দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের কলঙ্ক ফাঁস ফিল্যান্ডারের

অবসরের পর মুখ খুলেছেন ফিল্যান্ডার। এএফপি ফাইল ছবি
অবসরের পর মুখ খুলেছেন ফিল্যান্ডার। এএফপি ফাইল ছবি

দক্ষিণ আফ্রিকা ও বিশ্বকাপ ফাইনাল যেন বিপরীতমুখী দুই শব্দ। এ নিয়ে চারটি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছে দলটি। এর মাঝে তিনবার তো ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে বাদ পড়তে হয়েছে তাদের। এখন জানা যাচ্ছে, ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হারের দায় ভাগ্যের নয়, দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের। সে ম্যাচ খেলা ভারনন ফিল্যান্ডারই দাবি করেছেন, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেমিফাইনালে যে দল খেলানো হয়েছিল সেটা পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়নি।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে অবসর নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসার। সিরিজের আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে তাঁর অবসরের ঘোষণা বিস্ময় জাগিয়েছিল। দল যেখানে পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন ফিল্যান্ডারের মতো অভিজ্ঞদের উপস্থিতি বেশি দরকার হয়। আর ফিল্যান্ডার কি না মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন। এতে ক্লান্তি বা চোট যে কোনো ভূমিকা রাখেনি তার প্রমাণ সমারসেটের সঙ্গে কল প্যাক চুক্তি করে কাউন্টিতে চলে যাওয়া। ফিল্যান্ডার জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের বিতর্কিত বর্ণবৈষম্য নীতিই তাঁকে অবসর নিতে বাধ্য করেছে।

‘একজন খেলোয়াড় হিসেবে আপনার একপর্যায়ে মনে হবেই, আর সম্ভব না। আগের বোর্ড শুধু নিজেদের কথা চিন্তা করত, খেলোয়াড়দের নিয়ে কোনো ভাবনাই ছিল না তাদের মাঝে। বহুদিন ধরে ভুল সিদ্ধান্তের বলি হওয়ার পর আমাকে নিজের ভালোটা বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তখনই আমি অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার বয়স এখন ৩৫। সামনে মোটামুটি ভালো একটা ভবিষ্যৎ পড়ে আছে। যদি আমাদের ক্রিকেট প্রশাসনে এত ঝামেলা না থাকত তাহলে আমি আরও কিছুদিন খেলার কথা চিন্তা করতাম’—র‍্যাপোর্ট নামের এক সংবাদপত্রকে বলছেন ফিল্যান্ডার।

সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ বোর্ডের দায়িত্ব নেওয়ার পর আবার আশা খুঁজে পাচ্ছেন ফিল্যান্ডার। সেই সঙ্গে জ্যাক ক্যালিস ও ডেল স্টেইনের বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হওয়াকে ইতিবাচক মনে হচ্ছে ফিল্যান্ডারের কাছে, ‘বোর্ড এখন আগের চেয়ে বেশি যোগ্য। আশা করি প্রশাসন ও খেলার মাঠে ঘুরে দাঁড়াব।’

ফিল্যান্ডার এরপরই আসল চমক দিয়েছেন। জানিয়েছেন দলে সাদা ও কালো খেলোয়াড়দের বণ্টন নিয়ে এমনই দর-কষাকষি হয় যে, বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার সম্ভাবনাকেও ঝুঁকিতে ফেলে দেয় বোর্ড। দল চাইছিল অপরিবর্তিত একাদশ নামাতে, যাতে ফর্মে থাকা কাইল অ্যাবট খেলতে পারেন। কিন্তু বোর্ড চারজন অশ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড় নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর এ কারণে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ার পরও নামানো হয় ফিল্যান্ডারকে। বিশ্বকাপে ৪ ম্যাচে ১৪.৪৪ গড়ে ৯ উইকেট পাওয়া অ্যাবট বসেছিলেন মহাগুরুত্বপূর্ণ সেই সেমিফাইনালে।

এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ফিল্যান্ডার নিজেই করেছিলেন, ‘আমি সরাসরি কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে বলেছিলাম সেরা খেলোয়াড়েরই এ ম্যাচ খেলা উচিত। কিন্তু সে বলল, তুমিই আজকের সেরা খেলোয়াড়, তুমিই খেলছ। কিন্তু এটা পরিষ্কার তারা এ ব্যাপারে আমার এবং কাইলের সঙ্গে সত্য কথা বলেনি। অবশ্যই দরজার আড়ালে অন্য কিছু হচ্ছিল।’ এ ঘটনায় কাইল অ্যাবটের সঙ্গে সম্পর্কে নাকি ফাটলও ধরেছিল ফিল্যান্ডারের, ‘যা হয়েছিল সেটা আমাদের সম্পর্ক খারাপ করে দিয়েছিল।’ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এক বল বাকি থাকতে হেরেছিল সেদিন দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৩ ওভারে ২৯৯ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছিল নিউজিল্যান্ড। ৮ ওভারে ৫২ রান দিয়ে উইকেট শূন্য ছিলেন ফিল্যান্ডার।

বিশ্বকাপের দুই বছর পরই যোগ্যতা থাকার পরও বারবার দল থেকে ছিটকে পড়া আর মেনে নিতে পারেননি অ্যাবট। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের মাঝপথে কল প্যাক চুক্তি স্বাক্ষর করে চলে গেছেন কাউন্টিতে। গায়ের বর্ণ বিবেচনা করে দল নির্বাচনের কারণে অনেক ভালো খেলোয়াড়ই এভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের মায়া ছেড়ে ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে চলে যাচ্ছেন প্রতি বছর।