আট গোল, দুই লাল কার্ডের ম্যাচে সমতায় চেলসি-আয়াক্স

৪-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্তভাবে সমতায় ফিরেছে চেলসি। ছবি: এএফপি
৪-১ গোলে পিছিয়ে পড়েও দুর্দান্তভাবে সমতায় ফিরেছে চেলসি। ছবি: এএফপি
>

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গোলে ঠাসা ম্যাচে ৪-৪ সমতায় থেকে ম্যাচ শেষ করেছে চেলসি-আয়াক্স। লাল কার্ড দেখেছেন আয়াক্সের দুই ফুটবলার। পেনাল্টি ও আত্মঘাতী গোলও হয়েছে দুটি করে।

কী ছিল না ম্যাচটিতে! গুনে গুনে ৮ গোল, দুটি করে পেনাল্টি ও আত্মঘাতী গোল এবং দুই লাল কার্ড- নিরপেক্ষ ফুটবলপ্রেমীদের জন্য বিনোদনের দারুণ পসরা সাজিয়েই বসেছিল চেলসি ও আয়াক্স। পাগলাটে সেই ম্যাচ শেষেও তাই আলাদা করা যায়নি দুই দলকে। ৪-৪ গোলের সমতায় থেকেই মাঠ ছেড়েছে তারুণ্যনির্ভর দল দুটি।

শুরু থেকেই ম্যাচটিকে বলা হচ্ছিল তারুণ্যের লড়াই। একদিকে ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের অধীনে নতুন চেলসি, অন্যদিকে গত মৌসুমে দুর্দান্ত ফুটবল খেলা আয়াক্স। সমর্থকদের প্রত্যাশা মিটিয়ে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে কী দুর্দান্ত এক ম্যাচই না উপহার দিল তারা! আয়াক্সের দারুণ পরিকল্পনার জবাব চেলসি দিয়েছে হারার আগেই না হারার মানসিকতা দিয়ে। যে কারণে ম্যাচের একপর্যায়ে ৪-১ গোলে এগিয়ে গিয়েও ড্রয়ের হতাশা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে আয়াক্সকে।

গোল উৎসবের শুরুটা ২ মিনিটে। এই মৌসুমে চেলসিকে গোল এনে দেওয়ার অন্যতম নির্ভরতা হয়ে উঠেছেন যিনি, সেই ট্যামি আব্রাহাম বল ঢোকান জালে। তবে সেটি চেলসি সমর্থকদের মুখে হাসি এনে দেওয়ার বদলে নিরাশই করেছে। আয়াক্সের জালে নয়, আব্রাহাম যে বল ঢুকিয়েছেন নিজেদের জালে! আয়াক্সের ফ্রিকিক ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন। সেটি তো পারেনইনি, উল্টো বল ঢুকিয়েছেন নিজেদের জালে। সমতায় ফিরতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেয়নি ইংলিশ দলটি। ক্রিশ্চিয়ান পুলিসিচকে ফাউল করায় ম্যাচের ৪ মিনিটের মাথায় পেনাল্টি পায় চেলসি। সেখান থেকে গোল করতে ভুল হয়নি জর্জিনহোর।

গোল হজম করে যেন আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে আয়াক্স। দারুণ গোছানো ও আক্রমণাত্মক ফুটবলে পুরো প্রথমার্ধটাই চেলসি রক্ষণভাগকে তটস্থ করে রেখেছিলেন হাকিম জিয়েখরা। সেটির ফলও পেয়েছে ডাচ দলটি, বিরতির আগেই চেলসিকে দিয়েছে আরও দুই গোল। ২০ মিনিটে জিয়েখের মাপা ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে আয়াক্সকে দ্বিতীয়বারের মতো এগিয়ে নেন কুইন্সি প্রোমস। তৃতীয় গোলটিতেও মূল অবদান জিয়েখের, কিন্তু স্কোরকার্ডে গোলটি লেখা হয়েছে চেলসি গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগার নামে। কর্নার ফ্ল্যাগের কাছে দুরূহ কোণ থেকে ফ্রিকিক নিয়েছিলেন জিয়েখ। বাঁকানো শটটি ক্রসবারে লেগে ফিরে আসার সময় কেপার মুখে লেগে ঢুকে গেছে জালে!

দুই মিনিটে দুটি লাল কার্ড দেখার মাশুল দিতে হয়েছে আয়াক্সকে। ছবি: এএফপি
দুই মিনিটে দুটি লাল কার্ড দেখার মাশুল দিতে হয়েছে আয়াক্সকে। ছবি: এএফপি

বিরতি থেকে ফিরে গোল শোধের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছে চেলসি। ৫২ মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পেয়েও আয়াক্স গোলরক্ষক ওনানাকে পরাস্ত করতে পারেননি আব্রাহাম। তবে চেলসি না পারলেও ম্যাচে চতুর্থবারের মতো এগিয়ে যেতে ভুল করেনি আয়াক্স। ৫৫ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে ভ্যান ডি বিকের গোলে ৪-১ গোলে এগিয়ে যায় আয়াক্স। নিজেদের মাঠে চেলসির কাছে হারের শোধটা ভালোভাবেই তুলছে আয়াক্স, এমনটাই মনে হচ্ছিল তখন।

তবে ম্যাচের বাকি সময়টা পুরোটাই নিজেদের করে নিয়েছে চেলসি। তিন গোলে পিছিয়ে থেকেও হাল ছাড়েনি, লড়ে গেছে সমানতালে। ফলাফল, নয় মিনিটের মধ্যে তিন গোল শোধ। শুরুটা অধিনায়ক সিজার অ্যাজপিলিকুয়েতার পায়ে। ৬৩ মিনিটে আলতো টোকায় গোল করে দলকে উজ্জীবিত করলেন, সমর্থকদের প্রতিও আহ্বান জানালেন বিশ্বাস না হারাতে। চেলসি সমর্থকেরাও পুরোটা সময় জুড়ে সমর্থন দিয়ে গেছেন দলকে। তবে চেলসিকে ম্যাচে ফিরতে সহায়তা করেছে আয়াক্সই। দুই মিনিটের মধ্যে দুটি লাল কার্ড দেখে আয়াক্সকে নয়জনের দল বানিয়ে দেন ড্যালি ব্লিন্ড ও জোয়েল ভিল্টম্যান। অযথাই ফাউল করতে গিয়ে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেছেন ব্লিন্ড, বক্সের মধ্যে হ্যান্ডবল করে একই পরিণতি হয়েছে ভিল্টম্যানেরও। সেটির সুযোগ নিয়েই ম্যাচে ফিরেছে চেলসি। ৭১ মিনিটে দ্বিতীয়বারের মতো পেনাল্টি থেকে গোল করেন জর্জিনহো।

ম্যাচের তখনো বাকি ২০ মিনিট, চেলসি ম্যাচে আছে ভালোভাবেই। সমতায় ফিরতে অবশ্য অত সময় লাগেনি ল্যাম্পার্ডের দলের। তারুণ্যনির্ভর দলের প্রতীক হিসেবে সমতাসূচক গোলটাও এসেছে আনকোরা এক তরুণের পা থেকেই। ৭৪ মিনিটে ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল করে পুরো স্ট্যামফোর্ড ব্রিজকে আনন্দে ভাসিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী রাইটব্যাক রিস জেমস। গোলের নেশায় উন্মত্ত চেলসি জয়টাও প্রায় পেয়েই গিয়েছিল। ৭৮ মিনিটে অ্যাজপিলিকুয়েতা গোল করেছিলেন আরেকটি। কিন্তু আব্রাহামের হ্যান্ডবলের কারণে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বাতিল করে দিয়েছে সেই গোল।

এই ড্রয়ে দারুণ জমেছে গ্রুপ এইচের লড়াই। চারটি করে ম্যাচ শেষে চেলসি, আয়াক্স ও ভ্যালেন্সিয়া তিন দলেরই পয়েন্ট সমান ৭। আপাতত পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকেও তাই স্বস্তিতে নেই চেলসি।