'বিশ্বকাপ জেতায় পায়ের ব্যথা শেষ'

দলের বিপদের মুহূর্তে দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন পারভেজ। ছবি: আইসিসি
দলের বিপদের মুহূর্তে দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন পারভেজ। ছবি: আইসিসি
গতকাল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে মাংসপেশিতে টান নিয়ে অনেকক্ষণ ব্যাটিং করেছেন পারভেজ হোসেন। বড় বিপদের সময়ে খুঁড়িয়ে ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের দ্বারপ্রান্তে


বাংলাদেশের ক্রিকেটে বীরত্ব মানেই ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তামিম ইকবালের ভাঙা হাত নিয়ে নামার স্মৃতি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে ইমরুল কায়েসেরও চোট নিয়ে পরাজয় এড়ানোর চেষ্টার কথা মনে আছে অনেকের। সে তালিকায় গতকাল রাতে যোগ হয়েছে আরেকটি নাম—পারভেজ হোসেন! তাঁর ৭৯ বলে ৭ চারে ৪৭ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে বিশ্বকাপের স্বাদ। অথচ দ্বিতীয় দফায় যখন ব্যাটিংয়ে নামছেন, ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন।

সেই ব্যথা অবশ্য ভুলে গেছেন পারভেজ। বিশ্বকাপ জেতার আনন্দের কাছে যে সব ব্যথাই এখন তুচ্ছ। জোহানেসবার্গ থেকে প্রথম আলোকে সে সুখবর জানিয়েছেন পারভেজ।

১৭৭ রানের জবাবে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। নবম ওভারে তানজিদ হাসান আউট হওয়ার আগে তাঁর সঙ্গে ওপেনিং জুটিতে ৫০ রান এনে দিয়েছিলেন পারভেজ। এর ৪ ওভার পর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদুল হাসান ফিরতেই বিপদ। মাহমুদুল আউট হতেই অন্য প্রান্তে মাটিতে শুয়ে পড়লেন পারভেজ। ব্যথাটা আর হয়তো সহ্য হচ্ছিল না! তিনিও উঠে গেলেন। বাংলাদেশের তখন বিপদ। দুই প্রান্তেই নতুন ব্যাটসম্যান। এর মধ্যে ভারতের লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণয় এসে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার গুঁড়িয়ে দিলেন। ৬২ রানে ১ উইকেট থেকে ৬২ বলের মধ্যে বাংলাদেশ হয়ে গেল ৬ উইকেটে ১০২! এর ৪ উইকেট বিষ্ণয়ের।

ড্রেসিংরুমে ততক্ষণে কিছুটা শুশ্রূষা নেওয়া পারভেজ এরপর আবার মাঠে ফিরলেন। জুটি বাঁধলেন দারুণ ব্যাটিং করা অধিনায়ক আকবর আলীর সঙ্গে। ৪১ রানের সে জুটিতে পারভেজেরই রান ৩৪। পাঁচটি বাউন্ডারির বাইরে চারটি রান এসেছে অতিরিক্ত থেকে, বাকি রানগুলো দৌড়ে। এর মধ্যে দুই রান দুজনে নিয়েছেন দুবার। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দৌড়ানো পারভেজের প্রতিটি রানই তাঁর বীরত্বের গল্প বলে।

অথচ দ্বিতীয় দফার পুরোটা পায়ের যন্ত্রণা নিয়ে খেলেছিলেন পারভেজ, ‘আমি ফেরার সময় দল বিপদে ছিল। তখনই ভেবেছি ৩০-৩৫ মিনিট বিশ্রাম নিলেই ঠিক হয়ে যাবে। ড্রেসিংরুমে ফিরে আইস থেরাপি দিই। কিন্তু কোনোভাবেই ভালো অবস্থানে আসছিল না। যখন মাঠে নামলাম তখনো পায়ের অবস্থা খারাপ। ভালোভাবে নড়াচড়া করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমাকে খেলা শেষ করতেই হবে। এই জিদটা ধরে রেখেছিলাম। আউট হয়ে ফেরার সময়ও পায়ে ব্যথা ছিল। ম্যাচটি জেতাই সব কষ্ট শেষ।’

এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বকাপ জিতলে তো আর পায়ে ব্যথা থাকার কথা নয়!