জীবনের নানা বাঁকে শারাপোভা

টেনিসের গ্ল্যামার–গার্লের অবসর। ছবি: এএফপি
টেনিসের গ্ল্যামার–গার্লের অবসর। ছবি: এএফপি
>

টেনিসের গ্ল্যামার-গার্লই বলা হয় মারিয়া শারাপোভাকে। পাঁচটি গ্র্যান্ডস্লামজয়ী এ রুশ তারকা টেনিসকে বিদায় জানিয়ে দিয়েছেন। কোর্টের পারফরম্যান্স দিয়ে খুব কম খবরের শিরোনাম হলেও ৩২ বছর বয়সে তাঁর বিদায়টা ভক্তদের জন্য ধাক্কাই। কয়েক বছর ধরে নিজের ফর্ম হারিয়ে খুঁজছিলেন তিনি। চোটও তাঁর বড় শত্রু হয়ে ছিল। কিন্তু তাই বলে এত তাড়াতাড়ি বিদায় বলে দেবেন, এমনটা কেউই ভাবেননি। ভ্যানিটি ফেয়ার সাময়িকীতে কলাম লিখে বিদায় বলার সময় টেনিসের বাইরে নতুন জগতের লক্ষ্যের কথা বলেছেন তিনি। 

পাঠক, আসুন দেখে নিই শারাপোভার জীবনের বিভিন্ন দিক।

জন্ম, বেড়ে ওঠা ও টেনিসের পাঠ
১৯৮৭ সালের ১৯ এপ্রিল জন্ম মারিয়া শারাপোভার। জন্মস্থান সাইবেরিয়া। মাত্র ২ বছর বয়সে কৃষ্ণসাগরের উপকূলবর্তী শহর সোচিতে চলে আসে তাঁর পরিবার।

টেনিসে হাতেখড়ি
১৯৯৬ সালে ৯ বছর বয়সে রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় চলে আসে তাঁর পরিবার। শারাপোভার বাবা ইউরি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন মাত্র ৭০০ মার্কিন ডলার পকেটে নিয়ে। মা ইয়েলেনা আসতে পারেননি। ভিসা জটিলতার কারণে তাঁকে রাশিয়াতেই থাকতে হয়েছিল। শারাপোভার টেনিসে হাতেখড়ি ফ্লোরিডার ব্রাডেন্টনে অবস্থিত নিক বলেত্তিয়েরি টেনিস একাডেমিতে। ২০০১ সালে পেশাদার টেনিসে পদার্পণ।

টেনিস ক্যারিয়ার
শারাপোভা ২০০৩ সালে জাপানের টোকিওতে টেনিসে নিজের প্রথম শিরোপাটি জিতেছিলেন। সেটি তাঁকে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৫০-এ নিয়ে আসে। ২০০৪ সালে প্রথম রাশিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে জেতেন উইম্বলডনের শিরোপা। ব্যাপারটি রীতিমতো হইচইই ফেলে দিয়েছিল টেনিস দুনিয়ায়। ১৭ বছর বয়সী শারাপোভা সেবার ফাইনালে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারান ৬-১, ৬-৪ গেমে। ২০০৫ সালের আগস্টে শারাপোভা নারী খেলোয়াড় হিসেবে টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসেন।
২০০৬ সালে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতেন—ইউএস ওপেন। ফাইনালে তাঁর কাছে হারেন জাস্টিন হেনিন। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতেন ২০০৮ সালে সার্বিয়ান তারকা আনা ইভানোভিচকে হারিয়ে। এরপর ২০১২ ও ২০১৪ সালে জেতেন ফ্রেঞ্চ ওপেনের দুটি শিরোপা। ২০১২ সালে লন্ডন অলিম্পিকে টেনিসে দেশকে জেতার রুপার পদক। ফাইনালে তিনি হেরে যান সেরেনা উইলিয়ামসের কাছে। ফোর্বস সাময়িকীর হিসাবে ২০১৯ সালে শারাপোভার ছিলেন বিশ্বের সপ্তম সর্বোচ্চ রোজগার।

ক্যারিয়ারের কালো দিক
২০১৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে এক সংবাদ সম্মেলনে শারাপোভা জানান, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ডোপ টেস্টে তাঁর বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ওষুধ সেবনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে তিনি দাবি করেন যে ওষুধটির কারণে তিনি ডোপপাপী প্রমাণিত, সেটি তিনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য সেবন করতেন। মাদকবিরোধী সংস্থা ডব্লুএডিএ তাঁকে নিষিদ্ধ করে। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক টেনিস সংস্থা তাঁকে দুই বছরের জন্য টেনিসের সব কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করে।
পরে বিশেষ আপিলের পর তাঁর নিষেধাজ্ঞা ১৫ মাস কমিয়ে আনা হয়। ২০১৭ সালের এপ্রিলে তিনি আবার কোর্টে ফেরেন। সে বছরই অক্টোবরে তিনি তিয়ানজিন ওপেন টেনিসের শিরোপা জেতেন।

নিজেকে হারিয়ে খোঁজা
২০১৯ সালের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শেষ ১৬-তে পৌঁছেছিলেন শারাপোভা। ফ্রেঞ্চ ওপেনে অবশ্য চোটের কারণে খেলতে পারেননি। তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ তিনটি গ্র্যান্ডস্ল্যামে (উইম্বলডন ২০১৯, ইউএস ওপেন ২০১৯ আর ২০২০ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে) তিনি প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নেন।