাম কেরেলা এফসি। ডান প্রান্তে বক্সের বাইরে বল পেয়ে দারুণ নিয়ন্ত্রণে বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন কিসেক্কা। তাঁকে আটকাতে অযথা ডাইভিং ট্যাকল করেছিলেন আবাহনীর ডিফেন্ডার। তাতে লাভ হয়নি। উল্টো গোলরক্ষককে একা পেয়ে জোরালো শটে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন কিসেক্কা (১-০)। প্রথমার্ধ এ স্কোরলাইনেই শেষ হয়েছে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচে ফেরা চট্টগ্রাম আবাহনী এরপরও মুহুর্মুহু আক্রমণ করেছে। বারবার প্রান্ত বদল করে ও উইং দিয়ে ঢুকে আতঙ্ক ছড়াচ্ছিল তারা। বিশেষ করে উইং দিয়ে দ্রুত গতি বল নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্যগুলোতে ইউরোপিয়ান ফুটবলের স্বাদ মিলছিল। শুধু দৃষ্টিকটু ফিনিশিং ঝামেলা বাধাচ্ছিল। ৭৯ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে উল্টো গোল করে বসে গোকুলাম। বেশ কঠিন অ্যাঙ্গেল থেকে জোরালো শটে গোলরক্ষকের গ্লাভসকে ফাঁকি দিয়েছেন জোসেফ (২-১)। পরের দশ মিনিট গোকুলামকে একদম নাড়িয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম। তারই ফল মিলল একদম অন্তিম মুহূর্তে। দিদিয়েরের সুবাদে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়েও চট্টগ্রাম আবাহনী দাপট দেখিয়েছে। দুই উইং দিয়ে বারবার বক্সে ঢুকে পড়েছে তারা। ১০৪ মিনিটে এসে ফল মিলেছে। আবারও বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণ। বল এসে পড়ল চিনেদু ম্যাথুর কাছে। তাঁর প্রথম শট গোল লাইন থেকে ফেরালেন কেরালার ডিফেন্ডার। চিনেদু হাল ছাড়েননি, আবারও হেড। এবার দুই ডিফেন্ডারের মিলিত প্রচেষ্টাও বলটাকে গোললাইন অতিক্রম করা থেকে বিরত করতে পারল না। প্রথমবারের মতো এগিয়ে গেল চট্টগ্রাম আবাহনী (৩-২)।

এরপর অবশ্য গোকুলামের আক্রমণের পালা। তবে কোনো আক্রমণেই দাগ কাটতে পারছিল না তারা। ১১৫ মিনিটে অবশ্য সুবর্ণ এক সুযোগ পেয়েছিল তারা। বেশ ফাঁকায় বল পেয়েও গড়ানো শট নেওয়ায় সেটা চট্টগ্রাম আবাহনীর ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফিরে এসেছে বল। দুই মিনিট পর লাল কার্ড দেখে একজন মাঠ ছাড়ায় দশজনে পরিণত হয় গোকুলাম। ম্যাচ পেনাল্টি শুট আউটে নেওয়ার সম্ভাবনাও সেখানেই শেষ হয়।