'কেউই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে সন্তুষ্ট থাকতে চাইনি'

আরেকটি উইকেট রাকিবের (মাঝে)। ৫ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধসিয়ে দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। ছবি: আইসিসি।
আরেকটি উইকেট রাকিবের (মাঝে)। ৫ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ধসিয়ে দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার। ছবি: আইসিসি।

উইকেট পড়ে নিয়ে দারুণ পরিমিত ব্যাটিং, আর স্পিনারদের চোখধাঁধানো নিয়ন্ত্রণ—স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার বিশ্লেষণে প্রথমে চোখ পড়বে এ দুটি দিকেই। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলীর কাছ থেকে জানা গেল আরেকটি কারণও। জয়ের উদগ্র বাসনা। দলের কেউই যে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই তৃপ্তির ঢেকুর তোলেননি!

চার বছর আগে ঘরের মাটিতে আয়োজিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ, এবার দ্বিতীয়বার। উঠেছে কী দাপুটে জয় নিয়েই! স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৬২ রানের লক্ষ্য দেওয়ার পর পচেফস্ট্রুমে প্রোটিয়ারা দেখেছে বাংলাদেশি দুই স্পিনারের দাপট। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৫৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।

এমন দাপুটে জয়, তা-ও ম্যাচের কোনো মুহূর্তেই মনে হয়নি বাংলাদেশ একটুও হারের শঙ্কা নিয়ে ভাবছে! রহস্যটা কী—ম্যাচের পর ধারাভাষ্যকারের সে প্রশ্নেই বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলীর কণ্ঠে দলের জয়ের চারিত্রিক দৃঢ়তার জয়গান, ‘এটা দৃঢ়তার ব্যাপার। একেকজনের চারিত্রিক গড়ন একেক রকম হয়। আমাদের কেউই কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই সন্তুষ্ট থাকতে চাইনি।’

বাংলাদেশ সন্তুষ্ট থাকতে চাইছে না সেমিফাইনালে উঠেও। চার বছর আগে সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে গিয়েছিলেন মিরাজরা, এবার আরেক ধাপ বাড়তি যাওয়ার স্বপ্ন আকবরদের চোখে। দলের দৃঢ়তার কথা বলতে গিয়েই বাংলাদেশ অধিনায়কের কথা, ‘আমরা সবাই ফাইনাল খেলতে চাই।’

সে স্বপ্নের পথে সাহস জোগাবে হয়তো আজকের পারফরম্যান্সই। আকবরের চোখে যে পারফরম্যান্স ‘পরিপূর্ণ!’ ব্যাট হাতে ওপেনার তানজিদ হাসানের (৮৪ বলে ৮০) এনে দেওয়া দারুণ শুরুর পরও একটু পথ হারিয়েছিল বটে বাংলাদেশ—১৩০ রানেই চলে গিয়েছিল ৩ উইকেট। কিন্তু চতুর্থ উইকেটে তৌহিদ হৃদয় (৭৩ বলে ৫১) ও শাহাদাত হোসেন (৭৬ বলে অপরাজিত ৭৪) মিলে গড়েন ১১৬ বলে ১০২ রানের দারুণ জুটি।

টুর্নামেন্টটা লক্ষ্য করে ৩ জানুয়ারি থেকেই পচেফস্ট্রুমে তাঁবু পোঁতা বাংলাদেশ পচেফস্ট্রুমের উইকেটটাকে তো ভালোই চেনে, এই উইকেটে কী করতে হবে, তা ভালোই জানা দলটার। অধিনায়ক আকবরও ম্যাচের পর বলছিলেন, ‘২৪০-এর আশপাশে যে কোনো রানই এখানে ভালো কিছু। পাঁচ বোলার নিয়ে ২৪০ বা এর বেশি আমরা ডিফেন্ড করতে পারতাম বলে বিশ্বাস ছিল।’ সে লক্ষ্যে প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের এমন ব্যাটিংয়ের প্রশংসাও থাকল আকবরের কণ্ঠে, ‘আমাদের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান দারুণ ব্যাটিং করেছে। উইকেট হাতে রেখেছে। শেষ দশ ওভারে সেটার সুবিধা নিতে পেরেছি আমরা।’

এরপর বোলিংয়ের পালা। মূলত দুই বাঁহাতি স্পিনারের ঝলক দেখানোর পালা। রাকিবুল হাসান ৯.৩ ওভারে মাত্র ১৯ রানে নিয়েছেন ৫ উইকেট। আরেক স্পিনার হাসান মুরাদ উইকেট পাননি, কিন্তু আরেক প্রান্তে ৯ ওভারে মাত্র ২৬ রান দিয়ে চাপে রেখেছেন দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানদের।

‘কে জিতিয়েছে ম্যাচ—ব্যাটসম্যান না বোলাররা?’—ম্যাচের পর এমন প্রশ্নে তাই আকবরের প্রশংসা ব্যাটসম্যান-বোলার দুই পক্ষকেই, ‘ব্যাটসম্যানদের কৃতিত্ব দিতেই হবে আমাকে। ২৬০-এর বেশি রান করেছে ওরা। এরপর আমাদের স্পিনাররা অসাধারণ বোলিং করেছে। রাকিব পাঁচ উইকেট নিয়েছে, মুরাদও দারুণ বোলিং করেছে। পরিপূর্ণ একটা পারফরম্যান্সই এটা।’

এমন পরিপূর্ণ পারফরম্যান্স সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এলে হয়তো প্রথম ফাইনালের স্বপ্নও পূরণ হয়ে যাবে বাংলাদেশের!