প্রতিপক্ষের ইচ্ছায় নামলে কোহলির কী হয়?

স্টিভ স্মিথ, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন, বিরাট কোহলি। এএফপি ফাইল ছবি
স্টিভ স্মিথ, জো রুট, কেন উইলিয়ামসন, বিরাট কোহলি। এএফপি ফাইল ছবি
>টেস্টে অন্যতম সেরা চার ব্যাটসম্যান টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে কেমন পারফরম্যান্স করেন?

ইদানীং একটা গ্রাফিকস ভিডিও ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। কীভাবে শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিচ্ছেন বিরাট কোহলি। শট খেলার সময় শরীরের ভারসাম্য, মাথার অবস্থান এবং পায়ের কাজ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। খুঁতও খুঁজে পাওয়া গেছে। কোহলির ব্যাটিংয়ের খুঁত? সে তো সোনার পাথর বাটি!

না, অসম্ভব না। কোহলিরও বাজে সময় যায়। শেষ ৭ ইনিংসে একটি ফিফটি, একটি চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস এবং আরেকটি ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস আছে। একেবারে খারাপ কিছু না। ব্যাটসম্যানটি কোহলি বলেই চর্চাটা উঠে এসেছে এ পর্যন্ত। বিশ্বের অন্যতম সেরাদের বাজে সময় কাটলে চর্চা, তুলনা—এগুলো উঠে আসা খুব স্বাভাবিক। সেরার প্রশ্নে এক সময় যেভাবে উঠত শচীন টেন্ডুলকার-ব্রায়ান লারাদের নাম। এখন কোহলি, স্মিথ, উইলিয়ামসন, রুটরা।

ওয়েলিংটন টেস্টে আজ প্রথম দিনে কোহলি আউট হওয়ার পর থেকেই প্রশ্নটা উঠছে। টেস্টে প্রতিপক্ষের ইচ্ছায় প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে এ ‘চতুষ্টয়’-এর মধ্যে কে কতটুকু সফল? ওয়েলিংটনে আজও ফুল লেংথ বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন কোহলি। টেস্টে এ দৃশ্যটা তাঁর ক্ষেত্রে একেবারে অপরিচিত কিছু না। সে কারণেই ওই বিশ্লেষণাত্মক গ্রাফিকস ভিডিও। এর মধ্যে কোহলি আবারও একইভাবে মাত্র ২ রান করে আউট হওয়ায় ‘টসে হার এবং প্রতিপক্ষের ইচ্ছা’—এ দুটি বিষয় উঠছে। ওয়েলিংটন টেস্টে যে টস হেরে আগে ব্যাট করেছে ভারত।

টেস্টের প্রথম দিনে উইকেট থাকে সবচেয়ে সতেজ। আর বাইশ গজ পেসবান্ধব হলে তো কথাই নেই। টস জিতে তাই ভারতকে ফিল্ডিংয়ে পাঠিয়েছেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। পেসাররা শুরুতে ফুল লেংথে বল করেন, সুইং পেতে। কাইল জেমিসন ঠিক এভাবেই আউট করেছেন ভারতীয় অধিনায়ককে। ঠিক এমন কন্ডিশন মানে, প্রতিপক্ষ টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমানের সেরা চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে কে কতটুকু সফল। বিশেষ করে কোহলি? এই উপমহাদেশে তো তাঁকে নিয়েই চর্চাটা বেশি হয়।

সে ক্ষেত্রে কোহলি হতাশ করেছেন তাঁর সমর্থকদের। ওদিকে এক গাল হেসে উল্লাস করতে পারেন স্টিভ স্মিথের সমর্থকেরা। রুট আর উইলিয়ামসনের প্রসঙ্গে পরে আসছি।

টেস্টে টস হেরে প্রতিপক্ষের ইচ্ছায় প্রথম ইনিংসে এ পর্যন্ত ১২বার ব্যাট করতে নেমেছেন কোহলি। রান সর্বসাকল্যে ৩০৩। ব্যাটিং গড় ২৫.২৫। এই ব্যাটিং গড় বাংলাদেশের একদা ব্যাটিং স্তম্ভ মোহাম্মদ আশরাফুল, জাভেদ ওমর কিংবা ইমরুল কায়েসের চেয়ে বেশি হলেও কোহলির সমর্থকদের কাছে কিন্তু ভর দুপুরে সূর্যাস্তের মতোই অবিশ্বাস্য। কিন্তু পরিসংখ্যান তো মিথ্যে বলে না। এই যে এই ১২ ইনিংসে কোহলির মাত্র ২টি ফিফটি—সেটিও কিন্তু তাঁর এই বিরুদ্ধ পরিস্থিতিতে চাপে থাকার প্রমাণ।

স্মিথের ক্ষেত্রে আবার ঠিক উল্টো। অস্ট্রেলিয়ানদের মানসিকতা যেমন হয় আরকি। প্রতিপক্ষের ইচ্ছায় ব্যাটিংয়ে নামবেন ঠিকই কিন্তু বেশির ভাগ সময়ই আফসোস করতে হয়েছে তাদের! কোহলির সমান ১২ ইনিংসে ব্যাটিং গড় ৮৮.৪ হলে আর কী করবে! রানসংখ্যা ৮৮৪, ফিফটি ১টি, সেঞ্চুরি ৫টি। ‘কনভারশন রেট’ বলছে এ কন্ডিশনে ইনিংস বড় করার অনুপম উদাহরণ রেখে চলছেন স্মিথ। উইলয়ামসন ও রুটের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন।

নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড ক্রিকেটে অন্তত ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো আলোচিত দল নয়। সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন চলে না, তবে দুটি দল যেন সব সময় আলোচনার বাইরে থাকতেই বেশি পছন্দ করে। যেমনটা এ দুটি দলের দুই সেরা ব্যাটসম্যান রুট-উইলিয়ামসন। দুজনই অন্যতম সেরা, তেমন আলোচনায় থাকেন না তবে নিজের কাজটা করে যান এক মনে। প্রতিপক্ষের ইচ্ছায় আগে ব্যাট করতে নেমে রুট ও উইলিয়ামসনের গড়ও যেন ঠিক তাই! স্মিথের মতো চোখ ধাঁধানো নয় আবার কোহলির মতো হতাশারও না। যথেষ্ট ভালো এবং কার্যকর।

রুট ১৫ ইনিংসে করেছেন ৫৬৭ রান। ব্যাটিং গড় ৪১.১৪, তিন ফিফটি ও এক সেঞ্চুরি। উইলিয়ামসন এভাবে খেলেছেন ২০ ইনিংস। ৩৪.৪৫ ব্যাটিং গড়ে ৬৮৯ রানের পথে পাঁচ ফিফটি ও এক সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন উইলিয়ামসন।