প্রত্যাশার সোনা জিততে পারলেন না আরদিনা

এসএ গেমস পিস্তলে রুপা জয়ের পর আরদিনা ফেরদৌস। ছবি: প্রথম আলো
এসএ গেমস পিস্তলে রুপা জয়ের পর আরদিনা ফেরদৌস। ছবি: প্রথম আলো

আবারও তীরে এসে তরী ডোবার গল্প। আবারও অল্পের জন্য সোনার পদক হাতছাড়া হওয়ার আক্ষেপ। গতকাল এসএ গেমসে হতাশ করেছেন আবদুল্লাহ হেল বাকি। এবার এসএ গেমসের ১০ মিটার এয়ার পিস্তলেও সোনা জিততে পারলেন না আরদিনা ফেরদৌস। কাঠমান্ডুর সাতদোবাটো শুটিং কমপ্লেক্সে আজ এ ইভেন্টে রুপা জিতেছেন কুষ্টিয়ার মেয়ে আরদিনা। তিনি পেয়েছেন ২৩৪.৬ পয়েন্ট। আর ২৩৮.৪ পয়েন্ট পেয়ে সোনা জিতেছেন ভারতের শ্রী পরমানানথাম।

অবশ্য পিস্তলে মেয়েদের একক ইভেন্টে রুপা জিতে এরই মধ্যে একটা ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন আরদিনা। বাংলাদেশের কোনো মেয়ে প্রথমবার দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে পিস্তলের এককে জিতলেন পদক। এবারের গেমসে সব মিলিয়ে শুটিংয়ে এ পর্যন্ত ৩টি রুপা এল। আর আরদিনারও এটা এসএ গেমসে ব্যক্তিগত ইভেন্টে সর্বোচ্চ সাফল্য। গত আসরে গুয়াহাটিতে গিয়েও পিস্তলের সমস্যার কারণে এক রাউন্ড শট নিতে পারেননি। বাদ পড়েন ফাইনাল রাউন্ডে।

আজ ফাইনালের ২৪ শটের মধ্যে এক সময় দারুণ ধারাবাহিকভাবে ১০ পয়েন্টের ওপর শট মারছিলেন আরদিনা। এর মধ্যে টানা ছয়টি শট মারেন যথাক্রমে ১০.৪, ১০.০, ১০.৩, ১০.০, ১০.৪ ও ১০.৯। ততক্ষণে সোনার স্বপ্ন জাগিয়ে তুলেছেন আরদিনা। রেঞ্জে বসা সতীর্থ শুটার, কোচ ও কর্মকর্তারাও স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন। কিন্তু যে মুহূর্তে সবচেয়ে ভালো করা প্রয়োজন ছিল সেই সময়ই স্নায়ুচাপ ধরে রাখতে পারেননি আরদিনা। মারলেন ৮.৬ পয়েন্ট। ততক্ষণে ভারতের পরমানানথাম আদরিনাকে টপকে গেছেন। আর শেষ শটে আরদিনা ৯.২ মারেন, পরমানানথাম ১০.৫ পয়েন্ট করে শেষ হাসিটা হাসেন। আরদিনা শেষ দুই শটের আগের মুহূর্তের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে, ‘তখন আল্লাহ ভরসায় পিস্তলটা তুলেছি আর মেরেছি। আর কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’

কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী শুটিং পরিবার থেকে উঠে এসেছেন আরদিনা। ২০০৮ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রথম পিস্তল হাতে নেন। নানা আমজাদ হোসেন ছিলেন কুষ্টিয়া রাইফেল ক্লাবের সদস্য। বাবা, মা, ভাই বোন সবাই শুটিংয়ে অংশ নিয়েছেন এক সময়। আরদিনার শুটিংয়ে আসার গল্পটাও মজার, ‘একবার বিভাগীয় শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার জন্য কোনো মেয়ে শুটার পাচ্ছিল না আমাদের ক্লাব। কুষ্টিয়া ক্লাবে তখন মেয়ে শুটার নেই। আমাকে ভাইয়া বললেন, তোমাদের কে কে শুটিং করতে চাও চলো। ব্যস, সেই থেকে প্রতিযোগিতায় নাম লেখালাম।’

আজ ফাইনালের শেষ মুহূর্তে বেশ স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন আরদিনা। সেই অনুভূতি বলছিলেন রুপা জয়ের পর, ‘আসলে ভারতের শুটাররা অনেক শক্তিশালী। ওরা আমাদের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ওরাও যখন বাদ পড়ছিল আর আমি টিকে থাকছিলাম দেখে ভালো লাগছিল। একটা বারের জন্যও স্কোর বোর্ডে তাকাই নি। চেষ্টা করেছি নিজের সেরাটা দেওয়ার। অনেক বেশি নার্ভাস ছিলাম। ভারতের অনেক সিনিয়র শুটার যখন বাদ পড়ছিল তখন মনে হলো তাহলে ভালোই করছি। মনে হচ্ছিল এই তো পদকের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি।’