বড়দিনে কাজেই তাঁদের আনন্দ

বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন, আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস, বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিয়ান কোচ নিকোলা ভিতোরোভিচ ও মোহামেডানের ব্রিটিশ কোচ শন লেন। ফাইল ছবি
বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন, আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোস, বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিয়ান কোচ নিকোলা ভিতোরোভিচ ও মোহামেডানের ব্রিটিশ কোচ শন লেন। ফাইল ছবি

প্রতিটি বড়দিনের মতো আজও নিশ্চয় আলবুফেইরা সাজবে নতুন সাজে। রাস্তার মোড়ে আর গির্জায় থাকবে ক্রিসমাস–ট্রি, রঙিন বাতি, বেলুন। সান্তা ক্লজ গোপনে উপহার দিয়ে যাবেন বাড়ি বাড়ি। সাত সমুদ্র তেরো নদীর এপারে বসে প্রিয় শহরকে আজ প্রচণ্ডভাবে মনে পড়বে আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের। মনে পড়বে এক বছর বয়সী মেয়ে জাবি আর স্ত্রী কিমকে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে প্রিয়জনের কাছে থাকতে না পারার দুঃখ ভুলে আজও ব্যস্ততায় সময় কাটবে লেমোসের। ধানমন্ডির আবাহনী মাঠে অনুশীলন করাবেন ফুটবলার মামুনুল ইসলাম, সাদ উদ্দিনদের।

শুধু লেমোস নন, মোহামেডানের ব্রিটিশ কোচ শন লেন, বসুন্ধরা কিংসের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজোন এবং বাংলাদেশ পুলিশের সার্বিয়ান কোচ নিকোলা ভিতোরোভিচও উৎসবের দিনটাতে প্রিয়জনদের কাছ থেকে থাকবেন হাজার হাজার মাইল দূরে। মুঠোফোনে ‘শুভ বড়দিন’ খুদে বার্তা পাঠিয়েই নেমে যাবেন প্রতিপক্ষকে হারানোর ছক কষতে। লেমোস তো বললেনই, বড়দিন উপলক্ষে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই তাঁর, ‘অন্য দিনের মতোই অনুশীলন করাব। রাতে মুঠোফোনে মেয়ে আর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। মেয়ের প্রথম ক্রিসমাসে থাকতে পারব না বলে খারাপ লাগছে।’

বড়দিনে আজ ফেডারেশন কাপের কোনো ম্যাচ রাখেনি বাফুফে। এতে সুবিধা হয়েছে মোহামেডানের কোচ শন লেনের। বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে আজ রাতে গুলশানের একটি চার্চে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। ফুটবলারদের সঙ্গে সেখানেই খাবেন রাতের খাবার।

লেনের দুই ছেলের একজন থাকেন নিউইয়র্কে, আরেকজন আয়ারল্যান্ডে। তিন মেয়েকে নিয়ে লেনের স্ত্রী আছেন অস্ট্রেলিয়ায়। পেশাদারির খাতিরে পরিবার থেকে দূরে থাকার বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন এই ব্রিটিশ, ‘পরিবার ছেড়ে বিশেষ দিন কাটানোটা সত্যি কঠিন। সবাইকে প্রতিটি মুহূর্তে মনে পড়ে। কিন্তু পেশাদার কোচ হিসেবে ক্যারিয়ার বেছে নিলে এটা তো মানতেই হবে। এটাই বাস্তবতা।’

বড়দিনের প্রসঙ্গে আলোচনা উঠতেই লেন ফিরে গেলেন শৈশবে, ‘এখনো ছোটবেলার ক্রিসমাস উদ্‌যাপনের কথা মনে পড়ে। ইংল্যান্ডে পরিবারের সবাই যখন একসঙ্গে হতাম তখন ওটাও ক্রিসমাসের আনন্দের মতোই ছিল।’ এখন সে আনন্দ খুঁজে পান ম্যাচ জয়ের পর, ‘ম্যাচ জিতলে সেটাকেই এখন মনে হয় বড়দিনের উপহার।’

বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোন বড়দিনের প্রথম উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন একটা ফুটবল, এক জোড়া কেডস, শিনগার্ডসহ খেলার সব সরঞ্জাম। অতীত হাতড়ে ব্রুজোন বলেন, ‘সেই উপহারই বদলে দেয় আমাকে।’ স্পেনের ভিগো শহরে ব্রুজোনের পরিবারের সবাই থাকেন। তবে স্ত্রী ইরা আছেন ঢাকায়। তাঁকে নিয়েই আজ সকালে গাজীপুরে খ্রিষ্টানদের একটি এলাকায় যাবেন। স্থানীয় খ্রিষ্টানদের সঙ্গে সময় কাটাবেন, দুপুরের খাবার খাবেন। বিকেলে ক্লাবে এসে ফুটবলারদের অনুশীলন করাবেন। ‘এখানে কাজের মধ্যে আছি, তাতেই আমি খুশি। এই দলটাকে নিয়ে অনেক দূর যেতে হবে’—বলছিলেন ব্রুজোন।

পুলিশের কোচ ভিতোরোভিচ গত বছর ছিলেন ব্রাদার্সের দায়িত্বে। গতবারও ঢাকাতেই বড়দিনের ছুটি কাটিয়েছেন। কিন্তু এবার কী করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি, ‘জানি না কোথাও কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে কি না। দেখি কারও কাছ থেকে জেনে নেব।’ স্ত্রী নিনাকে ঢাকায় এনেছেন ভিতোরোভিচ। দুজন সুযোগ পেলে আজ শহরে ঘুরতে বের হবেন।

তবে কোচ যেহেতু, খেলার মৌসুমে বড়দিনের উৎসবের চেয়ে মাথায় ফুটবলটাই ঘুরছে বেশি, ‘কোচদের কোনো ছুটি নেই। কোচের কাজ এমন নয় যে দুই ঘণ্টার জন্য স্টেডিয়ামে খেলতে গেলাম আর ক্লাবে ফিরে এলাম। মাঠের বাইরেও নানা কাজ থাকে। প্রতিদিন গড়ে দশ ঘণ্টা কাজ করতে হয়।’

ফুটবলে আনন্দ খুঁজে নেন বলেই দিন শেষে কোচদের কাছে চ্যাম্পিয়ন ট্রফিটা হয়ে ওঠে বড়দিনের উপহারের চেয়েও বেশি কিছু।