'বস আগে জীবন, আমি বাংলাদেশে যাব'

চীনে টেনিস কোচ হিসেবে কাজ করছেন প্রায় ২৫ জন বাংলাদেশি। করোনাভাইরাস আতঙ্কে বেশির ভাগই ফিরে এসেছেন দেশে।
চীনে মাস্ক পড়ে সতর্ক অবস্থায় বাংলাদেশের টেনিস কোচ নিয়ামুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত
চীনে মাস্ক পড়ে সতর্ক অবস্থায় বাংলাদেশের টেনিস কোচ নিয়ামুল হাসান। ছবি: সংগৃহীত

‘বস, আগে জীবন। আমি বাংলাদেশে ফিরে যাব’, এই কথাতেই মন গলানো গেল চীনা মালিককে। ব্যস ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাবেক টেনিস খেলোয়াড় মাকসুদুল করিম উঠে পড়লেন থাইল্যান্ডগামী বিমানে। সেখান থেকে ঢাকায়।

২০১৮ সাল থেকে চীনের সাংহাই শহরের শিয়াংশিয়াং টেনিস একাডেমিতে কোচের দায়িত্ব পালন করছেন মাকসুদুল। সাংহাই নগরীতে করোনাভাইরাস আতঙ্ক গ্রাস করলে আতঙ্কিত হয়ে একাডেমির মালিকের কাছে ছুটির আবেদন করেন। প্রথম কয়েক দফায় মঞ্জুর না হওয়ায়, উপায়ান্তর না পেয়ে শুরুতে বলা ‘জীবন বাঁচানোর’ কথা শুনিয়ে আদায় করে নিয়েছেন ছুটি।

গত বছর ঈদুল আযহাতেও ছুটি কাটাতে দেশে এসেছিলেন। প্রায় ৮ মাসের ব্যবধানে তাঁর এবার দেশে ফেরার মধ্যে ছুটির আমেজ না থাকলেও আছে স্বস্তি, ‘ওখানকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ হয়ে উঠেছিল। দোকান পাট সব বন্ধ। মানুষ বাইরে বের হয় না। আমার খাবারও শেষ হয়ে আসছিল। ‘বস’ এর কাছে ছুটি চাইলে তিনি না করলেন। পরে বসকে বললাম “আগে জীবন। আমি বাংলাদেশে যাব।’ সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি গুড লাক জানিয়ে ছুটি দিয়েছেন।’ পরিস্থিতি ভালো না হওয়া পর্যন্ত সাংহাইতে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই তাঁর।

চীনের বিভিন্ন একাডেমিতে কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় ২৫ জন বাংলাদেশি সাবেক টেনিস খেলোয়াড়। বেইজিং, সাংহাই, গুয়াংজুর উংদুন, ডংজুয়ানে বসবাস করেন তাঁরা। উংদুনে অবস্থানকারীরা ছাড়া প্রায় সবাই বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন বলে জানালেন মাকসুদুল। কথা হলো জাতীয় দলের সাবেক টেনিস খেলোয়াড় শাহনেওয়াজ আহমেদের সঙ্গে। সাংহাই থেকে জরুরি ভিত্তিতে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। এখন তাঁর একাডেমির সঙ্গে আছেন নেপালে।

২০১৭ সালে চীনে পাড়ি জমানো শাহনেওয়াজ এখন সাংহাইয়ে তিনটি একাডেমির মালিক। শেষ ১৯ ডিসেম্বর দেশে এসে ছুটি কাটিয়ে আবার ২৬ তারিখ ফিরে গিয়েছিলেন সাংহাই। কিন্তু সেখানকার অবস্থা বেগতিক দেখে ২৮ তারিখেই আবার বাংলাদেশে ফেরা। তাঁর থিংক শর্টস একাডেমি একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করার জন্য বর্তমানে নেপালে অবস্থান করছে। শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকেই যোগ দিয়েছেন সে টুর্নামেন্টে। খেলা শেষে আবার ঢাকায় ফিরে আসার কথা জানালেন শাহনেওয়াজ, ‘৭ দিনের ছুটি কাটিয়ে সাংহাই ফিরেছিলাম। ফিরে শুনি করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কথা। তাই আবার ২৮ তারিখেই ঢাকায় ফিরে আসি। এখন আমার একাডেমি নেপালে খেলতে এসেছে। ঢাকা থেকে ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। এখান থেকে দেশে ফিরে যাব। স্টুডেন্টদের ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছি।’

বেইজিংয়ে থাকেন আরেক টেনিস সাবেক খেলোয়াড় আখতার হোসেন। দুই সপ্তাহ আগে বাবার চিকিৎসার জন্য এসেছেন ভারতে। কলকাতা থেকেই আবার ফিরে যাওয়ার কথা ছিল বেইজিং। কিন্তু এখন আর একাডেমিতে না গিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসছেন বাংলাদেশের জার্সিতে ডেভিস কাপ খেলা আখতার, ‘বাবার চিকিৎসার জন্য সপ্তাহখানেক আগে ভারতে এসেছি। এখান থেকেই বেইজিং ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য এখন আর সেখানে যাচ্ছি না। বাবার চিকিৎসা শেষে বাংলাদেশে ফিরে আসব।’

তবে দেশে ফেরেননি বা ফেরার চিন্তাও নেই, পাওয়া গেল চীনে অবস্থান করা এমন বাংলাদেশিও। গুয়াংজু প্রদেশের দুঙ্গনে গ্যালপ একাডেমিতে কোচ হিসেবে আছেন নাইমুল ইসলাম। সেখান তাঁর সঙ্গে এখনো আছেন আরও সাত বাংলাদেশি। সেখানকার পরিস্থিতি এখনো সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে দেশে ফেরার কোনো ভাবনা নেই বলে নিয়ামুলদের, ‘আমাদের এখানে করোনাভাইরাসের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তুলনামূলক কম হলেও দোকানপাট খোলা থাকে। যদিও একাডেমির ছুটি চলছে। তবে আমরা দেশে ফেরার মতো কিছু ভাবিনি।’