৫০ বছর বয়সে সোনা জিতলেন

সিঙ্গাপুরের নারী অ্যাথলেট ক্রিস্টিনা থাম। ছবি: সংগৃহীত
সিঙ্গাপুরের নারী অ্যাথলেট ক্রিস্টিনা থাম। ছবি: সংগৃহীত
সি গেমসে ৫০ বছর বয়সে সোনা জিতেছেন সিঙ্গাপুরের নারী অ্যাথলেট ক্রিস্টিনা থাম।


বয়স ৩০ পেরোনোর পর যখন ক্রীড়াঙ্গন থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয় খেলোয়াড়দের, তখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমসে (সি গেমস) ক্রিস্টিনা থাম সোনা জিতলেন প্রতিযোগিতাটিতে অভিষেকের ৩৮ বছর পর! ঠিকই পড়ছেন, অভিষেকের ৩৮ বছর পরই ৫০ বছর বয়সে সোনা জিতেছেন সিঙ্গাপুরের এই নারী অ্যাথলেট। তা-ও একটি নয়, দু-দুটি সোনা!

বর্ষীয়ান ক্রিস্টিনার এই অর্জন যেমন চমকপ্রদ, তেমনি চমকপ্রদ তাঁর জীবনের গল্পটাও। ১৯৮১ সি গেমসে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েছিলেন সাঁতারে। আর এবার ফিলিপাইনে ৩০ নভেম্বর শুরু হওয়া গেমসে ক্রিস্টিনা সোনা জিতলেন অন্য খেলায়, আন্ডারওয়াটার হকি বা জল হকিতে, যে হকি খেলা হয় পানির নিচে।

গেমসের অভিষেকেই রুপাজয়ী ক্রিস্টিনার সাঁতারে আসার পেছনের গল্পটাও চমকপ্রদ। সে গল্প শুনতে ফিরে যেতে হবে আরও পেছনে। ক্রিস্টিনার বয়সে যখন ৭, তাঁর বাবা সপরিবার মালয়েশিয়া বেড়াতে গিয়েছিলেন। সাঁতার না জানলেও সেখানকার লেকে ক্যানোয়িং করতে নামেন তাঁর বাবা। নৌকা উল্টো পড়ে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক। ভাগ্যিস লাইফ জ্যাকেট পরা ছিল, তাই প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। দেশে ফিরে এসেই এরপর পরিবারের সবাইকে নিয়ে সাঁতারের স্কুলে ভর্তি হন ক্রিস্টিনার বাবা। সুইমিংপুলে সেই নামা থেকেই ক্রিস্টিনার সাঁতারু হয়ে ওঠা। মাত্র ১২ বছর বয়সে সিঙ্গাপুরের হয়ে ১৯৮১ সালে ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত সি গেমসে অংশ নিয়েছিলেন। রুপা জিতেছিলেন ৪ x ১০০ মিটার মিডলে রিলেতে। দুই বছর পর একই গেমসের ২০০ মিটার ব্রেস্টস্ট্রোকেও জিতেছিলেন রুপা।

সোনার আক্ষেপ থেকেই যে এত দিন ক্যারিয়ার ধরে রাখা ক্রিস্টিনার, ব্যাপারটা তা নয়। ওই গেমসের পরই সাঁতার ছেড়ে দিয়েছিলেন। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার গড়েছিলেন আইনজীবী হিসেবে। কাজ করেন সিঙ্গাপুরের এক আবাসন প্রতিষ্ঠানে আইনি উপদেষ্টা হিসেবে। এভাবেই কাটছিল জীবন। কিন্তু ২০০৫ সালে আবার ফিরলেন পুলে। তবে সাঁতরানোর জন্য নয়। জলহকি খেলার জন্য। কোথায় যেন জলহকি নিয়ে একটা প্রতিবেদন পড়েছিলেন, সেই থেকেই খেলাটার প্রতি আগ্রহ জন্মে তাঁর। ভালো লাগা থেকেই কাজে নেমে পড়া!

একসময় খেলাটাতেও পারদর্শী হয়ে উঠলেন ক্রিস্টিনা। ডাক পেলেন সিঙ্গাপুরের জাতীয় নারী জলহকি দলে। এবারই প্রথম এই খেলাটা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সি গেমসে। আর তাতেই বাজিমাত। জলহকির ৪ বনাম ৪ ও ৬ বনাম ৬—দুটি ইভেন্টে অংশ নিয়ে দুটিতেই সোনা জিতেছে ক্রিস্টিনার সিঙ্গাপুর। শুধু তা-ই নয়, দুটি ইভেন্টে গোলও করেছেন।


সি গেমসের পরের আসর ২০২১ সালে ভিয়েতনামে। সেখানেও খেলার পরিকল্পনা বয়সকে স্রেফ সংখ্যা বানিয়ে দেওয়া ক্রিস্টিনার।