সাঁতারু দম্পতির অন্যরকম 'হানিমুন'

দুজনই দেশের হয়ে সাঁতারে সোনা জিতেছেন এসএ গেমসে। এবার পুলে নামবেন না, কিন্তু কাঠমান্ডু গেছেন অন্য ভূমিকায়। সাঁতারুদের উৎসাহ জোগাবেন তাঁরা। দেবেন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের পতাকাও থাকবে একজনের হাতে। বিয়ে করেছেন সেই ২০১৬ সালে। এই সুযোগে নেপালে হানিমুনটাও সেরে ফেলার ইচ্ছা তাদের। ছবি: ফেসবুক।
দুজনই দেশের হয়ে সাঁতারে সোনা জিতেছেন এসএ গেমসে। এবার পুলে নামবেন না, কিন্তু কাঠমান্ডু গেছেন অন্য ভূমিকায়। সাঁতারুদের উৎসাহ জোগাবেন তাঁরা। দেবেন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেশের পতাকাও থাকবে একজনের হাতে। বিয়ে করেছেন সেই ২০১৬ সালে। এই সুযোগে নেপালে হানিমুনটাও সেরে ফেলার ইচ্ছা তাদের। ছবি: ফেসবুক।

খেলার মাঠে পরিচয়। সম্পর্কটা ধীরে ধীরে গভীর হয়েছে। কবে কখন একজন আরেকজনের পরিপূরক হয়ে গেছেন, বুঝতেই পারেননি। হ্যাঁ, সাঁতারু দম্পতি শাজাহান আলী রনি ও মাহফুজা খাতুন শিলার কথাই বলছি। কাল রাতের বিমানে ঢাকা থেকে শিলা এসেছেন কাঠমান্ডুতে। সফরসঙ্গী স্বামী রনি। এর আগেও দুজন বিভিন্ন সময়ে একই বিমানে চড়ে বসেছেন আন্তর্জাতিক গেমসে অংশ নিতে। এবারও শিলার সহযাত্রী রনি। কিন্তু এবার দুজনেই এসেছেন ভিন্ন পরিচয়ে। এবারের তেরোতম এসএ গেমসে বাংলাদেশ দলের পতাকা বাহক শিলা। আর ফেডারেশনের ডেলিগেট হিসেবে আছেন রনি।

বাংলাদেশের হয়ে দুজনই পুল মাতিয়েছেন এসএ গেমসে। দুজনেরই প্রিয় ইভেন্ট ব্রেস্ট স্ট্রোক। ২০০৬ কলম্বো এসএ গেমসে ৫০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে সোনা জেতেন রনি। আর সর্বশেষ ২০১৬ গুয়াহাটি এসএ গেমসে ৫০ ও ১০০ মিটার ব্রেস্ট স্ট্রোকে জোড়া সোনা জেতেন শিলা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের যুবক রনি ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ বিয়ে করেন শিলাকে।

প্রায় সাড়ে তিন বছরের দাম্পত্য জীবনে খেলার ব্যস্ততায় হানিমুনে যাওয়ার সময় হয়ে ওঠেনি কারও। হিমালয়ের দেশের এই অফিশিয়াল ভ্রমণকে কি হানিমুন বলতে পারি? প্রশ্নটা করতেই কাঠমান্ডুর কালাপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে বসে হাসতে হাসতে শিলা বলছিলেন, ‘সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে খেলা ছেড়ে অবসরজীবনে ঢোকার পর এটাই আমাদের প্রথম অফিশিয়াল ট্যুর। খেলোয়াড় হিসেবে দুজন শেষ বার অংশ নিই ভারতে ২০১৬ গেমসে। এবারই দুজনই খেলা দেখার জন্য এসেছি, খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতে ও পাশে থাকতে এসেছি। আমি এবার বাংলাদেশের পতাকা বইবো। এটা ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। তা ছাড়া পাশে স্বামী আছে বলে নিশ্চিন্তে ঘুরতে পারছি। দুজন একসঙ্গে একই বিমানে আগেও চড়েছি। তখন সতীর্থ ছিলাম। কিন্তু এভাবে নির্ভার হয়ে আসিনি কখনো। ঘোরাফেরা, খাওয়া দাওয়া সবই উপভোগ করছি। আসলে হানিমুনের চেয়ে বেশি মজা করছি এবার।’

>

কলম্বো এসএ গেমসে সোনা জিতেছেন শাজহান আলী রনি, গুয়াহাটি গেমসে মাহফুজা খাতুন শিলা। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ বিয়ে করেন এই সাঁতারু দম্পতি।

কাল রাতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এই দম্পতিকে অভ্যর্থনা জানাতে গিয়েছিলেন সাঁতার ফেডারেশনের সহকারী কোচ গোলাম মোস্তফা। আপাতত দুজনই কালাপুরে সাঁতারুদের সঙ্গে থাকবেন। আগামী ৩ ডিসেম্বর থেকে উঠবেন কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট হোটেলে। ফেডারেশনের আতিথেয়তায় মুগ্ধ শিলা, ‘ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’

প্রায় ২৩ বছরের ক্যারিয়ার শিলার। গত এসএ গেমসের সোনা জয়ের কারণেই শিলা পেয়েছেন খ্যাতি, সম্মান, আর্থিক পুরস্কার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছেন ফ্ল্যাট উপহার। আরেকটি এসএ গেমসে দর্শক হয়ে থাকতে একটু কষ্টই হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা মেনে নিয়েই বললেন, ‘আমার এই দীর্ঘ সাঁতারের ক্যারিয়ার ভীষণ মিস করি। তবে বেশি ভালো লাগছে এবার পতাকা থাকবে আমার হাতে। প্রথম অফিশিয়াল ব্লেজার পরেছি।’

রনিরও নেপালে প্রথমবার আসা। এভাবে গেমসে এসে উচ্ছ্বসিত রনি বলছিলেন, ‘এভাবে গেমসে আসার অনুভূতি আলাদা। এটাও সত্যি যে আমরা অনেকবার চেষ্টা করেও হানিমুনে যেতে পারিনি। এবার এসেছি একটা উপলক্ষে। বেশ ভালো লাগছে।’

শুধু কাঠমান্ডু নয়, দুজনই ঘুরতে যাবেন পোখারাতে। সেখানে শিলার এক আত্মীয় রেস্তোরাঁর ব্যবসা করেন। নেপালে আসার আগেই আমন্ত্রণ পেয়েছেন পোখারায় যাওয়ার। সেখানে প্যারাগ্লাইডিং করারও ইচ্ছা রয়েছে তাদের। সাঁতারু দম্পতির ‘অন্যরকম’ হানিমুন আরও স্মরণীয় হয়ে উঠবে, যদি আরিফুল ইসলাম, জোনায়না আহমেদরা সাঁতারে সোনা জেতেন।