'ফাইনাল হারলে জীবন চলে যাবে না'

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক আকবর আলী। ফাইল ছবি
>

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে আজ হারাতে পারলেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতবে বাংলাদেশ। অসাধারণ নেতৃত্বগুণে দলটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আকবর আলী

‘আপনার দলের সাফল্যের রহস্য কী?’

নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করার রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপে গল্পের ছলে প্রশ্নটি করা হয়েছিল বাংলাদেশ অধিনায়ক আকবর আলীকে। জবাবটা তিনি দিলেন এক কথায়, ‘সাধারণ, ক্রিকেট খেলেই।’

ক্রিকেটে অধিনায়কের গুরুত্ব ফুটবলে কোচের মতো। তাঁর আঙুলের ইশারায় নির্ভর করে দলের ভালো-মন্দ। নেতা যোগ্য হলে দল কত দূর যেতে পারে, তা এর আগে অনেকবারই দেখেছে বিশ্ব ক্রিকেট। তবে আকবরের কথা অনুযায়ী, সাধারণ খেলা খেলে দল যে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের ফাইনালে আসেনি, তা কে না বোঝে! তাই অধিনায়ক হিসেবে দলকে কীভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তা সবিস্তারে জানানো অনুরোধ জানানো হলো। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা (৯৩৮০ কিলোমিটার) থেকে আকবরের জবাব, ‘অধিনায়ক হিসেবে আমি সব সময় বলি, দিন শেষে এটা শুধুই একটা খেলা। এই খেলায় হেরে গেলে আমাদের জীবন চলে যাবে না। তবে জিতলে কিছু পাওয়ার সুযোগ আছে।’

নেতৃত্ব দেওয়ার কী দুর্দান্ত দর্শন! এই অধিনায়ক যেন অন্য ধাতুতে গড়া। ধ্যানজ্ঞান ক্রিকেট হলেও কম যান না মাঠের বাইরেও। খেলার ফাঁকে এসএসসিতে মানবিক শাখা থেকে পেয়েছিলেন এ প্লাস। এমন ছাত্রের হাতেই দেশের যুব ক্রিকেটের নেতৃত্ব।

ভালো ক্রিকেটার হওয়ার জন্য আকবরের কত পরিশ্রম। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ছুটতে হয় মাঠে। অনুশীলন শেষে হোস্টেলে ফিরে সময়মতো খাবার খেয়েই ক্লাসে হাজিরা দেওয়া। কিন্তু সকালে অমন পরিশ্রমের পর কি পড়ালেখা মাথায় ঢোকে! দুচোখ ভরা স্বপ্ন এবং তা বাস্তবে অনূদিত করার ধনুর্ভঙ্গ পণ থাকলে যে এটাও সম্ভব, তা প্রমাণ করেছেন রংপুরের এই ছেলে।

বড় ভাই মুরাদ হোসেনকে দেখে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা জাগে আকবরের। অঞ্জন সরকারের হাত ধরে রংপুর জিলা স্কুলের মাঠে হয়েছিল ব্যাটে-বলে হাতেখড়ি। তত দিনে আকবরের কানে পৌঁছেছে নিজ জেলা ও বিকেএসপির ছাত্র জাতীয় দলের দুই ক্রিকেটার সোহরাওয়ার্দী শুভ ও নাসির হোসেনের নাম। ক্রিকেটার হওয়ার প্রেরণাটা তাই চোখের সামনেই ছিল। জেলাপর্যায়ে বাছাই পরীক্ষায় নাম লিখিয়ে বিকেএসপিতে ভর্তি হলেন ২০১২ সালে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের আগে খেলেছেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলেও।

৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আকবর উইকেটরক্ষক। ব্যাটিং-সামর্থ্যও ভালো। দীর্ঘদেহী এ ক্রিকেটার সম্ভবত পেসার হলে আরও ভালো করতেন, এমন ভেবে থাকেন অনেকে। আকবর কিন্তু উইকেটরক্ষকই হতে চেয়েছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমার মেজ ভাইয়ের পরামর্শেই উইকেটরক্ষক হওয়া।’

দেশের বাইরে এবি ডি ভিলিয়ার্স ও জস বাটলার আকবরের পছন্দ। দেশে সাকিব আল হাসান। বিকেএসপির বড় ভাই ও জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার সাকিবকে পছন্দ করার কারণও বেশ প্রশংসনীয়। আবেগ দিয়ে ক্রিকেট খেলেন না নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডার। তবে তাঁর মিলটা বেশি পাওয়া যায় মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে। দুজনই বিকেএসপির ছাত্র, উইকেটরক্ষক, মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও দুজনেরই আছে অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা। আরও একটা বড় মিল আছে। এসএসসিতে এ প্লাস পেয়েছেন দুজনই। প্রায় সবকিছুই কাকতালীয়ভাবে মিলে গেলেও একটি চ্যালেঞ্জ এখনো বাকি। মুশফিকের মতো জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক হওয়া, নেতৃত্ব দেওয়াও।

তবে একটা জায়গায় কিন্তু মুশফিককে ছাপিয়ে গিয়েছেন আকবর; ২০০৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে মুশফিকের নেতৃত্বে দুর্দান্ত এক দল নিয়েও কোয়ার্টার ফাইনালে থেমেছিল বাংলাদেশ। এদিকে আকবর মুশফিককে পেরিয়ে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসে। তাঁর নেতৃত্বে আজ প্রথমবার বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ বাংলাদেশের। পুরো দেশ আজ তাকিয়ে পচেফস্ট্রুমে। লড়াইটা হোক না যুবাদের, দল তো ভারত-বাংলাদেশ। আলাদা একটা চাপ, একটা উত্তেজনা থাকেই। তবে সে চাপে ভেঙে না পড়ে আকবর এবং তাঁর দল থাকুক নিজেদের দর্শনে—‘খেলায় হারলে জীবন চলে যাবে না।’