নিজেদের নিয়মের ফাঁদে দক্ষিণ আফ্রিকা

টেম্বা বাভুমাকে দলে নেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা।  ছবি : এএফপি
টেম্বা বাভুমাকে দলে নেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। ছবি : এএফপি
মূল একাদশে সব সময় কৃষ্ণবর্ণ ও মিশ্রবর্ণের খেলোয়াড়দের উপস্থিতি থাকবে, অলিখিতভাবে এ যাবৎকাল দক্ষিণ আফ্রিকা দলে এ নিয়মপালন করা হলেও, পরিস্থিতির কারণে গত কয়েক দিন ধরে বেশ বিপাকেই পড়েছে তারা। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা কি আবারও সেই আগের মতো শ্বেতাঙ্গ প্রধান দল হয়ে উঠেছে?


এক সময়ে এমনই হতো। শুধু সাদা ক্রিকেটাররাই সুযোগ পেতেন দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট দলে। বর্ণবৈষম্যের এই বিষবাষ্প দূর করতে পরে নিয়ম হয়, মূল একাদশে কৃষ্ণবর্ণ ও মিশ্রবর্ণের খেলোয়াড়দের উপস্থিতি থাকবে। কিন্তু নতুন নির্বাচক গ্রায়েম স্মিথ ও নতুন কোচ মার্ক বাউচারের অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকা সে অলিখিত নিয়ম থেকে সরে আসছে যেন। জাতপাত বা বর্ণ নয়, বরং পারফরম্যান্সের ওপর নির্ভর করেই দলে খেলোয়াড় ডাকা হবে, এমন পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা। তবে এটি নিয়ে উঠেছে বিতর্ক। 

গত ৩০ বছর ধরে দলে কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্রবর্ণের খেলোয়াড়দের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য অলিখিত এক নিয়ম মানতেন দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকেরা। ১১ জনের দলে অন্তত দুজন কৃষ্ণাঙ্গ ও চারজন মিশ্রবর্ণের তারকা থাকতে হবে, এমনই ছিল নিয়মটা। কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলতে থাকা সিরিজে নতুন সাদা ক্রিকেটার অভিষিক্ত হচ্ছেন, যে কারণে এ নিয়মের অস্তিত্ব নিয়ে নতুন করে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। গ্রায়েম স্মিথ এসেই দলকে আবারও শ্বেতাঙ্গপ্রধান করতে চাইছেন বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে নির্ধারিত দুজন কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়ের মধ্যে খেলতে পেরেছেন মাত্র একজন, কাগিসো রাবাদা। চোটের কারণে খেলা হয়নি টেম্বা বাভুমার। বাভুমার জায়গায় অভিষেক ঘটেছে সাদা ক্রিকেটার রাসি ফন ডার ডুসেনের। দ্বিতীয় ইনিংসে এই ফন ডার ডুসেন একটা হাফ সেঞ্চুরি করে দলের জয়ে ভূমিকা রেখেছেন। ফলে দ্বিতীয় টেস্টে ছন্দে থাকা এই ব্যাটসম্যানকে বাদ দিয়ে আবারও শুধুমাত্র বর্ণের খাতিরে টেম্বা বাভুমাকে দলে ফেরাতে চাননি স্মিথ-বাউচাররা। বাভুমাকে বলা হয়েছে, ‘রান করে দলে ফেরো’। প্রথম টেস্টে অলরাউন্ডারের জায়গায় কৃষ্ণাঙ্গ আন্দিল ফিকোয়াওর বিকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছিল ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে। দ্বিতীয় টেস্টেও এই প্রিটোরিয়াসই খেলছেন।

ওদিকে দ্বিতীয় টেস্টে চোটের কারণে ছিটকে পড়েছেন ওপেনার এইডেন মার্করাম। তাঁর জায়গায় সাদা-কালোর হিসাব মেলাতে যদি একজন কৃষ্ণাঙ্গ ওপেনার খেলাতেন দক্ষিণ আফ্রিকার নির্বাচকেরা, তাও হতো। আলোচনা হচ্ছিল, মিশ্রবর্ণের কিগান পিটারসেনকে খেলানোর। কিন্তু কোচ মার্ক বাউচারের অসম্মতিতে সেটা হয়নি। ওপেনিং জুটি নিয়ে খামোখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাননি তিনি। মার্করামের জায়গায় নেওয়া হয়েছে আরেক ওপেনার পিটার মালানকে। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেছেন তিনি।

নিয়ম মানতে গিয়ে দলে কৃষ্ণাঙ্গ ও মিশ্রবর্ণের খেলোয়াড় ঢোকানোর জন্য এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের সবচেয়ে শক্তিশালী দল নামাতে পারেনি, এমন অনেক হয়েছে। কিন্তু নতুন কোচ ও নির্বাচক কমিটির অধীনে দক্ষিণ আফ্রিকা পারফরম্যান্সকেই সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে ধরবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে গ্রায়েম স্মিথ-মার্ক বাউচাররা আবারও দলকে শ্বেতাঙ্গপ্রধান করে তোলেন কি না, সে নিয়ে শঙ্কা দানা বাঁধতে শুরু করেছে।