অধিনায়কত্ব নিয়ে 'ফিলিংস' নেই 'দায়িত্ববোধ' আছে মুমিনুলের

সাকিবের মতো খেলোয়াড়কে ছাড়া বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব কতটা উপভোগ করতে পারবেন মুমিনুল। ছবি: প্রথম আলো, ফাইল ছবি
সাকিবের মতো খেলোয়াড়কে ছাড়া বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব কতটা উপভোগ করতে পারবেন মুমিনুল। ছবি: প্রথম আলো, ফাইল ছবি
অস্থির এক সময়ে অধিনায়কত্ব এসে গেছে মুমিনুল হকের হাতে। তাও কঠিন ভারত সফরে। অধিনায়কত্ব তাঁর কাছে অবশ্যই দায়িত্ববোধ। সাকিব আল হাসানকে দারুণ মিস করবেন তিনি। তবে ভারত সফরে ভালো করার ব্যাপারেই আশাবাদ তাঁর।


নির্বাচকেরা দল দিলেন, সেটি নিয়ে কোনো হইচই নেই, এমন দৃশ্য খুবই কম দেখা যায় বাংলাদেশ ক্রিকেটে। গত পরশু দুই নির্বাচক যখন ভারত সফরের টেস্ট দল দিলেন তখন সবার মনোযোগ সাকিব আল হাসানের দিকে। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বিরাট এক আলোড়নের ঘটনা যাঁকে নিয়ে, সেটি ছাপিয়ে ভারত সফরের টেস্ট দল নিয়ে ভাবার সুযোগ কোথায়! এই অস্থির সময়ে মুমিনুল হকের কাঁধে এসেছে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব।

দলে মুশফিকুর রহিম ছিলেন, ছিলেন মাহমুদউল্লাহর মতো সিনিয়র খেলোয়াড়। তবুও মুমিনুলকে কেন অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেওয়া, এ ব্যাখ্যায় বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান আকরাম খান বলেছেন, ‘টেস্টে তার সুনাম খুব ভালো। ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর সবশেষ বিসিবির দুটি দলের হয়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কা সফরে সে অধিনায়ক হিসেবে ভালো করেছে।’

নিজেকে ‘টেস্ট বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে পরিচিত করে ফেলা মুমিনুল যখন দলের নেতৃত্ব পেলেন, যখন সামনে বড় দুটি উপলক্ষ। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলবে, প্রথমবারের মতো খেলবে গোলাপি বলে দিবারাত্রির ম্যাচ। ভারতের মাঠে ভারতের বিপক্ষে ভালো খেলার চ্যালেঞ্জ তো আছেই। তাঁকে একই সঙ্গে খেলোয়াড় ও অধিনায়ক সাকিবের শূন্যতা পূরণের চ্যালেঞ্জও নিতে হবে।

৩৬ টেস্ট খেলা মুমিনুল অবশ্য কল্পনাও করতে পারেননি, এত বড় দায়িত্ব এসে পড়বে তাঁর ছোট্ট কাঁধে। সাকিবই একবার তাঁকে নিয়ে রসিকতা করে বলেছিলেন, ‘মুমিনুলের চেয়ে ওর ব্যাটটা বড়!’ কথাটা প্রতীকী। উচ্চতায় যাই হোন, তাঁর দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ের ছায়াটা কিন্তু যথেষ্টই দীর্ঘ। ব্যাটিংয়ের মতো অধিনায়কত্বেও কতটা দ্যুতি ছড়াতে পারবেন, আসন্ন ভারত সফরের চ্যালেঞ্জ কীভাবে নিচ্ছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অস্থির সময়কে পেছনে ফেলার উপায় কী—সবাই থাকল নতুন টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকের এই সাক্ষাৎকারে

অধিনায়কত্বের রোমাঞ্চ
‘আমার এসব নিয়ে ফিলিংস নাই। কোনো রোমাঞ্চ নেই। এটা অনেক বড় দায়িত্ব। তবে সেভাবে রোমাঞ্চ কাজ করে না। যখন প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছিলাম তখনো এই অনুভূতি ছিল, তেমন কোনো রোমাঞ্চ কাজ করেনি।’

এই দায়িত্ব পালনে কতটা প্রস্তুত
‘বিশাল দায়িত্ব। তৈরিই আছি। সবাই এমন সুযোগ পায় না। আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। চেষ্টা করব সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে।’

যে অভিজ্ঞতা কাজে দেবে
‘গত কয়েক মাসে বিসিবির যে কটি দলের (''এ'' দল, বিসিবি একাদশ) অধিনায়কত্ব করেছি, সেগুলোর সঙ্গে এটি কিছুতেই মেলানো যাবে না। অনেক পার্থক্য। এটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, যাদের বিপক্ষে খেলা তারা অনেক শক্তিশালী। আকাশ-পাতাল পার্থক্য। এখানে যখন অধিনায়কত্ব করব, অনেক কিছু ঘটবে যা হবে আমার জন্য নতুন। এ সব আমাকে মানিয়ে নিতে হবে। নতুন অনেক কিছু শিখতে পারব, যা হয়তো জীবনে কখনো দেখিনি। দায়িত্ব সব সময়ই চাপের। চেষ্টা করব এই চাপটা না নিতে, ভালোভাবে সামলাতে।’

অনেক বড় উপলক্ষ
‘আগে যেভাবে খেলেছি, এখনো সেভাবেই চেষ্টা করব। এটা যে অনেক বড় উপলক্ষ (টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট), ওভাবে চিন্তা করিনি। এভাবে চিন্তা না করাই ভালো। এটা চাপ হয়ে যায়। স্বাভাবিক খেলাটাই খেলার চেষ্টা করব। আর যেহেতু আমার কাঁধে দায়িত্ব, সেটা ঠিকঠাক পালনের চেষ্টা করব। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ আছে, দিবারাত্রির টেস্ট আছে এই সফরে। দুটিই আমরা প্রথমবারের মতো খেলতে যাচ্ছি। সবার হয়তো মনোযোগ একটু বেশিই থাকবে। এ দিক থেকে চিন্তা করলে ভালো লাগার কথা।’

অধিনায়কত্ব পেয়ে কতটা অবাক
‘কখনোই বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বের কথা। এই দায়িত্ব আমার কাছে আসবে চিন্তাই করিনি। চলে এসেছে, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’

সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার তাড়না
‘আমাকে সব সময়ই সতীর্থদের চেয়ে এগিয়ে থেকে খেলতে হবে, এভাবে মনে হয় না কোনো অধিনায়ক চিন্তা করে। অধিনায়কত্ব করলে দায়িত্ব বাড়ে। আগের চেয়ে মাথাটা বেশি ব্যবহার করতে হয়। একজন খেলোয়াড় হিসেবে আগে যেভাবে খেলেছি এখনো তাই খেলব।’

গোলাপি বলের চ্যালেঞ্জ
‘এই টেস্ট (ইডেনে দিবারাত্রির টেস্ট) ছাড়াও পুরো ভারত সফরই আমাদের কাছে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। যতই বলুন, এখানে মানসিকভাবে তৈরি থাকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মাটিতে খেলা সব সময়ই চ্যালেঞ্জিং। গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট আমরা কখনো খেলেনি। ওরাও খেলেনি। ব্যাপারটা হচ্ছে মানসিকভাবে আপনি এটি কীভাবে চিন্তা করছেন। এটাকে সুযোগ হিসেবে দেখলে সবচেয়ে ভালো হয়। কখনো আমরা খেলিনি, অনুশীলন করিনি, এভাবে দেখলে কঠিন। বরং যদি এভাবে দেখি, কখনো খেলিনি, আবার কবে খেলব, এটা তাই বড় সুযোগ তাও আবার ভারতের মতো দলের বিপক্ষে, তাহলে ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। আর এখানে ভালো করতে পারলে বিরাট আলোড়নও হবে।’


সাকিবের শূন্যতা পূরণের চ্যালেঞ্জ
‘খেলোয়াড়-অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের শূন্যতা পূরণ করতে হবে, এত কিছু চিন্তা করে খেলা আসলে কঠিন। সাকিব ভাই তো সাকিব ভাই! তাঁর জায়গা পূরণ করতে কোনো খেলোয়াড় এখনো আসেনি বাংলাদেশে। অদূর ভবিষ্যতে আসবে কিনা সন্দেহ! এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে হ্যাঁ, এটা সুযোগও। সাকিব ভাইয়ের জায়গায় যারা আসবে তাদের জন্য বড় সুযোগ। আর অধিনায়কত্বের কথা বললে শুরুতে যে বললাম, এটা আমার জন্যও বড় সুযোগ। এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে খুবই ভালো।’

ভালো কিছুর আশা
‘বাংলাদেশ ক্রিকেট এখন যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে ভালো কিছু করতে পারলে সেটি হবে অনেক বড় অর্জন। আশা করি ভালো কিছুই হবে। খারাপ আর কী হবে!’


সাকিবের ফেরা
‘সবাই বলছে সে দুর্দান্তভাবে ফিরে আসবে। দুর্দান্ত কী? সাকিব ভাই যেনতেন খেলোয়াড় নাকি? তিনি যখনই সুযোগ পাবেন এমনি ভালো খেলবেন। দুর্দান্তভাবে ফিরবে, এ কথাটা শুনতেই কেমন লাগে। যেনতেন খেলোয়াড় হলে বলা যেত দুর্দান্তভাবে ফিরবে। সাকিব ভাই এমনি দুর্দান্ত খেলোয়াড়। তাঁর দুর্দান্তভাবে ফেরার কী আছে!’