স্ট্রাইকারের খোঁজে চেলসি-ইউনাইটেড

জার্মান এই স্ট্রাইকারকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে বেশ। ছবি : এএফপি
জার্মান এই স্ট্রাইকারকে নিয়ে টানাটানি হচ্ছে বেশ। ছবি : এএফপি
>চলে এসেছে শীতকালীন দলবদল। মৌসুমের বাকি সময় যেন ঠিকঠাক কাটানো যায় এ জন্য এই সময়ে দলগুলো নতুন খেলোয়াড় আনার প্রতি আগ্রহী হয়। আর অন্যান্য খেলোয়াড়দের চেয়ে এবার স্ট্রাইকারদের দাম বেশি। বেশ কিছু বড় দল এবার খুঁজছে নতুন স্ট্রাইকার।

ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের অধীনে গতবার কোনো নতুন খেলোয়াড়কে কিনতে পারেনি চেলসি। ফলে তরুণ স্ট্রাইকার ট্যামি আব্রাহামের ওপর নির্ভর করে ছয় মাস কাটিয়েছে তারা। যুব খেলোয়াড় দলে আনার ক্ষেত্রে অনিয়ম করায় দলবদলে নিষেধাজ্ঞা ছিল তাদের ওপর। এখন এই সমস্যা নেই। রোমেলু লুকাকুকে ইন্টার মিলানের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার পর তাঁর জায়গায় নতুন কোনো স্ট্রাইকার কেনেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। অ্যান্থনি মার্শিয়াল আর মার্কাস র‍্যাশফোর্ডের সঙ্গে বিকল্প স্ট্রাইকার হিসেবে তরুণ মেসন গ্রিনউডের ওপর ভরসা রেখেছে তারা।

ওদিকে ডিয়েগো কস্তার ফর্মহীনতার মাশুল দিচ্ছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। দলে নতুন আসা জোয়াও ফেলিক্স এখনো প্রতিভার সম্পূর্ণ ঝলক দেখাতে পারেননি। অ্যাটলেটিকোর মতো স্ট্রাইকারদের ফর্মহীনতায় ভুগছে এসি মিলানও। আগের মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ক্রিস্তফ পিয়ন্তেক নিজের ছায়া হয়ে আছেন। রাফায়েল লিয়াও ও আনতে রেবিচের মতো স্ট্রাইকাররাও প্রত্যাশামাফিক পারফর্ম করেননি।

বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের আবার এক পাকো আলসাসের ছাড়া তেমন কোনো স্ট্রাইকারই নেই। প্রায়ই মারিও গোটশে থেকে শুরু করে মার্কো রয়েসের মতো আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডারদের স্ট্রাইকার হিসেবে খেলান কোচ লুসিয়েন ফাভরে। ওদিকে টটেনহামের মূল স্ট্রাইকার হ্যারি কেইন চোটে পড়ে মাঠের বাইরে চলে গেছেন। কত দিন মাঠের বাইরে থাকবেন, এখনো নিশ্চিত নয়। কেইন ছাড়া দলটায় নিখাদ স্ট্রাইকার বলতে আছেন ১৭ বছরের ট্রয় প্যারট।

রোমার মূল স্ট্রাইকার এডিন জেকোর বয়স হয়ে যাচ্ছে। গত এক বছর ধরেই জেকোর বিকল্প হিসেবে একজন স্ট্রাইকারকে আনতে চাইছে রোমা।

ওপরে উল্লিখিত ক্লাবগুলোর অবস্থা পড়ে সবগুলোর মধ্যেই বিজ্ঞ পাঠক একটা সাধারণ মিল খুঁজে পাবেন। হ্যাঁ, এ সব ক্লাবগুলোরই স্ট্রাইকার দরকার। এবার শীতকালীন দলবদলের বাজারে তাই স্ট্রাইকারদের চাহিদা আকাশছোঁয়া।

বলে রাখা ভালো, এর মধ্যেই নিজেদের স্ট্রাইকার সমস্যার সমাধান করে ফেলেছে এসি মিলান ও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। নিজেদের সাবেক তারকা স্ট্রাইকার জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচকে ফ্রিতে দলে ফিরিয়ে এনেছে এসি মিলান। পিয়ন্তেক ও লিয়াওর সঙ্গে মূল একাদশের স্ট্রাইকার হওয়ার জন্য লড়াই করবেন এই ৩৭ বছর বয়সী কিংবদন্তি। ওদিকে ইউরোপের অন্যতম প্রতিভাধর স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রট হরলান্ডকে ২০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে এনেছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। ফলে এই দুই দলের আপাতত স্ট্রাইকার নিয়ে চিন্তা নেই।

অন্য দলগুলোর এখনো দম ফেলার ফুরসত আসেনি। চেলসির কথাই ধরা যাক। খেলোয়াড় কেনায় এক দলবদলের মৌসুম নিষিদ্ধ থাকার পর এবার তাঁরা নতুন খেলোয়াড় কেনার লাইসেন্স পেয়েছে। পেয়েই দলের আক্রমণভাগ ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে তাঁরা। দলের মূল স্ট্রাইকার হিসেবে ট্যামি আব্রাহাম যথেষ্ট প্রতিভাবান। কিন্তু সব ধরনের প্রতিযোগিতায় মোকাবিলা করার জন্য এক স্ট্রাইকারের ওপর কোচ ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ড আর কতই-বা ভরসা রাখতে পারবেন? তাঁর ওপর দলের বিকল্প দুই স্ট্রাইকার মিচি বাতশুয়াই ও বর্ষীয়ান অলিভিয়ের জিরুর ওপর ল্যাম্পার্ডের তেমন আস্থা নেই। ওদিকে ট্যামিও ম্যাচের পর ম্যাচ খেলতে খেলতে বুঝে গেছেন, দলে তাঁকে সরানোর মতো স্ট্রাইকার নেই। ফলে গত কয়েক সপ্তাহে তাঁর মধ্যেও একটা গা-ছাড়া ভাব চলে এসেছে। ফলে চেলসির একজন স্ট্রাইকার দরকার। আর এই লক্ষ্যে তাঁরা তিনজন স্ট্রাইকারের একটা তালিকা তৈরি করেছে। তিনজনের মধ্যে যেকোনো একজনকে কিনতে চায় চেলসি। অলিম্পিক লিওঁর ফরাসি স্ট্রাইকার মুসা দেম্বেলে, আরবি লাইপজিগের জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ভের্নার, ফ্ল্যামেঙ্গোর ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল বারবোসার মধ্যেই এখন ভবিষ্যৎ দেখছে চেলসি।

তিনজনের মধ্যে ভের্নারকেই চেলসি চাইছে বেশি করে। ৩০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করলেই ভের্নারকে পাওয়া যাবে। ওদিকে দেম্বেলেকে আনাটা আবার চেলসির পক্ষে সুবিধাজনক। দেম্বেলের জন্য লিওঁর সঙ্গে যেকোনো চুক্তিতে তাঁরা চাইলেই নিজেদের ফরাসি স্ট্রাইকার অলিভিয়ের জিরুকে ঢুকিয়ে দিতে পারবে। ওদিকে ফ্ল্যামেঙ্গোর হয়ে দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো গ্যাব্রিয়েল এর আগে ইউরোপে তেমন ঝলক দেখাতে পারেননি, তাই তাঁকে দ্বিতীয়বার ইউরোপে সুযোগ দিতে চেলসি কতটুকু রাজি, সেটাও একটা বড় বিষয়।

ডিয়েগো কস্তার জায়গায় নিজেদের বিকল্প স্ট্রাইকার হিসেবে পিএসজির উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার এডিনসন কাভানিকে মনে ধরেছে অ্যাটলেটিকোর। পিএসজিতে কাভানি এখন আর নিয়মিত নন, মূল স্ট্রাইকার হিসেবে সেখানে নিয়মিত খেলছেন মাউরো ইকার্দি। পিএসজির সঙ্গে কাভানির চুক্তিও শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী জুনে। কাভানিকে যদি আগামী জুনে নেয় অ্যাটলেটিকো, তাহলে ট্রান্সফার ফি বাবদ অ্যাটলেটিকোর কিছুই দেওয়া লাগবে না। কিন্তু এখন যদি কাভানিকে তাঁরা পেতে চায়, তাহলে পিএসজি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, দশ মিলিয়ন ইউরো দিতে হবে। অ্যাটলেটিকো কি অতিরিক্ত এই দাম দিতে রাজি কাভানির জন্য? সময়ই বলে দেবে। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই চ্যাম্পিয়নস লিগে লিভারপুলের বিপক্ষে খেলতে হবে অ্যাটলেটিকোকে, সে জন্য দলের আক্রমণভাগের ধার বাড়ানো জরুরি। সে ভেবে কাভানিকে এই মাসের মধ্যে নিলেও নিতে পারে অ্যাটলেটিকো।

নতুন স্ট্রাইকার দরকার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডেরও। বেলজিয়ান স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুকে প্রায় ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে বিক্রি করার পর তাঁর জায়গায় নতুন কাউকে না আনার জন্য গত কয়েক মাস বেশ ভুগেছে দলটা। ইউনাইটেডের কোচ ওলে গুনার সুলশারের চোখেও আছেন মুসা দেম্বেলে ও টিমো ভের্নারের মতো স্ট্রাইকার। হরলান্ডকেও মনে ধরেছিল তাদের, কিন্তু তাদের আগেই করিতকর্মা ডর্টমুন্ড বোর্ড কাজ সেরে ফেলেছে। এই দুজন ছাড়াও উলভারহ্যাম্পটনের রাউল হিমেনেজকে নজরে রেখেছে ইউনাইটেড। এদিকে স্ট্রাইকারের দরকার হলেও, নতুন কোনো স্ট্রাইকারের সঙ্গে টটেনহামের নাম যুক্ত হয়নি এখনো।

কে কাকে পাবে? মাসের শেষেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।