কথা দিয়ে কথা রাখার টেস্ট

কথা দিয়ে কথা রেখেছেন মুশফিক, মুমিনুল দুজনই। ছবি-প্রথম আলো
কথা দিয়ে কথা রেখেছেন মুশফিক, মুমিনুল দুজনই। ছবি-প্রথম আলো

কোচ হিসেবে রাসেল ডমিঙ্গোর চিন্তাটা ভুল ছিল না। তিন টেস্টে তিনবার ব্যাটিং লাইনআপ তিনি বদলাবেন কেন? সেটিও একজন মাত্র ক্রিকেটারের জন্য! মুশফিকুর রহিম পাকিস্তান সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে খেলেননি। খেলবেন না করাচিতেও। মাঝখানে ঢাকায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে তাঁকে নেবেন কি নেবেন না, এ নিয়ে ডমিঙ্গোর ভাবনায় পড়ে যাওয়ায় তাই অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।

অস্বাভাবিক হতো মুশফিক যদি কোচের কথাটা সহজভাবে নিতেন। মুশফিককে যাঁরা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁর মান-অভিমান বোধ কতটা প্রকট, সেটি তাঁদের কারোরই অজানা নয়। কোচের ওই কথাটাও নিশ্চিত জ্বলুনি ধরিয়েছিল মুশফিকের মনে। কিন্তু সেটি আর মুখে বলবেন! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রসঙ্গটি তোলা হলে মুশফিক বরং বলেছিলেন, ‘আমি সবকিছু খুব ইতিবাচকভাবে দেখি। আল্লাহ যদি চান, পারফরম্যান্সই আমার হয়ে কথা বলবে।’

প্রসঙ্গ প্রসঙ্গ টানে। মুশফিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, যে নিবেদন আর একাগ্রতা নিয়ে জাতীয় দলে ১৪ বছর ধরে খেলছেন, তাতে তাঁর কি আর কিছু প্রমাণ করার আছে? মুশফিকের অভিমান প্রকাশ পেয়েছিল সেখানে, ‘হয়তো এই ১৪ বছর ধরে ব্যাট হাতে ছোটখাটো যা পারফর্ম করেছি, তা নিজেকে প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। আরও কিছু করতে হবে।’ মুশফিক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, এবারও পারফর্ম করেই নিজেকে প্রমাণ করবেন, ‘আগেও কথাটা বলেছি, আমার সব সময়ই চিন্তা থাকে পরের সিরিজ বা ম্যাচে কীভাবে আমি একাদশে থাকতে পারব। এ লক্ষ্য নিয়েই কাজ করি। সেভাবে নিজেকে ফিট রাখতে এবং পারফর্ম করতে চেষ্টা করি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।’

ব্যতিক্রম যে হয়নি, সেটি তো আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই দেখল সবাই! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরপর দুই টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি। ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ মাঠেই অপরাজিত ২১৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। আজ করলেন অপরাজিত ২০৩! কথা দিয়ে কথা রাখার উদাহরণ এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে!

কথা মুমিনুল হকও দিয়েছিলেন। মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চলমান টেস্টের আগের ১০ ইনিংসের কোনোটিতেই ২৫০ রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ দল। ব্যাটসম্যানদের বড় ইনিংস খেলা তো দূরের কথা। কিন্তু জিম্বাবুয়ে টেস্টের আগে অধিনায়ক মুমিনুল বলেছিলেন, এবার ব্যাটসম্যানরা সেঞ্চুরি তো করবেনই, কেউ কেউ দুই শ বা তিন শও করে ফেলতে পারেন। কাল মুশফিকের মতো তিনি নিজেও খেলেন ২০১৮ সালে এ মাঠেই জিম্বাবুয়েকে ২১৮ রানে হারানো ম্যাচটির কথা। মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরির সঙ্গে সেবার মুমিনুলও করেছিলেন সেঞ্চুরি। এবারও মুশফিকের অপরাজিত ২০৩ রানের সঙ্গে মুমিনুলের নামের পাশে শোভা পাচ্ছে ১৩২ রান। কথা দিয়ে কথা রাখলেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কও।

২৯৫ রানের লিড নিয়ে ৫৬০ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ দল। জবাবে কোনো রান না করেই দুই উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ের শুরুটা হলো খুবই করুণ। এবার আরেকটি কথা রাখার পালা। জিম্বাবুয়েকে হারিয়েই টেস্ট ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হবে বাংলাদেশ দল।