“মুশফিক ভাইয়েরা বলেছিলেন, 'সরি রে মিসটেক হয়ে গেছে'”

অভিষেক ক্যাপটাই পাননি মোহাম্মদ নাঈম। ছবি: প্রথম আলো
অভিষেক ক্যাপটাই পাননি মোহাম্মদ নাঈম। ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন: শুরুর গল্পটা বলুন। ক্রিকেটের হাতেখড়ি কীভাবে? 

মোহাম্মদ নাঈম: বরিশালে নানাবাড়িতে থাকতাম, সেখানে এক ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করিয়ে দেওয়া হয়। তখন ঠিকমতো অনুশীলন করিনি। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত সেখানেই ছিলাম। এরপর ফরিদপুরে নিজের বাড়ি ফিরে আসি। তখন খেলা শুরু করি, টেপ টেনিস ক্রিকেটে। যেখানে যেতাম, সেখানেই ভালো খেলতাম। ব্যাটিং শুরু থেকেই পছন্দ, কিপিংও করতাম। বোলিং কখনোই পারতাম না। এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে যাই টেপ টেনিস খেলতে খেলতে। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় খেলতাম নিয়মিত। খুব বড় মাঠ ছিল না আমাদের ওই দিকে। অনেক শর্ট পিচ ক্রিকেট খেলা হতো। তখন সবাই বলত ক্রিকেট বলে খেলতে, অনুশীলন করতে। তারপর ফরিদপুরে জুনিয়র ক্রিকেট কোচিং ক্লাবে ভর্তি হই।

প্রশ্ন: শুনেছি দেরিতে ক্রিকেটে এসেছেন আপনি?
নাঈম: হ্যাঁ, ক্লাস টেনে এসে ক্রিকেট বলে খেলা শুরু করি। আমি শুরুতে ভালো ছিলাম না। জেলার অনেক ক্রিকেটার ছিল, সবাই ভালো। তাদের মধ্যে আমি সুযোগ পেতাম না। একটু অবহেলিত ছিলাম সেখানে। এরপর আমি হঠাৎ করে অনুশীলন বন্ধ করে দিই। আমাদের সপ্তাহে ছয় দিন অনুশীলন করানো হতো। বাসা থেকে যাওয়া-আসা করতে প্রতিদিন ৪০ টাকা লাগত। কঠিন ছিল আমাদের জন্য। বাসা থেকে সাপোর্ট করতে পারছিল না। আর তখন আমি কোথাও খেলতামও না। আব্বু বিরক্ত ছিলেন।

প্রশ্ন: পরিবারের কার অনুপ্রেরণা বেশি ছিল?
নাঈম: বড় ভাই (মোহাম্মদ নাদিম শেখ) আর আম্মু (কেয়া বেগম)। বলে বোঝাতে পারব না তাঁদের অবদান কেমন ছিল। আর্থিক সমস্যা ছিল। বাবা (আবদুল আজিজ শেখ) অনেক বছর সৌদি আরবে ছিলেন। বড় ভাইও এখন সৌদি আরবে।

>

ভারত সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন ২০ বছর বয়সী ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। প্রথম সিরিজেই আলো কেড়েছেন, দিয়েছেন দলে নিয়মিত হয়ে ওঠার আভাস। অনূর্ধ্ব-১৯ দল ও হাইপারফরম্যান্স ইউনিট হয়ে জাতীয় দলে আসা এই তরুণ কাল প্রথম আলোকে শোনালেন তাঁর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার গল্প।

প্রশ্ন: ছাত্র কেমন ছিলেন? পড়াশোনা কতটুক করেছেন?
নাঈম: ছাত্র তেমন ভালো ছিলাম না। বাণিজ্য বিভাগ থেকে মাধ্যমিক পাস করেছি। উচ্চমাধ্যমিকে ইংরেজিতে খারাপ ফল করেছিলাম। এরপর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি। এইচএসসিটা করতে হবে। তাই ভেবেছি এখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব আর আইইএলটিএস দেব।

প্রশ্ন: টেপ টেনিস ক্রিকেট আসল ক্রিকেটে কীভাবে এলেন?
নাঈম: ফরিদপুরে একাডেমির এক কোচের দলের হয়ে টেপ টেনিসে খেলতাম। তখন বিভাগীয় অনূর্ধ্ব-১৮ দলে ব্যাটসম্যান ছিল না। এরপর ওই কোচ আমাকে অনুশীলন করতে বলেন। ২০১৫ সালের কথা সেটা। সামনে আবার এইচএসসি পরীক্ষা। অনূর্ধ্ব-১৮ দলের খেলাও তখন শুরু। খেলা আর অনুশীলনে এইচএসসির ফলাফল হয় খারাপ। এরপর বাসা থেকে সব বন্ধ করে দিল। বড় ভাই বাদে সবার মন খারাপ। শুধু বড় ভাই বললেন, ‘এটা কোনো ব্যাপারই না!’ ভাই আমাকে আমার প্রথম ব্যাট কিনে দিয়েছিলেন। খুব দামি, ২০ হাজার টাকা। রেজাল্ট খারাপের পর আমি সব মনোযোগ খেলায় দিয়ে দিই। ভালো কিছু করতেই হবে, এই মনোভাবটা তখন আসে।