আবারও শেষ মুহূর্তের জাদু লিভারপুলের

শেষ মুহূর্তে গোল করেছেন ফিরিয়ে। ছবি : এএফপি
শেষ মুহূর্তে গোল করেছেন ফিরিয়ে। ছবি : এএফপি

এই ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার জন্যই গত পরশু লিগ কাপে এক রকম তৃতীয় সারির দল খেলিয়েছিল লিভারপুল। ফলে লিগ কাপের কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাস্টন ভিলার কাছে হারটা ছিল ৫-০ গোলের। এখন ক্লাব বিশ্বকাপেও যদি দলটা ব্যর্থ হতো, সমালোচনা ধেয়ে আসত চারদিক থেকে। সেটা হয়নি অবশ্য। ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কনকাকাফ চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী মেক্সিকোর ক্লাব মন্তেরেকে ২-১ গোলে হারিয়েছে তারা।

মূল একাদশের বেশ কয়েকজনকে এই ম্যাচে বিশ্রামে রেখেছিলেন কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। রক্ষণভাগে ছিলেন না ভার্জিল ফন ডাইক বা ট্রেন্ট-অ্যালেক্সান্ডার আরনল্ড। আক্রমণভাগে বসিয়ে রাখা হয়েছিল রবার্তো ফিরমিনো ও সাদিও মানেদের। দেয়ান লভরেন বা ফাবিনহোরা তো বহু আগে থেকেই চোটের কারণে মাঠের বাইরে। ফলে প্রথম থেকেই ভুগেছে লিভারপুল। ওদিকে মন্তেরেও নেমেছিল একদম ৪-৫-১ ছকে, যেখানে প্রায়ই চারজন মূল ডিফেন্ডারের সঙ্গে দুই মিডফিল্ডার যুক্ত হয়ে রক্ষণভাগকে ছয়জনের করে দিচ্ছিলেন। ম্যাচের ১২ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহর দুর্দান্ত এক পাসে গোল করেন মিডফিল্ডার নাবি কেইটা। কিন্তু দুই মিনিটের মাথায় সে গোল শোধ করে দেয় মন্তেরে। রক্ষণভাগে ভার্জিল ফন ডাইক না থাকার সুবিধাটা কড়ায়-গন্ডায় নেয় ক্লাবটি। গোল করেন আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার রোজেলিও ফুনেস মোরি। এই রোজেলিও আবার লিভারপুলের শহর-প্রতিদ্বন্দ্বী এভারটনের হয়ে এককালে খেলা ডিফেন্ডার রামিরো ফুনেস মোরির যমজ ভাই। ফলে গোলটা করে ভালোই স্বস্তি পাওয়ার কথা এই তারকার!

>

চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের সুবাদে এবার ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে কাতারে গেছে লিভারপুল। সরাসরি সেমিফাইনাল খেলছে তারা। গত রাতে সেমিফাইনালে মেক্সিকোর ক্লাব মন্তেরেকে ২-১ গোলে হারিয়ে ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ইংলিশ ক্লাবটি

পরে তুলনামূলকভাবে মন্তেরেই বেশি সুযোগ পেয়েছে। লিভারপুলের রক্ষণভাগে ত্রাস ছড়িয়েছেন কলম্বিয়ার উইঙ্গার, আগে ভ্যালেন্সিয়ার মতো ক্লাবে খেলা ডরলান পাবন। বেশ কিছু দুর্দান্ত সেভ করেছেন লিভারপুলের গোলরক্ষক অ্যালিসন। অ্যালিসন ফর্মে না থাকলে হয়তো সেমি থেকেই বিদায় নিতে হতো তাদের।

নব্বই মিনিট পর্যন্ত আর গোল হয়নি। এ অবস্থায় উপায়ন্তর না দেখে দলের মূল তিন তারকা ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ড, সাদিও মানে ও রবার্তো ফিরমিনোকে মাঠে নামান ক্লপ। শেষমেশ যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ডের ডিফেন্সচেরা এক পাস ধরে গোল করেন ফিরমিনো। লিভারপুলও মাঠ ছাড়ে ২-১ গোলের জয় নিয়ে।

২১ ডিসেম্বর ফাইনালে কাতারের দোহায় একই স্টেডিয়ামে ব্রাজিলের ক্লাব ফ্লামেঙ্গোর মুখোমুখি হবে লিভারপুল। ম্যাচটা তাদের জন্য একটা প্রতিশোধের উপলক্ষও বটে। ১৯৮১ সালের এমনই এক ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী লিভারপুল ৩-০ গোলে হেরেছিল কোপা লিবের্তাদোরেসজয়ী ফ্ল্যামেঙ্গোর কাছে। ‘সাদা পেলে’ খ্যাত জিকো একাই চরকির মতো নাচিয়ে ছেড়েছিলেন লিভারপুলের খেলোয়াড়দের।

৩৮ বছর পর আবারও চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী লিভারপুল ও কোপা লিবের্তাদোরেসজয়ী ফ্ল্যামেঙ্গো মুখোমুখি হচ্ছে, সেই ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালেই। প্রতিশোধের কথা লিভারপুলের মাথায় না এসে পারেই না!

এ ছাড়া এমনিতেও ক্লাব বিশ্বকাপে লিভারপুলের স্মৃতি তেমন ভালো না। ফ্ল্যামেঙ্গোর বিপক্ষে সেই ফাইনালটা ছাড়াও তারা ১৯৮৪ সালে ফাইনালে তারা হেরেছিল আর্জেন্টাইন ক্লাব ইন্দিপেন্দিয়েন্তে ও ২০০৫ সালে ব্রাজিলের সাও পাওলোর কাছে।

নিজেদের ট্রফিকেসে এই একটা ট্রফিরই অভাব তাদের। অভাবটা এবার ঘুচবে তো?