এবার পেরেছেন মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ

এবার তাঁরা পেরেছেন। ছবি: এএফপি
এবার তাঁরা পেরেছেন। ছবি: এএফপি

ক্ষত মোচন হয় কি? ওটা ছিল বিশ্বকাপের ম্যাচ। কিন্তু এ সিরিজও কম গুরুত্বপূর্ণ না। দলের দুই প্রাণভোমরা নেই। গুরুদায়িত্ব বর্তেছিল বাকি দুজনের কাঁধে। মঞ্চ আলাদা আর চাপ তুলনামূলক কম হলেও চ্যালেঞ্জটা ছিল প্রায় একই। সেই ভারত! সেই শেষ ওভার! শুধু ফলটা আলাদা। মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ, এবার পারলেন!

বিশ্বকাপ বলেই তিন বছর আগে বেঙ্গালুরুর চিত্রপটে আলাদা তাৎপর্য। আজকের জয়টাও কম গুরুত্বপূর্ণ না। টি-টোয়েন্টিতে যে ভারতকে কখনো হারাতে পারেনি বাংলাদেশ, তাদেরই মাটি থেকে মায়াঞ্জন-মাখানো জয়, তাও সাকিব-তামিম ছাড়াই! এমন দুর্দান্ত বাস্তব অনুভূতিতে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর জুটি যেন ‘আইসিং অন দ্য কেক’।

তিন বছর আগের সে ম্যাচে শেষ ওভারে চাপটা বেশি ছিল। শেষ ৬ বলে লাগবে ১১। এখান থেকে শেষ ৩ বলে ২…বাকিটা কখনো ভোলার না। চতুর্থ ও পঞ্চম বলে এই মুশফিক-মাহমুদউল্লাহই ব্যাখ্যাতীতভাবে হার মেরে মেনেছিলেন আবেগের কাছে। খেলেছিলেন দুটি উচ্চাভিলাষী শট, যাঁর পরিণতিতে থেকে গেছে ১ রানের চিরকালীন দুঃখ।

সেই হার যেমন কখনো ভোলার না, তেমনি পাশে এ জয়টা রাখলে একটা বিশ্বাস কিন্তু জাগে। চাপ গলে জয় ছিনিয়ে আনার শেষ আঁচড়ে ‘আত্মহত্যা’ আর না। ১৫ বলে ৪০ রানের জুটিটি তার প্রমাণ। সাকিব-তামিম ছাড়া এ সংস্করণে বাংলাদেশের প্রথম জয়ে স্মরণীয় হয়ে থাকবে ম্যাচ শেষে মুশফিকের কথাটি, ‘ক্রিকেটার হিসেবে আমি আরও ভালো করার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করছি।’

মুশফিক কেমন ক্রিকেটার তা নতুন করে বলা অর্থহীন। চেষ্টার কথা উঠলে তাঁর নামটা ওপরের দিকেই থাকবে। তিন শর বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলার পর নতুন করে এই ‘চেষ্টা’র কথা বলা কি তিন বছর আগের সেই ক্ষতের প্রলেপ। বুঝিয়ে দেওয়া যে, ‘দেখ, সেই শেকল ভেঙেছি।’

দুই ওভার পিছিয়ে যাওয়া যাক। বেঙ্গালুরুর সে ম্যাচে শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ১৭। যশপ্রীত বুমরার ১৯তম ওভারে মাত্র ৬ রান নিতে পেরেছিলেন তাঁরা। তাতে শেষ ওভারে ১১ রানের চাপ, আর তা কাটিয়ে বের হলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি নিজেদের ভুলে।

দিল্লিতে শেষ দুই ওভারে আরও ৫ রান বেশি দরকার ছিল। ২২ রান। এবার চাপটা কাটিয়ে ওঠা হয়েছে ১৯তম ওভারেই। খলিল আহমেদের শেষ চার বলে টানা চারটি চার, মুশফিকের পরিণত মস্তিষ্কের প্রমাণ। আউট হলে শেষ ওভারে ‘অল আউট’ খেলার মতো উইকেট ছিল হাতে। তা না হওয়াতেই ৬ বলে ৪ রানের সহজ সমীকরণ। আগের ওভারে মুশফিকের ওই সাহস-আত্মবিশ্বাসটুকুই যেন সাকিব-তামিম ছাড়াই ভয়ডরহীন বাংলাদেশ!

মাহমুদউল্লাহ অধিনায়ক হলেও স্নায়ুক্ষয়ী এ মুহূর্তে ছিলেন ব্যাটম্যানের ‘রবিন’-এর ভূমিকায়। এবার ছক্কা মারতে গেছেন যখন চার বলে দরকার ১। বোলিংয়ে হার্দিক পাণ্ডিয়ার মতো কেউ নন, শিবম দুবের মতো অভিষিক্ত কেউ যখন শর্ট লেংথে কম পেসে বল করে। ধারাভাষ্যকারদের ভাষায় ‘ক্লিনিক্যাল থিংকিং’!

অভিজ্ঞদের কাছে প্রত্যাশা থাকে আরকি।