দাঁত দেখে বয়স বিচার ফুটবলারদের

দাঁত দেখে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে এই মেয়েদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ছবি: প্রথম আলো
দাঁত দেখে বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে এই মেয়েদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। ছবি: প্রথম আলো

‌‘সত্যি করে বলো তোমার বয়স কত?’

— স্যার, আমার বয়স চৌদ্দ।


‘দেখি হাঁ করো।’

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কাল দুপুরে এভাবেই দাঁত দেখে চলছিল ফুটবলারদের বয়স যাচাই–বাছাই। বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৭ গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের বয়স নিরীক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান ফজলে এলাহি ও ফিজিও রাহুল দেবনাথ এভাবেই দাঁত দেখছিলেন ফুটবলারদের।

সারি বেঁধে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকা ফুটবলাররা এগিয়ে যাওয়ার পর রাহুল দেবনাথ ফুটবলারদের জিজ্ঞাসা করছেন, ‘দেখি, হাঁ করো তো। তোমার দাঁত দেখি।’ এভাবে দাঁত দেখার পর কেউ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন, আবার বয়স সঠিক থাকার পরও কেউ বাদ পড়ে বিষণ্ন চেহারায় ঘোরাঘুরি করছিলেন।

গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর সারা দেশে শুরু হয় এই টুর্নামেন্ট। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের খেলা শেষ আজ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে শুরু হয়েছে চূড়ান্ত পর্ব। যে ফুটবলাররা এত দিন জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে অবলীলায় খেলে এসেছেন, তাঁদেরই আজ নতুন করে বয়স প্রমাণ করতে হয়েছে! অথচ এই ফুটবলারদেরই টুর্নামেন্টের বয়স যাচাই–বাছাই কমিটি আঞ্চলিক পর্যায়ে খেলার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবারও বয়স প্রমাণ করতে হচ্ছে ফুটবলারদের। বয়স নির্ধারণের এই ‘প্রাগৈতিহাসিক’ প্রক্রিয়ায় মোটেও সন্তুষ্ট নন কোচ ও ফুটবলাররা।

রংপুরের ফুটবলার তন্বী বিশ্বাস, তনিমা বিশ্বাস, নুসরাত জাহান বৃষ্টি, মোছাম্মত সুলতানা, সাগরিকা আক্তাররা এভাবেই বাদ পড়েছেন আজ। জন্ম নিবন্ধনের সার্টিফিকেট অনুসারে সবাই এই টুর্নামেন্টে খেলেছেন আঞ্চলিক পর্বে। বাদ পড়ে হতাশার সুরে তন্বী বলছিলেন, ‘আমাদের এখনো এখানে খেলার বয়স আছে। কিন্তু খেলতে পারছি না বলে খুব খারাপ লাগছে। জেলা পর্যায়ে খেলেছি, কোনো সমস্যা হয়নি। আমার বয়স এখনো ষোলো বছর হয়নি। কিন্তু এভাবে বাদ পড়ে কী করব বুঝতে পারছি না।’

এভাবে বয়স নির্ধারনের প্রক্রিয়া যে সঠিক নয়, সেটা মানছেন ফজলে এলাহি। কিন্তু নিজেদের সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘এভাবে বয়স যাচাই বিজ্ঞানসম্মত নয়। আমাদের এমআরআই করা উচিত। কিন্তু এত মেয়েকে এমআরআই করা সম্ভব নয়।’ আঞ্চলিক পর্যায়ে খেলার পর কেন চূড়ান্ত পর্বে খেলতে পারছে না ফুটবলাররা? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়াটা ভুল ছিল। আমরা এটা নতুনভাবে করার চিন্তাভাবনা করছি। আগামীবার থেকে যখন বিভাগীয় পর্যায়ের খেলা শুরু হবে, তখন ঢাকা থেকে একটি দল গিয়ে চূড়ান্ত বাছাই করবে। তাহলে আর এবারের মতো সমস্যা হবে না।’

আগামী বছর এই প্রতিশ্রুতি মনে থাকবে কর্মকর্তাদের?