দেশের জন্য বিশ্বকাপ জিততে চায় যুবারা

আইসিসির ভিডিও প্রোগ্রামে প্রান্তিক নওরোজ। ছবি: আইসিসি
আইসিসির ভিডিও প্রোগ্রামে প্রান্তিক নওরোজ। ছবি: আইসিসি
>

আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে আজ ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ফাইনালের আগে আইসিসির ভিডিও প্রোগ্রামে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল নিয়ে কথা বললেন ব্যাটসম্যান প্রান্তিক নওরোজ

‘আমার ক্রিকেট দেখা এবং খেলার শুরু থেকেই বাংলাদেশের সমর্থকেরা সেরা। খেলার জন্য দল দুনিয়ার যে প্রান্তেই থাকুক না কেন, তাদের মাঠে দেখা যায়—যেমন এই দক্ষিণ আফ্রিকাতেও। আমি জানি, আরও অনেক সমর্থক আছেন, যাঁরা আমাদের অপেক্ষায়, আমাদের জন্য দোয়া করছেন, আমরা যেন চ্যাম্পিয়ন হতে পারি, সেটাই তাঁদের চাওয়া। সবার প্রতি অনুরোধ, আমাদের ওপর আস্থা রাখুন। এ পর্যন্ত (অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনাল) আসতে সমর্থকদের যে উষ্ণ ভালোবাসা আমরা পেয়েছি, সে জন্য কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ আমাদের পাশে থাকার জন্য। আপনাদের সমর্থন আমাদের প্রেরণার বড় উৎস। আমরা আপনাদের সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করব।’

কথাগুলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ওপেনার প্রান্তিক নওরোজ নাবিলের। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে কোনো ম্যাচে তিনি দলে সুযোগ পাননি। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে আইসিসির ভিডিও প্রোগ্রামে কথা বলেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে। ১৬ বছর বয়সী এ ক্রিকেটারের চোখেমুখে আত্মবিশ্বাসের ছটাই বলে দিচ্ছিল, যুবাদের এই দল মানসিকভাবে অনেক পরিণত। আজ ফাইনালে ভারতকে হারানোর সামর্থ্যটা তাদের ভালোই আছে।

ঐতিহাসিক এক ক্ষণেই দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট। জাতীয় দল যে সাফল্য পায়নি, যুবারা তা করে দেখিয়েছে। তবে চূড়ান্ত সাফল্য পেতে শেষ ধাপ জয় করা এখনো বাকি। হোক না ছোটদের বিশ্বকাপ, তবু তো ফাইনাল! আর এ ফাইনাল জিতলে তো বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়নই! তখন শিরোপায় অনূর্ধ্ব-১৯ লেখাটা হবে বড়দের বিশ্বকাপ জয়ের প্রেরণা। প্রান্তিক নওরোজ অবশ্য জানালেন, ফাইনালকে দল আলাদা কোনো ম্যাচ হিসেবে দেখছে না। অতিরিক্ত চাপ না নিতেই সম্ভবত এমন কৌশল। আকবর আলীর এই দল চাপ সামলাতে কত দক্ষ, তা বোঝা গেছে এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেই। বেশ কিছু ম্যাচে চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে এসেছে তারা।

আইসিসির ভিডিও প্রোগ্রামে এক সমর্থক তাই প্রশ্নটা করেছেন যুবা ক্রিকেটারদের—বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল মাথা ঠান্ডা রেখে কীভাবে চাপ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে?

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ছবি: ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ টুইটার পেজ
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে আজ মাঠে নামছে বাংলাদেশ। ছবি: ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ টুইটার পেজ

প্রান্তিকের জবাবটা ছিল ভীষণ গোছালো, ‘এর কারণ আমরা দুই বছর ধরেই একটা দল হিসেবে খেলছি। আমাদের অনেকেই অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ একসঙ্গে খেলেছে। দুই বছর সময় কম হতে পারে, কিন্তু যখন একটা দলের সবাই একসঙ্গে ক্যাম্প করে, এক জায়গায় থাকে, তখন সেটা পরিবার হয়ে যায়। এটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা বলতেই হবে। আমরা অনেক চাপের মুহূর্ত সামলেছি। প্রতিটি ম্যাচেই কিছু না কিছু শিখেছি। অনেকটাই পরীক্ষার মতো। প্রতিটি পরীক্ষায় প্রতিবারই নতুন প্রশ্ন—কখনো দ্রুত উইকেট হারিয়েছি, কখনো আবার ভালো শুরু পেয়েছি। এই দলে সবারই কিছু না কিছু ভূমিকা আছে। কেউ তারকা হওয়ার চেষ্টা করে না। খুব সাধারণ পরিকল্পনা, সতীর্থরা একে অপরের ওপর আস্থা রাখে। কেউ কাউকে দোষারোপ করে না। কেউ শূন্য মারতেই পারে, কিন্তু সেদিন যে ভালো খেলেছে, আমরা তাকে নিয়ে কথা বলি। তখন ওই খেলোয়াড়ও সমর্থন দেবে এবং ভাববে, আজ তুমি দেশকে জেতালে, কাল আমি জেতাব। এমন মানসিকতা দু-এক দিনে গড়ে ওঠেনি। মাঠ ও মাঠের বাইরে এটি দলীয় ঐক্যের ফসল। এখন আমরা যেকোনো পরিস্থিতি সামলাতে পারি। কারণ, দলের সবাই জানে, কেউ না কেউ পারফর্ম করবে।’

আজ তো পারফর্ম করারই দিন। দেশের জন্য নিজের সর্বস্ব নিংড়ে দেওয়ার দিন। চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তো উৎসবও ভীষণ জমাট হবে! প্রান্তিক সেসব কথায় গেলেন না। বুঝিয়ে দিলেন, চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে তখন সবাই এমনিতেই দেখবে। আপাতত উৎসবের বিষয় তোলা থাক। এর বদলে প্রান্তিক জানিয়ে দিলেন ক্রিকেটারদের মনের কথা, ‘খেলা শুরুর পর প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই স্বপ্ন থাকে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জেতা। এটাই প্রথম স্বপ্ন, দেশকে বিশ্বকাপ জেতানো। তারকা হব, এটা নয়। দেশের হয়ে কিছু করার আগে কেউ যদি ভেবে থাকে তারকা হবে, আমি মনে করি সে বেশি দূর যেতে পারবে না। তাই দেশাত্মবোধটাই সবার আগে। এই দলে ১৫ জনের সবাই শিরোপা জিততে চায়, দেশকে জেতাতে চায়। আমরা এমন কিছু উপহার দিতে চাই, ভবিষ্যতে সবাই যেন তা মনে রাখে।’