ওয়ার্নারের কাছে রেকর্ড হারালে খুশিই হতেন লারা

টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডটা এখনো লারার। ছবি : এএফপি
টেস্ট ক্রিকেটে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডটা এখনো লারার। ছবি : এএফপি

ব্রায়ান লারার টেস্টের টেস্টের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটা ভাঙতে হবে, সেদিন ওয়ার্নারের মাথায় এমন কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিল কি না, কে জানে!

ঘুরপাক খেলেও তাঁকে দোষ দেওয়া যায় না। সব সময় কি আর সেই মহাকাব্যিক ৪০০ রানের ইনিংসের রেকর্ড ভাঙার সৌভাগ্য আসে? আসেই তো এক-দুইবার। সে সুযোগই সেদিন পেয়েছিলেন ওয়ার্নার, পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাডিলেড টেস্টের প্রথম ইনিংসে। সুযোগ কাজে লাগাতে হবে, এ চিন্তাতেই কি না, ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পরেই আরও আগ্রাসী হয়ে গিয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। ওয়ানডের ধাঁচে ব্যাট করা শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩৩৫ রানেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ওয়ার্নারকে। লারার ৬৫ রান আগেই থেমে যেতে বাধ্য হন তিনি।

চূড়ান্ত পেশাদারির পরিচয় দেখিয়ে ওয়ার্নার ৩৩৫ রানে অপরাজিত থাকার সময়েই ইনিংস ঘোষণা করে দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন। অস্ট্রেলিয়ানরা চূড়ান্ত পেশাদার, এটা আজকের নতুন কথা নয়। ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলগত সাফল্যকে তারা বেশি গুরুত্ব দেবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ সত্ত্বেও টিম পেইনের আগেভাগে ইনিংস ঘোষণা দেওয়াটা চমক জাগিয়েছে অনেকের মনে। খোদ ব্রায়ান লারাও আছেন এই দলে। অ্যাডিলেড টেস্টে স্বাগতিক অধিনায়কের ইনিংস ঘোষণা করার সিদ্ধান্তে আশ্চর্য হয়েছেন ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি।

অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিপক্ষে দিনরাতের টেস্টে ওয়ার্নার যখন একটার পর একটা রেকর্ড ভাঙছিলেন, ঠিক তখন একই শহরে ছিলেন ব্রায়ান লারা। ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত ছিলেন তিনি। হঠাৎ করে খবর এল, তার রেকর্ড ‘হুমকি’র মুখে। খুশিই হলেন মনে মনে। যার কাছে রেকর্ডটা যাচ্ছে, তাঁকে বরণ করে নিতে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডিলেড ওভালের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি! কিন্তু তা আর করা হলো কই? হলো না পেইন ইনিংস ঘোষণা করায়।

নিজে যখন সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড ভেঙেছিলেন, যার রেকর্ড ভেঙেছিলেন, সেই স্যার গ্যারি সোবার্সের কাছ থেকে সরাসরি অভিনন্দন পেয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৭৫ রান করে তখনকার রেকর্ডধারী গ্যারি সোবার্সের অপরাজিত ৩৬৫ রানের রেকর্ডকে পেছনে ফেলেন লারা। ওই ইনিংসের পর লারাকে অভিনন্দন জানাতে বার্বাডোজের মাঠে নেমে যান সোবার্স। নিজের রেকর্ড যে ভাঙবে, তাকেও একই কায়দায় অভিনন্দন জানাবেন বলে মনে মনে হয়তো ভেবে রেখেছিলেন লারা! টিম পেইন লারাকে এভাবে ‘পেইন’ দেবেন, সেটা হয়তো ভাবেননি ক্যারিবীয় কিংবদন্তি, ‘আমি আশা করেছিলাম তারা আমাকে খুঁজে বের করে মাঠে নিয়ে যাবে। আমি আশা করেছিলাম ওয়ার্নার এই রেকর্ড করার সুযোগ পাবে। সোবার্সের মতো ওয়ার্নারকে অভিনন্দন জানাতে পারলে ব্যাপারটা বেশ হতো। রেকর্ড হয়ই ভাঙার জন্য। ওয়ার্নারের মতো আক্রমণাত্মক মানসিকতার খেলোয়াড়রা যদি সেটা ভাঙে, তাহলে আরও চমৎকার লাগে। বিনোদন দেয়। অ্যাডিলেডে থাকায় আমি ওকে শুভেচ্ছা জানানোর সুযোগ পেয়েছিলাম, অন্তত মাঠে না গেলেও এই সুযোগে তার সঙ্গে দেখা হতে পারত।’

>

ওয়ার্নার যেভাবে ব্যাট করছিলেন, মনে হচ্ছিল ব্রায়ান লারার রেকর্ড ভাঙা সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু সেটি হয়নি। অ্যাডিলেড টেস্টে চূড়ান্ত পেশাদারির পরিচয় দিয়ে ইনিংস ঘোষণা দেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক টিম পেইন, ডেভিড ওয়ার্নারও অপরাজিত থাকেন ৩৩৫ রান করে। লারা নিজে কিন্তু খুশিই হতেন ওয়ার্নার তাঁর রেকর্ডটি ভাঙলে

অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস ঘোষণায় দোষ দেখছেন না লারা, ‘অসাধারণ একটা ইনিংস খেলেছে ওয়ার্নার। আমি বুঝতে পারছি অস্ট্রেলিয়ার কাছে ম্যাচ জয় বড় ব্যাপার এবং আবহাওয়ার ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হয়েছে তাদের। তাও অস্ট্রেলিয়া যদি ওয়ার্নারকে রেকর্ডটা করতে দিত তাহলে ভালো লাগত। চোখের সামনে এটা দেখতে পারলে বেশ লাগত। অন্তত তারা যদি বলত “ডেভিড, তোমাকে ১২ ওভার দেওয়া হলো, দেখ চা বিরতির আগে রেকর্ডটা ভাঙতে পার কি না”, তাহলে দারুণ হতো। অবশ্য সঠিক সময়ে তারা ইনিংস ঘোষণা করেছে। গতকাল রাতে তারা ৬ উইকেট নিয়েছিল।’

তবে আজ না পারলেও ওয়ার্নারের পক্ষে আবারও এমন ইনিংস খেলা সম্ভব বলে মনে করছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই কিংবদন্তি, ‘ও যখন স্যার ডন ব্র্যাডম্যানকে পেছনে ফেলল, আমি ধরে নিয়েছিলাম সে আমার রেকর্ড ভাঙছে। ভালো লাগছিল তখন। তার ইনিংস শেষে মাঠে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম আমি। আমি ধারাভাষ্যকারদের বলতে শুনছিলাম, সে ম্যাথু হেইডেনের ৩৮০ রান ছাড়াতে পারবে কি না। তবে আমার মনে হচ্ছিল সে যদি একবার হেইডেনেরটা পেরোতে পারে, তাহলে আমার রেকর্ডটাও ভাঙতে পারবে। আমি এখনো মনে করি ওয়ার্নার তার ক্যারিয়ারে এই রেকর্ড ভাঙার আরও সুযোগ পাবে। ও অনেক আক্রমণাত্মক খেলোয়াড়।’