যে 'ঘর'-এ শুধু ব্র্যাডম্যান ও মুশফিক, ক্লার্ক ওপরতলার বাসিন্দা

কাল ডাবলের পর মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
কাল ডাবলের পর মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
>

মুশফিকুর রহিম তাঁর টেস্ট ক্যারিয়ারে সব কটি ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন পাঁচে কিংবা তার পরে নেমে

টেস্টে ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ সব সময়ই পরিশ্রম ও ধৈর্যের ফসল। প্রতিপক্ষ যে-ই হোক, সামর্থ্যের পুরোটুকুই নিংড়ে দিতে হয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুশফিকুর রহিমের ‘ডাবল সেঞ্চুরি’ সে হিসাবে পুরো নম্বরই পাচ্ছে। আর যে পজিশনে নেমে তিনি ডাবল তুলে নিচ্ছেন, তা একাধিকবার করে দেখাতে পেরেছেন খুব কম ব্যাটসম্যানই।

মুশফিক কাল তৃতীয় ডাবল তুলে নিয়েছেন টেস্ট ক্যারিয়ারের। ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডারে (শীর্ষ চার) নেমে তিনি কখনোই এমন ইনিংস খেলতে পারেননি। পাঁচে নেমে পেয়েছেন দুটি ডাবল সেঞ্চুরি। বাকিটা ছয়ে নেমে। এ পজিশনে নেমে বড় ইনিংস খেলা কঠিন। ‘সেট’ হয়ে বড় ইনিংস খেলার জন্য অন্য প্রান্তে সতীর্থ শেষ পর্যন্ত টিকে থাকবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকে।

কাল তৃতীয় দিনে মুশফিক এ কারণেই হয়তো একটু দ্রুতলয়ে ব্যাট করেছেন। এক দিনেই তুলেছেন ১৭১ রান। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে এক দিনে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ রান তোলার নজির। ২০১৭ সালে ওয়েলিংটন টেস্টে দ্বিতীয় দিনে ২১২ রান তুলেছিলেন সাকিব, ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম দিনে ১৭৫ রান তুলেছিলেন মুমিনুল হক। সাকিব নেমেছিলেন পাঁচে, মুমিনুল তিনে।

ওয়েলিংটনের উইকেট উপমহাদেশের মতো এত দ্রুত ভাঙে না। বলও ব্যাটে আসে মানে ‘স্পোর্টিং’ উইকেট। সাকিবের মতো স্ট্রোকমেকারেরা ‘সেট’ হয়ে গেলে এমন উইকেট রান তোলার জন্য আদর্শ। কিন্তু উপমহাদেশের উইকেটের চরিত্র হাতের তালুর মতো চেনা হলেও অসুবিধা কম না। টেস্টে তৃতীয় দিনে এসে ভাঙন শুরু হয় উইকেটে। বলের গতি মন্থর ও থেমে থেমে আসতে শুরু করে। সঙ্গে অসমান হতে থাকে বলের বাউন্স। স্পিনার ও সিম মুভমেন্টের পেসারদের জন্য সুবিধা হয়ে যায়। মুশফিকের তিনটি ডাবলই কিন্তু উপমহাদেশের মাটিতে। গল ও শেরেবাংলা স্টেডিয়াম।

সে যা–ই হোক, টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ বা এর নিচে নেমে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া ব্যাটসম্যান ১০ জনও নেই। সর্বসাকল্যে ৯ জন—মাইকেল ক্লার্ক, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, মুশফিকুর রহিম, এবি ডি ভিলিয়ার্স, শিবনারায়ন চন্দরপল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, মোহাম্মদ ইউসুফ, থিলান সামারাবিরা ও ডগ ওয়াল্টার্স। এখান থেকে তালিকাটা আরেকটু ছোট করা যায়। যদি বলা হয়, টেস্টে ব্যাটিং অর্ডারে ন্যূনতম পাঁচে নেমে অন্তত তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছেন কজন?

ক্লার্ক, ব্র্যাডম্যান ও মুশফিকুর রহিম।

পাঁচ থেকে তারপরে নেমে সবচেয়ে বেশি চারবার ডাবলের দেখা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ক্লার্ক। সমান তিনবার করে ব্র্যাডম্যান ও মুশফিক।

২০১৩ সালে গল টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ছয়ে নেমে ২০০ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মুশফিক। ৫ বছর পর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই অপরাজিত ২১৯ রান করেছিলেন মুশফিক পাঁচে নেমে। কাল সেই একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ইনিংসটিও পাঁচে নেমেই। তবে ক্লার্ক ও ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে মুশফিক একটি জায়গায় পিছিয়ে। ক্লার্ক তাঁর চারটি ডাবলের মধ্যে একটি রূপান্তরিত করেছিলেন ‘ট্রিপল সেঞ্চুরি’তে (৩২৯*)। তিনটির মধ্যে একটি ট্রিপল বানিয়েছেন ব্র্যাডম্যানও। মুশফিক কাল অপরাজিত ছিলেন ২০৩ রানে। মুমিনুল হক ইনিংস ঘোষণা না করলে মুশফিক হয়তো ট্রিপলও পেয়ে যেতেন। কে জানে?