'মানুষ ভাবতে পারে লিটন হয়তো বর্ণান্ধ'

বিপিএলে কাল খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি হবে রাজশাহী রয়্যালস। আজ অনুশীলনে নিজেকে নিয়ে অনেক কথাই বললেন রাজশাহীর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাস। ছবি-প্রথম আলো
বিপিএলে কাল খুলনা টাইগার্সের মুখোমুখি হবে রাজশাহী রয়্যালস। আজ অনুশীলনে নিজেকে নিয়ে অনেক কথাই বললেন রাজশাহীর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান লিটন দাস। ছবি-প্রথম আলো

কলকাতা টেস্ট শুরুর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, রাতে গোলাপি বল দেখতে সমস্যা হচ্ছে লিটনের। যেটা সত্য নয় বলে জানালেন লিটন দাস।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রেসবক্সের সামনে নেট অনুশীলন করছিল খুলনা টাইগার্স। ঠিক তার উল্টো দিকে প্যাভিলিয়ন প্রান্তে রাজশাহী রয়্যালস। দুটি দলের অনুশীলনও ছিল একেবারে বিপরীতমুখী। খুলনার নেটে এক মুশফিকুর রহিম ছাড়া তেমন কেউ টি-টোয়েন্টির মেজাজ ছড়াতে পারলেন না। মোহাম্মদ আমির, শফিউল ইসলামদের দাপটই ছিল বেশি। অন্যদিকে রাজশাহীর নেটে ভীতি ছড়ালেন আন্দ্রে রাসেল। এরপর লিটন দাসের ছান্দিক টাইমিং।

রাসেলের ব্যাটে-বলে সংযোগের শব্দ বোলারদের কাছে ভীতিজাগানিয়া। কিন্তু লিটনের ব্যাটিংয়ের ভঙ্গি একটু অন্যরকম। ভীতি নয় মুগ্ধতা ছড়ালেনই বেশি। করতালি পেলেন নেট বোলারদের কাছ থেকেও। ব্যাটে-বলে ‘পারফেক্ট’ সংযোগের মধুমাখা শব্দটা নিয়েই খেললেন লিটন। কখনো সামনে আবার কখনো পেছনের পায়ে ভর করে খেললেন প্রায় সবদিকেই। এরপর প্যাড খুলে কিছুক্ষণ দম নিয়ে গেলেন মাঠের মূল উইকেটে। সেখানে ব্যাট হাতে কল্পনায় কিছু শট খেললেন। লিটন কালকের দিনটা যেন আজই দেখতে পেলেন!

বিপিএলে কাল খুলনার মুখোমুখি হবে রাজশাহী। এবার পদ্মাপাড়ের দলটির হয়ে শুরু থেকেই ভালো ফর্মে আছেন লিটন। ঢাকায় রাজশাহীর জেতা দুটি ম্যাচেই লিটন শুধু রানই পাননি, স্ট্রোকের মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন আজকের নেট অনুশীলনের মতোই। ঢাকার দুটি ম্যাচেই ৮ ও ৯ উইকেটের ব্যবধানে জিতেছে রাজশাহী। অর্থাৎ, দলটির টপ অর্ডার রান পাচ্ছে। নিচের দিকে রাসেল থাকলেও তিনি এখনো ব্যাট করার সুযোগ পাননি। খেলাটা টি-টোয়েন্টি বলেই ক্যারিবীয় তারকার পারফরম্যান্স দেখার প্রত্যাশায় আছেন দর্শকেরা। কথাটি লিটনকে মনে করিয়ে দিতেই মজা করলেন রাজশাহীর এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান, ‘এখন আপনারা কী চাচ্ছেন, দর্শকদের জন্য আমরা ওপর (টপ অর্ডার) থেকে পারফরম্যান্স না করতে পারলে ভালো?’

এবার বিপিএলের আগে সবশেষ বাংলাদেশের প্রথম দিবারাত্রির টেস্টে খেলেছেন লিটন। সেটি ছিল গোলাপি বলে বাংলাদেশের টেস্ট। প্রসঙ্গক্রমে সে টেস্টের কথাও উঠল। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে লিটনের ২৭ বলে ২৪ রানের ছান্দিক ইনিংসটি দুর্ভাগ্যক্রমে শেষ হয়েছিল মাথায় আঘাত পেয়ে। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরেছিলেন ড্রেসিং রুমে। তাঁর জায়গায় বাংলাদেশের প্রথম ‘কনকাশন বদলি’ হয়ে মাঠে নেমেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

মাথায় সেই আঘাত পাওয়ার পর কেমন কেটেছে লিটনের? তাঁর ব্যাখ্যা, ‘মানসিকভাবে তেমন চাপে ছিলাম না। তবে মাথায় আঘাত পাওয়ার পর যেমন হয়ে থাকে, ব্যথা করেছে এবং মাথা একটু ভার ভার লেগেছে। তবে লাগার পর উঠে গিয়ে ব্যাট করার মতো অবস্থা ছিল না।’ কলকাতা টেস্ট শুরুর আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছিল, রাতে গোলাপি বল দেখতে সমস্যা হচ্ছে লিটনের। কথাটা সত্য কি না, এ প্রশ্নের জবাবে লিটন মনে করিয়ে দিলেন সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব, ‘বিষয়টি নির্ভর করে আপনাদের ওপর। যদি বল দেখতে সমস্যা হতো তাহলে প্রথম বল থেকেই খেলতে পারতাম না। এটা আমার কাছে সমস্যা না। এখন আপনারা এ খবর যেভাবে দেবেন, সেভাবেই আসবে। বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমকে মানুষ কিন্তু অনুসরণ করে। মানুষ কিন্তু ভাবতে পারে লিটন হয়তো বর্ণান্ধ।’

এবার বিপিএলে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা ভালো করছে বলেই মনে করেন লিটন। বিশেষ করে মিরপুরের উইকেটেও ভালো করেছে দেশের ব্যাটসম্যানেরা। ভালো টেকনিকের জন্য লিটনকে অনেকেই দেশের টপ অর্ডারের ভবিষ্যৎ বলে মনে করেন অনেকে। কথাটা তাঁকে মনে করিয়ে দিতেই লিটন মনে করিয়ে দিলেন বাস্তবতা, ‘টেকনিক নিয়ে কি কেউ প্রত্যাশা করে? সবাই পারফরম্যান্স চায়। পারফর্ম করলে সব ঠিক। পারফর্ম করতে না পারলে টেকনিক থাকলে কি (দলে) খেলব?’

এই লিটন তাঁর ২৫ বছর বয়সের চেয়েও পরিপক্ব। পোড় খাওয়া এক ব্যাটসম্যান যিনি ক্ষতগুলো শুকিয়ে নিচ্ছেন আপন ছন্দে।