জানুয়ারিতে যাদের দলে টানতে চাইবে চেলসি

দলবদলের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে চেলসির, ল্যাম্পার্ডের হাসি তো চওড়া হবেই! ছবি: এএফপি
দলবদলের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে চেলসির, ল্যাম্পার্ডের হাসি তো চওড়া হবেই! ছবি: এএফপি
তরুণ ফুটবলারদের দলবদলে নিয়মভঙ্গ করেছিল, তাই দুটি দলবদলে খেলোয়াড় কিনতে না পারার শাস্তি জুটেছিল চেলসির কপালে। কিন্তু সম্প্রতি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়েছে তাদের প্রতি, শাস্তি অর্ধেক করা হয়েছে। ফলে সামনের শীতকালীন দলবদলেই নতুন খেলোয়াড় দলে ভেড়াতে পারবে লন্ডনের ক্লাবটা। কে কে নজরে আছে তাদের? আসুন দেখে নেওয়া যাক


গত সপ্তাহের মাঝপথে লিগের ম্যাচে অ্যাস্টন ভিলাকে হারানোর মাধ্যমে কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের মুখে হাসি এনেছিল চেলসি। সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই ল্যাম্পার্ডের হাসি আরেকটু চওড়া হয়েছে। দলবদলের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেছে তাদের ওপর থেকে। সামনে জানুয়ারির শীতকালীন দলবদলেই নতুন খেলোয়াড় কিনতে পারবে চেলসি।

নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তরুণ খেলোয়াড়দের দলে ভেড়ায় না চেলসি, এই অভিযোগে দুই দলবদলে নতুন খেলোয়াড় না কিনতে পারার শাস্তি পেয়েছিল তারা। এই দুই দলবদলের মধ্যে একটা শেষ, গত গ্রীষ্মের দলবদলে নতুন কাউকে কেনেনি দলটা। ফলে নতুন কোচ ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে ভরসা রাখতে হয়েছে ট্যামি আব্রাহাম, ম্যাসন মাউন্ট, ফিকায়ো তোমোরি, রিস জেমস, ক্যালাম হাডসন-ওডোইয়ের মতো তরুণদের ওপর।

এমনকি এই সময়ে বেশ কিছু খেলোয়াড় চেলসির মূল একাদশে নিয়মিত হয়েছেন, যারা আগে তেমন মূল একাদশে সুযোগ পেতেন না। এর মধ্যে রয়েছেন কার্ট জুমা, এমারসনের মতো তারকারা। নতুন খেলোয়াড় যেহেতু কেনা যাচ্ছে না, সেহেতু দলের ‘ফ্লপ’ কিছু খেলোয়াড়দের চাইলেও বিক্রি করতে পারেননি ল্যাম্পার্ড। যেমন রস বার্কলি, ড্যানি ড্রিঙ্কওয়াটার, অলিভিয়ের জিরু, পেদ্রো, মার্কোস আলোনসো, মিচি বাতশুয়াই প্রমুখ। মাউন্ট, তোমরির মতো তরুণেরা ল্যাম্পার্ডকে হতাশ না করলেও, মাঝে মাঝেই অনুভূত হয়েছে, নতুন খেলোয়াড় থাকলে হয়তো ল্যাম্পার্ডের একটু সুবিধা হতো।

শাস্তি অনুযায়ী জানুয়ারির দলবদলেও নতুন খেলোয়াড় কিনতে পারার কথা না তাদের। কিন্তু ঠিক জানুয়ারির আগমুহূর্তে সুখবরটা পেয়েছে তারা। দুই দলবদলের শাস্তি কমিয়ে অর্ধেক করেছে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালত। অর্থাৎ মাত্র এক দলবদলেই শাস্তি শেষ হয়ে যাচ্ছে চেলসির, যে এক দলবদলে তারা এর মধ্যেই খেলোয়াড় না কিনে থেকেছে। সামনের জানুয়ারি থেকেই আবার টাকা ওড়াতে পারবে লন্ডনের ক্লাবটি। এমনকি চার লাখ ষাট হাজার পাউন্ডের জরিমানাও অর্ধেক করে দুই লাখ তিরিশে নামানো হয়েছে।

ল্যাম্পার্ড এর মধ্যেই ক্লাবের ডিরেক্টর মারিনা গ্রানোভস্কিয়া, টেকনিকাল ও পারফরম্যান্স পরামর্শক পিওতর চেক, প্রধান স্কাউট স্কট ম্যাকলাচলানের সঙ্গে নতুন খেলোয়াড় আনা বিষয়ক আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন।

নতুন খেলোয়াড় হিসেবে কাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারে চেলসি? কাদের নজরে রেখেছে তারা? আসুন দেখে নেওয়া যাক।

ওসমানে ডেমবেলে (উইঙ্গার, বার্সেলোনা)
বার্সেলোনার এই ফরাসি উইঙ্গার চোটপ্রবণতার কারণে এখনো মূল একাদশে নিজের জায়গা পাকা করতে পারেননি। বার্সেলোনায় তাঁর জায়গা নিয়ে নিয়েছেন আরেক ফরাসি তারকা আঁতোয়ান গ্রিজমান। তবে যখনই সুস্থ ছিলেন, ডেমবেলে নিজের জাত ঠিকই চিনিয়েছেন। বার্সেলোনার কোচ আর্নেস্তো ভালভার্দে অবশ্য তাঁকে বিশেষ সমাদর করেন না। গত গ্রীষ্মেই পিএসজি থেকে আবারও নেইমারকে দলে আনার জন্য প্রস্তাবিত চুক্তিতে ডেমবেলেকে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল তারা। বোঝাই যায়, ভালভার্দের পরিকল্পপনায় ডেমবেলে নেই তেমন। আর এই সুযোগটাই নিতে যাচ্ছে চেলসি। এর মধ্যেই ডেমবেলের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মারিনা গ্রানোভস্কিয়া কথা বলে ফেলেছেন বলে খবর এসেছে।

বেন চিলওয়েল (লেফটব্যাক, ইংল্যান্ড)
লেস্টার সিটির এই লেফটব্যাক গত কয়েক বছর থেকেই নিজেকে প্রতিভাবান তারকা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। লিভারপুলের কোচ থাকার সময় ব্রেন্ডান রজার্স এই ইংলিশ তারকাকে দলে আনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। গত দুই বছরে নিজেকে লেস্টারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে প্রমাণ করেছেন চিলওয়েল। কী আক্রমণ, কী রক্ষণ—সব দিকেই পারদর্শী তিনি। ইংল্যান্ডের মূল লেফটব্যাক হিসেবেও নিজেকে আস্তে আস্তে নিজেকে তৈরি করছেন। চেলসির লেফটব্যাক হিসেবে যারা আছেন, সেই মার্কোস আলোনসো বা এমারসন, কেউই তেমন নির্ভরযোগ্য না। এমারসন আবার ভয়াবহ রকমের চোট প্রবণ। তাই একটা লেফটব্যাক ল্যাম্পার্ডের লাগবেই। আর সে কারণেই তাদের মূল পছন্দ চিলওয়েল। তবে লিভারপুলের সঙ্গে বর্তমানে প্রিমিয়ার লিগের দৌড়ে থাকা লেস্টার মৌসুমের মাঝপথে তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই খেলোয়াড়কে ছাড়বে কী না, সেটাই দেখার বিষয়।

জেডন সাঞ্চো (উইঙ্গার, বরুশিয়া ডর্টমুন্ড)
দুই মৌসুম আগে ম্যানচেস্টার সিটি থেকে অপাঙেক্তয় হয়ে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডে যোগ দিয়েছিলেন এই প্রতিভাবান ইংলিশ তরুণ। গত দেড় বছরে নিজের জাত বেশ ভালোভাবেই চিনিয়েছেন, ম্যানসিটির কোচ পেপ গার্দিওলাকে দেখিয়েছেন কেমন রত্ন হাতছাড়া করেছেন। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কোচের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে ডর্টমুন্ডের মূল একাদশ থেকে নিজের জায়গা হারিয়েছেন সাঞ্চো। ফলে সাঞ্চো যে ডর্টমুন্ড ছাড়ছেন, সেটা নিশ্চিত। এখন এই জানুয়ারিতে দলবদলটা হয়, নাকি সামনের গ্রীষ্মে, সেটাই দেখার বিষয়। সাঞ্চোকে নেওয়ার দৌড়ে আপাতত লিভারপুলই এগিয়ে আছে। তবে চেলসিকে সাহস জোগাচ্ছে অন্য একটা বিষয়। ছোটবেলা থেকেই চেলসির ভক্ত সাঞ্চো। চেলসির বর্তমান তারকা ট্যামি আব্রাহাম ও ক্যালাম-হাডসন ওডোয়ের সঙ্গে সেই ছোটবেলা থেকে সখ্য তাঁর। সেই সখ্যকে কাজে লাগিয়ে চেলসি কতটুকু এগোতে পারে, সেটাই দেখার বিষয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো সাঞ্চোর ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়নি চেলসি।

উইলফ্রিয়েড জাহা (উইঙ্গার, ক্রিস্টাল প্যালেস)
উইঙ্গার হিসেবে সাঞ্চো বা ডেমবেলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে উইলফ্রিয়েড জাহাকে দলে আনা সহজ হবে চেলসির জন্য। খেলেন দুর্বল ক্রিস্টাল প্যালেসে, দল ছাড়ার জন্য মুখিয়ে আছেন, মাত্র ফর্মে ফিরেছেন, চাইলেই জাহাকে দলে টানতে পারে চেলসি। বাকি দুজনের চেয়ে জাহাকে আনতে খরচও কম হবে লন্ডনের ক্লাবটার। এর আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়ে নিজেকে মেলে না ধরতে পারা জাহা বেশ ক’বছর ধরেই বড় ক্লাবে ঔজ্জ্বল্য ছড়ানোর অপেক্ষায় আছেন। চেলসি কী তাঁকে সে সুযোগটা করে দেবে?

টিমো ভেরনার (স্ট্রাইকার, আরবি লাইপজিগ)
এখন ট্যামি আব্রাহাম চেলসির মূল স্ট্রাইকার। কিন্তু আব্রাহাম ছাড়া ভরসা করার মতো তেমন কোনো স্ট্রাইকার নেই চেলসির স্কোয়াডে। মিচি বাতশুয়াই, অলিভিয়ের জিরু, কেউই ল্যাম্পার্ডের পছন্দের খেলোয়াড় হয়ে উঠতে পারেননি। ফলে এই জানুয়ারিতেই দুজন চেলসি থেকে বিদায় নিতে পারেন। আর তাঁর জায়গায় আনা হতে পারে জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ভেরনারকে। এর মধ্যেই জার্মান স্ট্রাইকারের ব্যাপারে এক প্রস্থ খোঁজখবর নেওয়া হয়ে গিয়েছে চেলসির। তবে ভেরনারকে পাওয়ার দৌড়েও চেলসির সঙ্গে আছে লিভারপুল।