'কে কী বলল, এসব নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না'

মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো

দলের সব খেলোয়াড়ের জন্যই বিসিবির সুযোগটা উন্মুক্ত ছিল। চাইলে কেউ পাকিস্তান সফরে না-ও যেতে পারেন। পরিবারের অনুরোধে একমাত্র মুশফিকুর রহিমই সরে দাঁড়ান এই সফর থেকে। কিন্তু সরে দাঁড়িয়ে কি ভুলই করলেন! কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর এক মন্তব্যের কারণেই আসছে প্রশ্নটা। প্রথম আলোকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে কাল এসব নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন মুশফিক।

প্রশ্ন: পাকিস্তান সফর থেকে আপনি নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় এখন জিম্বাবুয়ে সিরিজের দলে আপনাকে নেবেন কি না, এ নিয়ে নাকি দোটানায় পড়ে গেছেন কোচ রাসেল ডমিঙ্গো। কীভাবে দেখছেন বিষয়টাকে?
মুশফিকুর রহিম: আজ (গতকাল) আল্লাহর রহমতে ফিটনেস টেস্টে পাস করেছি। এখন চেষ্টা থাকবে বিসিএলে ভালো পারফর্ম করার। তারপর যদি নির্বাচকেরা মনে করেন আমাকে দলে দরকার, তাহলে আমি আছি। তার আগ পর্যন্ত আমি শুধু বিসিএলে মনোযোগ দিতে চাই।

প্রশ্ন: জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলার জন্য আপনার এখনো কিছু প্রমাণ করার আছে, এমন ধারণার সঙ্গে কতটা একমত?
মুশফিক: ১৪ বছর ধরে তো ফিটনেস আর পারফরম্যান্স দিয়েই খেললাম। ইনশা আল্লাহ এভাবেই খেলে যাব। আমি সবকিছুই খুব ইতিবাচকভাবে দেখি। আল্লাহ যদি চান, পারফরম্যান্সই আমার হয়ে কথা বলবে।

প্রশ্ন: কিন্তু একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে আপনার আর কী প্রমাণ করার আছে?
মুশফিক: কিছু হয়তো আছে। হয়তো এই ১৪ বছর ধরে ব্যাট হাতে ছোটখাটো যা পারফর্ম করেছি, তা নিজেকে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আরও কিছু করতে হবে। আমি আত্মবিশ্বাসী, ইনশা আল্লাহ আবারও পারফর্ম করেই নিজেকে প্রমাণ করব। আগেও কথাটা বলেছি, আমার সব সময়ই চিন্তা থাকে পরের সিরিজ বা ম্যাচে কীভাবে আমি একাদশে থাকতে পারব। এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করি। সেভাবে নিজেকে ফিট রাখতে এবং পারফর্ম করতে চেষ্টা করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

প্রশ্ন: কিন্তু আপনার পরিশ্রম, একাগ্রতা, দলের জন্য অবদান, ধারাবাহিক পারফরম্যান্স...সব মিলিয়ে কি মনে হয় না, এ মুহূর্তে জাতীয় দলে আপনি অটোমেটিক চয়েজ হতে পারেন?
মুশফিক: না, আমি কখনোই এটা ভাবি না। অটোমেটিক চয়েজ তো অনেক পরের ব্যাপার, আমি নিজেকে খুব সাধারণ একজন খেলোয়াড়ই ভাবি। আমার মতে একমাত্র তামিম আর সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ দলে কেউই অটোমেটিক চয়েজ নয়।

প্রশ্ন: কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কথাটাকে কি তাহলে প্রেরণা হিসেবেই ধরে নিচ্ছেন?
মুশফিক: কে কী বলল আর ভবিষ্যতে কে কী বলবে, এসব নিয়ে পড়ে থাকলে তো আমার চলবে না। আমার অনেক দায়িত্ব আছে। আমার একটাই চিন্তা, ভবিষ্যতে যখনই দলে সুযোগ পাব, দেশকে যেন ম্যাচ জেতাতে পারি। দলকে আমি কীভাবে সাফল্য এনে দিতে পারি, কীভাবে জেতাতে পারি...আমি এগুলো নিয়েই কাজ করতে এবং ভাবতে পছন্দ করি।

প্রশ্ন: পারিবারিক কারণে পাকিস্তান সফর থেকে সরে দাঁড়ালেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেক নেতিবাচক কথা হয়েছে। কী বলবেন এ নিয়ে?
মুশফিক: দেখুন, বিসিবি যেহেতু আমাদের একটা অপশন দিয়েছিল যে যদি কারও সেখানে যেতে সমস্যা থাকে তাহলে সে যেন সেটা বিসিবিকে জানায়। আমি বিসিবিকে সেই ভারত সফরের সময়ই বলেছি পাকিস্তান সফরে না যাওয়ার ব্যাপারে। একই সঙ্গে কোচকেও বলেছি যে আমার পরিবার এটা নিয়ে চিন্তিত। তারা চায় না আমি পাকিস্তানে যাই। ব্যাপারটা এটুকুই।

প্রশ্ন: কাল বাংলাদেশ দল রাওয়ালপিন্ডি গেল পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে। আপনার কি মনে হয় না পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির চেয়েও কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে টেস্ট সিরিজ?
মুশফিক: আশা তো করি আমাদের দল ভালো ক্রিকেট খেলবে, ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলবে। আমার বিশ্বাস ব্যাটিংটা জ্বলে উঠলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে হ্যাঁ, টি-টোয়েন্টির চেয়ে ওদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজটা অবশ্যই বড় পরীক্ষা নেবে।

প্রশ্ন: বিপিএলে এবার দারুণ খেললেন। বিশেষ কোনো প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেমেছিলেন নাকি!
মুশফিক: আল্লাহ সহায় ছিল, তাই ভালো খেলেছি। ভালো খেলার চেষ্টা তো সব সময়ই থাকে। তবে এবারের বিপিএলে বিশেষভাবে লক্ষ্য ছিল, দলকে চ্যাম্পিয়ন করানো আর একটা ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দুটির একটিও হয়নি।

প্রশ্ন: ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে নতুন কীর্তি গড়লেন তামিম ইকবাল। তাঁর ব্যাপারে নতুন কী বলবেন?
মুশফিক: মাশা আল্লাহ! তামিম আমাদের সেরা ব্যাটসম্যান। আগেও সে এটা অনেকবার প্রমাণ করেছে। এবার আবার করল। তার মতো একজনের বন্ধু, সতীর্থ হতে পেরে আমি গর্বিত। আমাদের জন্য নতুন একটা লক্ষ্য বেঁধে দিল তামিম। দেখা যাক...আমি এটা অতিক্রম করতে পারি কি না।