বাংলাদেশ ম্যাচে 'ভারত-পাকিস্তান' উত্তাপ পাচ্ছেন কোহলি

কোহলির মনে হচ্ছে যেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। ছবি: এএফপি
কোহলির মনে হচ্ছে যেন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। ছবি: এএফপি
>কাল ইডেনে শুরু হচ্ছে আলোচিত গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট। বাংলাদেশ-ভারতের এই টেস্ট নিয়ে চারদিকে যে উন্মাদনা, সেটির তুলনা করতে গিয়ে বিরাট কোহলির মনে পড়ল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের কথা। একটা টেস্ট ঘিরে মানুষের এ উন্মাদনা ভারতীয় অধিনায়ককে রোমাঞ্চিত করলেও গোলাপি বলের টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন তিনি

অনুশীলন শেষে ড্রেসিংরুমে ফেরার পথে গ্যালারির দিকে একবার তাকালেন বিরাট কোহলি। ভারতীয় ড্রেসিংরুমের ঠিক ওপরের গ্যালারিতে পতাকা ওড়াচ্ছেন ভারতের ‘তারকা’ সমর্থক সুধীর কুমার আর বাংলাদেশের ‘টাইগার’ শোয়েব। কোহলি বুঝতে পারছেন, ইডেনে বাংলাদেশ-ভারতের দিবারাত্রির টেস্ট ঘিরে শুধু গ্যালারিতে নয়, দুই দেশই গোলাপি-জ্বরে কাঁপছে!

এই উত্তেজনা-উত্তাপ একটা সময় ভারত-পাকিস্তানের লড়াইয়ে বেশি দেখা যেত। কোহলিদের এখন নিয়মিত খেলা হয় না চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে। আইসিসির টুর্নামেন্টে যা একটু দেখা হয়, সেখানে দুই দলের লড়াই আগের মতো ঠিক জমে না। উপমহাদেশীয় ক্রিকেটীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাকিস্তানের জায়গাটা ধীরে ধীরে নিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ। ইডেনে গোলাপি বলের টেস্ট ঘিরে যে আগ্রহ-উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে সেটির সঙ্গে কোহলি তাই তুলনা করছেন ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটার সঙ্গে।

২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইডেনেই ভারত খেলেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। তিন বছর পর ইডেনে আরেকটি আলোচিত ম্যাচ। প্রতিপক্ষ এবার বাংলাদেশ। উপলক্ষ, আয়োজনের তুলনা করতে গিয়ে কোহলি তাই বলছেন, ‘এখানে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে যেমন অনুভব হয়েছিল এখনো তাই মনে হচ্ছে। গোলাপি বলের টেস্ট নিয়ে আমরা রোমাঞ্চিত। তখনো ইডেনে এমন উন্মাদনা, রোমাঞ্চ তৈরি হয়েছিল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এসেছিলেন। পুরো স্টেডিয়াম পূর্ণ ছিল। আমার মনে হয় এবারও পরিবেশ একই থাকবে। ভীষণ স্নায়ুচাপ থাকবে, একই সঙ্গে রোমাঞ্চকরও হবে। অবশ্যই ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য এটা বিরাট উপলক্ষ। আমরা সৌভাগ্যবান, অসাধারণ এই শুরুতে আমরা থাকতে পারছি।’

টেস্টকে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্দেশে দিবারাত্রির টেস্ট আয়োজন করছে ক্রিকেট বোর্ডগুলো। নানা কারণে ইডেনে গোলাপি বলের টেস্ট ভীষণ উদ্দীপনা, উন্মাদনা তৈরি করেছে। কিন্তু বারবার তো আর এমন উপলক্ষ আসবে না। আসবে না বলেই প্রশ্নটা আসছে, গোলাপি বলের টেস্টে কি সত্যি জনপ্রিয় হবে? দিবারাত্রির টেস্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব একটা আশার কথা শোনাতে পারলেন না বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কোহলি, ‘আমার মতামত হচ্ছে টেস্ট খেলার এটাই একমাত্র উপায় হওয়া উচিত নয়। সেটি হলে সকালের সেশনের যে স্নায়ুচাপটা থাকে সেটি হারিয়ে যাবে। আপনি টেস্টে রোমাঞ্চ আনতে পারেন। কেবলই মানুষকে বিনোদন দিতে টেস্ট আয়োজন করতে পারেন না। টেস্টের মজা তো ওখানেই, এক সেশনে ব্যাটসম্যানের কষ্ট হবে, বোলাররা ব্যাটসম্যানদের দাঁড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে চাইবে না। যদি মানুষ তাতে সাড়া না দেয়, সেটি ভালো নয়।তবে হ্যাঁ, এই টেস্ট ঘিরে মানুষের অনেক আগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেটা ভালো। চার দিনের টিকিট শেষ হয়ে গেছে, অসাধারণ এক ব্যাপার! তবে কদিন আগে রাহুল ভাই (দ্রাবিড়) যেটা বলেছেন, আপনার যদি টেস্ট পঞ্জিকা থাকে, সেটা সবাইকে আরও ভালো পরিকল্পনা করতে সহায়তা করবে। এটা এলোমেলোভাবে হতে পারে না। অনেকে বলে, জানিই না পরের টেস্ট কবে, কখন। আপনার যদি আগ থেকেই ভেন্যু ঠিক থাকে, টেস্টের তারিখটা নির্ধারিত থাকে, তাহলে টেস্ট নিয়ে মানুষ আরও ভালোভাবে পরিকল্পনা করতে পারবে, আগ্রহী হবে।’

কোহলির এ কথাটা সৌরভ গাঙ্গুলী কীভাবে নেন, সেটিই দেখার। ভারতীয় সাংবাদিকদের কেউ কেউ মনে করেন শুধু সৌরভের ইচ্ছেতেই ইডেনে গোলাপি বলের টেস্ট হচ্ছে। ভারতীয় দলের খুব একটা আগ্রহ ছিল না এখনই দিবারাত্রির টেস্ট খেলার। যদিও সৌরভ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, গোলাপি বলে টেস্ট খেলার সিদ্ধান্ত জানাতে কোহলি নিয়েছিলেন মাত্র তিন সেকেন্ড! আজ গোলাপি বলের টেস্ট নিয়ে ভারতীয় অধিনায়কের ভাবনা শুনে তো মনে হচ্ছে, টেস্টের এই ‘ভার্সন’টার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ তাঁর নেই!