তোমাকে সব সময় ভালোবাসব কোবি

>১৯৯৬ সালে কোবি ব্রায়ান্ট হাই স্কুল থেকে সরাসরি সুযোগ পেয়েছিলেন এনবিএতে। ৪১-ই চলে যাওয়া সেই কোবি ক্যারিয়ারে ইতি টানতে গিয়ে হয়ে গিয়েছিলেন ‘কবি’
মেয়ে জিয়ান্নিকে নিয়ে কাঁধে নিয়ে খেলা দেখছেন কোবি ব্রায়ান্ট। ছবিটি ২০১৪ সালের। ছবি: এএফপি
মেয়ে জিয়ান্নিকে নিয়ে কাঁধে নিয়ে খেলা দেখছেন কোবি ব্রায়ান্ট। ছবিটি ২০১৪ সালের। ছবি: এএফপি

দুই যুগ আগে ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল বাস্কেটবল অ্যাসোসিয়েশনে (এনবিএ) আবির্ভাব হয়েছিল ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরের। সে বছরের ড্রাফটে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় জো ব্রায়ান্টের ছেলেকে কোবিকে বেছে নিয়েছিল শার্লট হরনেটস ফ্র্যাঞ্চাইজি। নিজেদের জন্য নয়, শার্লট কোবিকে দলে নেয় বিখ্যাত বাস্কেটবল দল লস অ্যাঞ্জেলেস লেকার্স বা এলএ লেকার্সের পক্ষ হয়ে। লেকার্সের অভিজ্ঞ ভ্লাদ দিভাচের সঙ্গে কোবিকে অদলবদল করেছিল শার্লট।

এরপর ইতিহাস। টানা ২০টি মৌসুম এনবিএ রঙিন হয়েছে কোবি ব্রায়ান্টের জ্বলজ্বলে উপস্থিতিতে। ২০ মৌসুমের ১৮ বারই এনবিএর অলস্টার দলে জায়গা পেয়েছেন ১৯৭৮ সালে জন্ম নেওয়া ব্রায়ান্ট। ২০০৮ সালে এনবিএর মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার (এমভিপি) হয়েছিলেন ব্রায়ান্ট। লেকার্স তাঁর সময়ে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে এনবিএতে। লেকার্স ও ব্রায়ান্ট সমার্থক শব্দ হয়ে উঠেছিল এক সময়।

ব্রায়ান্টকে লেকার্সে এনেছিলেন সে সময়ে দলটির জেনারেল ম্যানেজার জেরি ওয়েস্ট। ব্রায়ান্ট সে সময়ে থাকতেন নিজ রাজ্য পেনসিলভেনিয়ার আর্ডমোরে, পড়তেন লোয়ার মেরিওন হাই স্কুলে। লেকার্সের স্কাউটরা পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় গিয়েছিলেন তরুণ প্রতিভার সন্ধানে। সেখানেই লেকার্সের সাবেক খেলোয়াড় মাইকেল কুপারকে একক লড়াইয়ে হারিয়ে দিয়ে নজর কাড়েন ব্রায়ান্ট।

সেদিন ব্রায়ান্ট কতটা মুগ্ধ করেছিলেন লেকার্সের কর্মকর্তাদের সেটির প্রমাণ জেনারেল ম্যানেজার ওয়েস্টের কথাতেই, ‘সে এই মুহূর্তে আমাদের দলের অন্য যে কারওর চেয়ে ভালো।’

ওয়েস্ট রতন চিনতে ভুল করেননি। ব্রায়ান্ট লেকার্সের হারানো গৌরব ফিরিয়ে এনে আস্থার প্রতিদান দেন। শুরুতে ব্রায়ান্ট পাশে পেয়েছিলেন এনবিএ হল অব ফেম শাকিল ও’নিলকে। দুজনে মিলে ১৯৯৯-২০০০ থেকে ২০০১-০২ মৌসুমে টানা তিনটি শিরোপা এনে দেন লেকার্সকে। এরপর ২০০৮-০৯ ও ২০০৯-১০ মৌসুমেও এনবিএ জেতে লেকার্স। পাঁচটি শিরোপাতেই সবচেয়ে বড় অবদান রেখে বাস্কেটবল ইতিহাসে নিজের নাম কী দারুণভাবেই না লিখে রাখেন ব্রায়ান্ট।

২০০৬ সালে টরন্টো র‍্যাপটর্সের বিপক্ষে এক ম্যাচে ৮১ পয়েন্ট পেয়েছিলেন ব্রায়ান্ট। যা কিনা এনবিএ ইতিহাসে এক ম্যাচে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেই ব্রায়ান্ট ২০০৬ সালের এপ্রিলে নিজের বিদায়ী ম্যাচেও ইয়ুটা জ্যাজের বিপক্ষে পান ৬০ পয়েন্ট। ব্রায়ান্টের অবসরের পর তাঁর পরা দুটি জার্সি নম্বর ৮ ও ২৪ কেও উঠিয়ে রাখে লেকার্স। ২০ বছরের ক্যারিয়ারে প্রথম ১০ বছরে ৮ ও শেষ ১০ বছরে ২৪ নম্বর জার্সি পড়েছেন ব্রায়ান্ট।

দুবার মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট পাওয়া ব্রায়ান্ট এনবিএ ইতিহাসে চতুর্থ সর্বোচ্চ স্কোরার। এনবিএর নিয়মিত মৌসুমে ৩৩৬৪৩ পয়েন্ট তাঁর। তাঁর ওপরে আছেন করিম আবদুল জব্বার (৩৮৩৮৭), কার্ল ম্যালন (৩৬৯২৮) ও লেব্রন জেমস (৩৩৬৫৫)।

লেব্রন জেমস তো গত শনিবারই পেরিয়েছেন ব্রায়ান্টকে। তাঁকে পেছনে ফেলার পর সঙ্গে সঙ্গে টুইট করেছিলেন ব্রায়ান্ট, লিখেছিলেন, ‘খেলাটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কিং জেমস। তোমাকে সম্মান জানাতেই হয় ভাই।’

এনবিএতে ব্রায়ান্টের প্রথম কোচ ডেল হ্যারিস একবার বলেছিলেন সেরা হওয়াটাকেই একমাত্র ধ্যানজ্ঞান বানিয়েছিলেন তাঁর শিষ্য, ‘কোবি নাইট লাইফ বা অন্য কিছুকে পরোয়া করত না। তার উৎসাহ ছিল শুধু একটি বিষয়ে, যতটা পারা যায় সেরা হওয়া। সে মাইকেল জর্ডানকে (বাস্কেটবল কিংবদন্তি) চ্যালেঞ্জ জানাতে চাইত।’

খেলা ছাড়ার পর নিজেই বাস্কেটবল দল গঠন করেন ব্রায়ান্ট। তাঁর মেজ মেয়ে জিয়ান্নি খেলত সেই দলে। ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টি থেকে ব্যক্তিগত হেলিকপ্টারে করে মেয়েকে খেলতে নিতে বেড়িয়েছিলেন কাল। সেই যাত্রা আর শেষ হলো না।

২০১৬ সালে ‘ডিয়ার বাস্কেটবল’ নামে একটি কবিতা লিখে অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন ব্রায়ান্ট। যে কবিতা নিয়ে বানানো স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ২০১৭ সালে অস্কার জেতায় তাঁকে। সেই কবিতায় ব্রায়ান্ট লিখেছিলেন,
‘আমি তোমার প্রেমে পড়েছিলাম।
এতটাই যে আমি আমার সবকিছু তোমাকে সমর্পণ করেছি—
আমার দেহ ও মন থেকে
চেতনা ও আত্মার সব। ’

‘তোমাকে সব সময় ভালোবাসব,
কোবি’—কবিতাটি শেষ করেছিলেন এভাবেই।

আমরাও বলি কোবি ‘তোমাকে সব সময় ভালোবাসব’।