কোহলির যে গুণ ভারতকে অপ্রতিরোধ্য বানিয়েছে

অধিনায়ক কোহলি নিত্যনতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন ভারতকে। ছবি: এএফপি
অধিনায়ক কোহলি নিত্যনতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন ভারতকে। ছবি: এএফপি
>

বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম ধারাবাহিক ক্রিকেট দল ভারত। টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে প্রথম, ওয়ানডেতে দ্বিতীয় ও টি-টোয়েন্টির চতুর্থ দলটা যেকোনো টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের জন্য ফেবারিট থাকে এখন। দেশ হোক বা বিদেশ, ফর্মের পার্থক্য হয় সামান্যই। ভারতের এই সাফল্যের রেসিপির পেছনে মূল কারণ কী? সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল বের করেছেন সেটা

কী ব্যাটিং, কী অধিনায়কত্ব—সব দিকেই প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি। টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে ভারত তো বরাবরই সফল দল, সে সাফল্যটাকে কোহলি এসে অনূদিত করেছেন টেস্টেও। আর এ ক্ষেত্রে কোহলির ব্যক্তিত্বের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রভাব ফেলেছে সবচেয়ে বেশি। আর সেটা তাঁর আবেগ। নিরপেক্ষ ও নিখুঁত বিশ্লেষণের জন্য বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেলের ধারণা অন্তত তাই।

খেলোয়াড় হিসেবে কোহলি বরাবরই আবেগপ্রবণ। স্টিভ ওয়াহ, স্টিফেন ফ্লেমিং কিংবা কোহলির পূর্বসূরি মহেন্দ্র সিং ধোনি—প্রথাগত অধিনায়ক বলতে যেমন ঠান্ডা মাথার, বরফশীতল মস্তিষ্কসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের ছবি এঁকে গেছেন, সে ছবির সঙ্গে কোহলি ঠিক যান না। তাই কোহলিকে যখন পাকাপাকিভাবে ভারতের অধিনায়কত্ব দেওয়া হলো, শুরু হয়েছিল সমালোচনা। এই ইয়ান চ্যাপেলই তখন বলেছিলেন, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা, অতিরিক্ত আগ্রাসন কোহলির নেতৃত্বে প্রভাব ফেলবে; ভুগবে ভারত। কিন্তু সেটা হয়নি। ভারতের উন্নতি হয়েছে আরও। তা দেখে নিজের অবস্থান থেকে সরে এসেছেন চ্যাপেলদের বড়জন। এখন তিনি বলছেন, অপ্রতিরোধ্য ও আগ্রাসী ভারতের আসল টোটকাটা লুকিয়ে আছে কোহলির আবেগের মাঝেই।

কোহলির অধিনায়কত্ব নিয়ে নিজে যে আগে কতটা ভুল ছিলেন, সেটাই স্বীকার করেছেন চ্যাপেল, ‘কোহলি যখন শুরুতে অধিনায়ক হয়েছিল, বিশেষ করে টেস্ট দলের, আমার মনে হয়েছিল ওর অতিরিক্ত আবেগ নেতৃত্বের ওপরে প্রভাব ফেলবে, ভারতের ক্ষতি করবে। কিন্তু ও নিশ্চিত করেছে, আবেগ প্রদর্শনে যেন বাড়াবাড়ি না হয়। নিয়ন্ত্রিত এই আবেগই ওকে অধিনায়ক হিসেবে সাহায্য করছে। ভারতকে সাহায্য করছে। যে কারণে সে এমন একটা দল তৈরি করতে পেরেছে, যারা বিদেশেও সহজে জিতছে।

অধিনায়ক কোহলি তো বটেই, ব্যাটসম্যান কোহলির প্রশংসাতেও পঞ্চমুখ চ্যাপেল, ‘কোহলির নেতৃত্বে ভারত ধারাবাহিক ভাবে ভালো খেলছে। তিন ধরনের ক্রিকেটে ওরা ভিন্ন ভিন্ন ক্রিকেটার খেলালেও সেটা তাদের ফর্মের ওপর প্রভাব ফেলছে না। টানা জিতে চলেছে। কোহলির অধীনে ভারত বহুমুখী ক্ষমতার অধিকারী হয়ে উঠেছে। বিদেশেও দাপট দেখাচ্ছে। কীভাবে কোন ম্যাচে খেলা উচিত, কোন ম্যাচ জেতার জন্য কীভাবে কতটুকু পরিকল্পনা করা উচিত, সেটা কোহলি জানে। খেলা নিয়ে ওর পরিষ্কার একটা ধারণা আছে। টেস্টের ব্যাটিংয়ে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে, তার জন্য সীমিত ওভারের ম্যাচে বিশেষ, বিশেষ শট খেলে কোহলি।’

অধিনায়ক হিসেবে কোহলি দলকে কতটা উজ্জীবিত করেন, কীভাবে সেটা করেন তারও একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন চ্যাপেল, ‘কোহলির কথা শুনলে বোঝা যায়, খেলাটা সম্পর্কে ওর দৃষ্টিভঙ্গি কতটা পরিষ্কার। ও কতটা ভাবে খেলাটা নিয়ে। দলের সবার মাঝে জয়ের মানসিকতা তৈরি করে দেওয়ার জন্য অধিনায়ক কোহলিকে কৃতিত্ব দিতেই হবে। একজন অধিনায়ক যখন ধারাবাহিকভাবে ম্যাচ জেতায়, যখন হারের মুখ থেকে জয় ছিনিয়ে আনে, তখন সবাই বিশ্বাস করে যে, দলকে যে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সে সাধারণ কেউ নয়। সে জাদুকর। কোহলি নেতা হিসেবেও সবার কাছ থেকে সম্মান পায়। দলের সবাই ওকে মানে। ওর কাছ থেকে প্রেরণা খোঁজে। দলের ক্রিকেটাররা বিশ্বাস করে, কোহলি নেতৃত্বে থাকলে ভালো কিছু হবে। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের মান বাড়ানো, ফিল্ডিং ভালো করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া, এই সব ব্যাপারগুলো ভারতকে করেছে অপ্রতিরোধ্য।’