ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে আসা যাঁর কারণে

মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করার পর গোলাম জিলানীকে নিয়ে খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি: বাফুফে
মোহামেডানকে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করার পর গোলাম জিলানীকে নিয়ে খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি: বাফুফে

ফেডারেশন কাপে ফাইনাল খেলবে কোন দুই দল?

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সাতটি দলের নাম আলোচিত হলেও সেখানে কেউ রহমতগঞ্জকে রাখেনি। খাতা–কলমের বিচারে পুরান ঢাকার দলটিকে রাখার সুযোগও নেই। সে দলটিই প্রথমবারের মতো ফেডারেশন কাপের শিরোপার লড়াইয়ে নামবে আগামীকাল। ইতিহাস গড়ার পথে একে একে পেছনে ফেলেছে দেশের ঐতিহ্যবাহী দুই ক্লাব আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং লিমিটেডকে। রহমতগঞ্জের এ সাফল্যের কারিগর স্থানীয় কোচ গোলাম জিলানী।

নক আউট পর্বের কঠিন বাধা পেরোতে জিলানীকে প্রথমে টক্কর দিতে হয়েছে আবাহনীর পর্তুগিজ কোচ মারিও লেমোসের সঙ্গে। এক খেলোয়াড় বদলে ও খেলার কৌশল পরিবর্তন করেই লেমোসকে টপকে সেমিফাইনালে এসেছেন। আর ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মোহামেডানের অস্ট্রেলিয়ান কোচ শন লেনকে ভড়কে দেওয়ার জন্য প্রয়োগ করেছিলেন লেনেরই ‘হাই প্রেসিং।’ জিলানীর কৌশলেই প্রথমবারের মতো ফেডারেশন কাপের ফাইনালে রহমতগঞ্জ।

মোহামেডান ম্যাচ দিয়েই শুরু করা যাক। কোচ লেনের অধীনে দুর্দান্ত খেলে টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠে এসেছিল মোহামেডান। তাদের ‘হাই প্রেসিং’ ফুটবলের সামনে মাথা নত করছিল প্রতিপক্ষরা। কিন্তু সেমিফাইনালে সেই ‘হাই প্রেসিং’ ব্যবহার করেই মোহামেডানকে টালমাটাল করে ফেলেছেন জিলানির শিষ্যরা। প্রথম ১৫ মিনিটের মধ্যে পাওয়া একমাত্র গোলের জয় নিয়ে ক্লাবটির ইতিহাস গড়া ফাইনালে পা রাখা। ম্যাচ শেষে জয়ের কারণ হিসেবে বলেছিলেন জিলানী, ‘আমি জানতাম মোহামেডান প্রেস করে খেলে। আমার পরিকল্পনা ছিল ১৫ মিনিট আমরাও প্রেস করে খেলে মোহামেডানকে ভড়কে দেব।’

আবাহনীকে হারানোর গল্পে আসা যাক। গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে ৯ গোল দিয়ে উড়ছিল আবাহনী। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে রহমতগঞ্জের আঁটসাঁট রক্ষণ ভাঙা হচ্ছিল না ফেডারেশন কাপের বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের। অতিরিক্ত সময়ে বেলফোর্ট গোল করলেও ১১৮ মিনিটে বদলি নামা এনামুল গাজীর গোলে সমতায় ফিরে টাইব্রেকারে খেলা নিয়ে যায় রহমতগঞ্জ।

গোল হজমের পর নিজের কারিশমা দেখিয়েছেন জিলানী। ৪-১-৪-১ থেকে দলকে সাজানো হয়েছে ৪-৪-২ ফরমেশনে। লেফট উইংয়ে এনামুলকে পাঠিয়ে সেখান থেকে অধিনায়ক মোমোদুহ বাহকে সরিয়ে জুটি বাঁধানো হয় উজবেকিস্তানের স্ট্রাইকার তুরাইব আকবিরের সঙ্গে। এতেই সমতায় ফিরে ম্যাচটা টাইব্রেকারে নিয়ে যাওয়া।

ফাইনালে ওঠার পেছনে অবশ্য দলকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন জিলানী, ‘দলের ফাইনালে আসার পেছনে সবার অবদান আছে। এখানে আমি শুধু আমার কাজ করেছি। খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা সবার মধ্যে সমন্বয় না থাকলে দল ফাইনালে উঠতে পারত না। এ ছাড়া আমি যা বলছি খেলোয়াড়েরা তা করে দেখাতে পারছে। আমার দলের শক্তি আর দুর্বলতা কোথায়, তা আমি জানি। আমাদের চেয়ে অন্যরা সব দিক থেকেই এগিয়ে ছিল। কিন্তু হারার আগে হারব না, এই পণ করেই আমি খেলে গেছি।’ বসুন্ধরাকে হারিয়ে শিরোপা জেতার স্বপ্নে বিভোর জিলানী, ‘দল ফাইনালে ওঠায় সবার মধ্যে সাড়া পড়েছে। এখন ট্রফি জিততে পারলে তা হবে অনেক বড় সাফল্য।’

এই নিয়ে তিনবার ক্লাব কোচিং করাচ্ছেন জাতীয় দলের সাবেক এই সহকারী কোচ। আর ২০১৫ সালের পর আরও একটি বড় ট্রফির সামনে দাঁড়িয়ে তিনি। সেবার সিলেটে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ সাফে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ।