কী হয়েছে মোস্তাফিজের

বোলিংয়ের সেই ধারটা অনেক কমে গেছে মোস্তাফিজুর রহমানের। ছবি: প্রথম আলো
বোলিংয়ের সেই ধারটা অনেক কমে গেছে মোস্তাফিজুর রহমানের। ছবি: প্রথম আলো

স্টাম্পের সামনে পানির বোতল। ঠিক ইয়র্কার লেন্থে। রংপুর রেঞ্জার্সের অনুশীলনে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমান বোতলে বল লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। বেশ কয়েকবার সফলও হলেন। অথচ এই অনুশীলনের পরদিন ডেথ ওভারে শ্রীলঙ্কান হার্ড হিটার দাসুন শানাকার সামনে ইয়র্কার লেন্থটা যেন খুঁজেই পাচ্ছিলেন না দেশের সবচেয়ে সফল টি-টোয়েন্টি বোলার। প্রথম ৩ ওভারে ১২ রানে দুই উইকেট নেওয়া মোস্তাফিজ স্পেলের শেষ ওভারে দেন ২৬ রান।

খেলাটা টি-টোয়েন্টি। ডেথ ওভারে যখন রান থামানোটাই তাঁর দায়িত্ব, তখনই রান দিচ্ছেন মোস্তাফিজ। ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেও দেখা গেছে একই চিত্র। দিল্লিতে ২ ওভারে ১৫ রান দিয়েছেন, রাজকোটে দিয়েছেন ৩.৪ ওভারে ৩৫ রান ও নাগপুরে ৪ ওভারে ৪২ রান। মোস্তাফিজের খরুচে বোলিং শুধু কয়েক ম্যাচেরই ঘটনা নয়। গত দুই বছরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ২০ ম্যাচ খেলে মোস্তাফিজের ইকোনমি রেট ৯.৪৭!

কাল মোস্তাফিজ প্রসঙ্গে বেশ চিন্তিত মনে হলো রংপুর রেঞ্জার্সের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসর ও বিসিবির নির্বাচক হাবিবুল বাশারকে, ‘মোস্তাফিজের বোলিংয়ে এখন ইয়র্কার নেই, সে ইয়র্কার পাচ্ছে না। আগে দারুণ ইয়র্কার ছিল বোলিংয়ে। স্লোয়ার বলটা এখনো আছে। পেসও আস্তে আস্তে বাড়ছে। তবে তার বলটা এখন আগে থেকে ভালোই অনুমান করা যাচ্ছে। এটাই চিন্তা। মনে হচ্ছে, ব্যাটসম্যানরা ওকে পড়ে ফেলছে যে ও কী করতে যাচ্ছে।’

সেরা সময়ের মোস্তাফিজ বল করতেন ফুল লেন্থে। গতি ছিল ১৪০ কিলোমিটারের আশপাশে। ব্যাটসম্যানদের দুই ধরনের কাটারেই বিভ্রান্ত করতেন তিনি। সঙ্গে ছিল ভয়ংকর ইয়র্কার। গত বছর বাউন্সারেও অনেক উইকেট নিয়েছেন। আর এখন তাঁর সেই বাউন্সারেও রান করছে ব্যাটসম্যানেরা। স্লোয়ার বাউন্সার নিয়ে কাজ করছেন মোস্তাফিজ। অনুশীলনে ইয়র্কার নিয়েও ঘাম ঝরাচ্ছেন। কাজে আসছে না কিছুই।

>

উইকেট পাচ্ছেন কিন্তু রান দিচ্ছেন বেশি। পুরোনো ধারটাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। চিন্তার নাম মোস্তাফিজুর রহমানের বোলিং

পেসারদের প্রিয় কোচ সরওয়ার ইমরানের মনে করেন, কোন সময়ে কোন বল করতে হবে, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নন মোস্তাফিজ। কাল প্রথম আলোকে তিনি বলছিলেন, ‘নিখুঁত ইয়র্কার নেই, কাটারও আগের মতো নিখুঁত নেই। স্লগ ওভারে যখন যে বলটা করা উচিত, সেটা হচ্ছে না। তার স্লোয়ারে বৈচিত্র্য আছে। বাউন্সার আছে। ইয়র্কার আছে। এগুলো যখন যেটা ব্যবহার করা দরকার, তখন সেটা করছে না। পেসারের একজন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে কাজ করার যে দক্ষতা, এই জিনিসগুলো একটু কম মনে হচ্ছে।’

পরশু মোস্তাফিজকে টানা ৪ ছক্কা মারার পর শানাকা বলছিলেন, ‘আমি এর আগে মোস্তাফিজকে বেশ কয়েকবার খেলেছি। আমি জানি ও কী করতে পারে। সেই অনুযায়ী খেলেছি।’ শানাকার ব্যাটের সামনে মোস্তাফিজ কোনো জবাবই খুঁজে পাচ্ছিল না। কোচ সরওয়ার অবাক হচ্ছেন সে কারণেই, ‘ব্যাটসম্যানরা কিন্তু ভাবে, বোলাররা কখন কোন বল করবে। তেমন বোলারেরও ভাবতে হয় ব্যাটসম্যানরা কী করবে। কোন অবস্থায় কোন বল করতে হবে, সেটা পড়তে জানতে হবে। ব্যাটসম্যান যদি বোলারকে পড়ে ফেলে, তাহলে রান হবেই। বোলার যদি ব্যাটসম্যানকে পড়তে না দেয়, তাহলে বোলার ভালো করবে। এগুলো কম দেখছি ওর মধ্যে।’

মোস্তাফিজকে সমাধানের উপায়ও বাতলে দিয়েছেন সরওয়ার, ‘খুব দ্রুত এই পর্যায়ে চলে এসেছে তো, সোজা নেট থেকে জাতীয় দলে।। এসব জায়গায় কাজ করার সময় হয়নি। নেটে কাজ করলে হবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাজ করলে হবে না। ঘরোয়া ক্রিকেটে এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।
তাহলে পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেগুলো কাজে লাগাতে পারবে।’

এবারের বিপিএলের আগেই বোলিংয়ের বেশ কিছু খুঁটিনাটি নিয়ে কাজ করেছেন মোস্তাফিজ। সামনে আবার টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপ। তাঁর আগে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে নতুন ও পুরোনো বলের বোলিংটাও নিশ্চয়ই আরও ধারালো করতে চাইবেন তিনি।