কর্মকর্তাদের ভয়ে খেলতে হয় চুরি করে

বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডে দেওয়া হয়েছে তালা। ডানে খেলা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ফেডারেশনের। ছবি: প্রথম আলো
বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডে দেওয়া হয়েছে তালা। ডানে খেলা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ফেডারেশনের। ছবি: প্রথম আলো
>

গত ২১ ডিসেম্বরের পর থেকে পল্টন উডেনফ্লোর জিমনেসিয়ামে শাটলারদের অনুশীলন বন্ধ। বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালানোর সুইচবোর্ডে তালা মেরেছে ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন।

একই ছাদের নিচে নিয়মিত অনুশীলন করেন টেবিল টেনিস খেলোয়াড় মোহাম্মদ শিহান ও শাটলার তাহমিদ আমিন। মার্চেই হবে মহানগরী টেবিল টেনিস লিগ, আন্তবিশ্ববিদ্যালয় চ্যাম্পিয়নশিপ, এপ্রিলে বাংলাদেশ গেমস। শিহানরা তাই পল্টন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ উডেনফ্লোর জিমনেসিয়ামে অনুশীলন করে যাচ্ছেন। কিন্তু অনুশীলন করতে পারছেন না ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়েরা। কারণ, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ব্যাডমিন্টন কোর্টে শাটলারদের সব রকমের অনুশীলন নিষিদ্ধ করেছে ফেডারেশন। শুধু কি তা-ই? শাটলাররা যাতে আলো জ্বালিয়ে অনুশীলন করতে না পারেন, সে জন্য ইনডোরের বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন।

গত ২১ ডিসেম্বর পল্টন উডেনফ্লোরে শেষ হয়েছে ইউনেক্স-সানরাইজ আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট। এর পরদিনই ফেডারেশনের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হয় খেলতে না দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সুইচবোর্ডে ঝোলানো হয় তালা। এরপর থেকে ‘হোম অব ব্যাডমিন্টনে’ কার্যত কোনো খেলাধুলা হচ্ছে না। উডেনফ্লোরের বিদ্যুৎ বিল বেশি দিতে হচ্ছে, এই অজুহাতে আপাতত খেলোয়াড়দের অনুশীলন বন্ধ রেখেছে ফেডারেশন। যদিও ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেনের দাবি, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিবের অনুরোধেই আমরা বৈদ্যুতিক বোর্ডে তালা মেরেছি। কারণ, উডেনফ্লোরে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসছে। তা ছাড়া এখানে বাইরের লোক এসে অনুশীলন করে। এটা থামাতেই এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু জাতীয় দলের র‌্যাঙ্কিংধারী খেলোয়াড়দের জন্য অনুশীলন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।’

কিন্তু সাধারণ সম্পাদক এ কথা বললেও বিজ্ঞপ্তিতে কোথাও উল্লেখ নেই জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা অনুশীলন করতে পারবেন। জাতীয় দলের খেলোয়াড়েরা এলেও অনুশীলন করবেন কীভাবে, সেটাও বড় প্রশ্ন। কারণ, বৈদ্যুতিক বোর্ডে যে তালা। বাতি জ্বলে না। তাঁরা কি অন্ধকারে অনুশীলন করবেন? এই প্রশ্নে আমির হোসেন বলেন, ‘খেলোয়াড়েরা এলে আমরা ব্যবস্থা করব।’ কিন্তু গতকাল বিকেলে উডেনফ্লোরে গিয়ে দেখা গেল খেলোয়াড়েরা এলেও অনুশীলন করতে পারছেন না কোর্ট অন্ধকার থাকায়।

সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এলিনা সুলতানা এসব ঘটনায় হতাশ। তিনি বলছিলেন, ‘ফেডারেশন বলেছে আমাদের অনুশীলন করতে দেবে। কিন্তু আমি একা কীভাবে অনুশীলন করব। আমার পার্টনারের তো র‌্যাঙ্কিং নেই। আর যে শাটলারের র‌্যাঙ্কিং নেই, তাহলে সে কোথায় অনুশীলন করবে? ব্যাডমিন্টনে নোংরা রাজনীতি চলছে। তা ছাড়া উডেনফ্লোর এভাবে অন্ধকারে পড়ে থাকবে, এটা বিস্ময়কর ব্যাপার।’
কাল বিকেলে উডেনফ্লোরে অনুশীলন করতে দেখা গেল জেলা পর্যায়ের কয়েকজন খেলোয়াড়কে। ফেডারেশনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তাঁরা গত কদিন অনুশীলন করেছেন সেখানে। কাল পাশের টিটি কোর্ট থেকে যেটুকু আলো আসছিল, তা দিয়েই কিছুক্ষণ কোর্টে খেলেন নবীন এই খেলোয়াড়েরা। তাঁরা ফেডারেশনের অগোচরে লুকিয়ে উডেনফ্লোরে ঢোকেন। তবে তাঁরা ভয়ে ছিলেন ফেডারেশনের কেউ আবার দেখে ফেলল কি না!

তবে এই লুকোচুরির পরিবেশ দেখতে হচ্ছে না সিলেটের খেলোয়াড়দের। পুরুষ এককে দেশের সেরা দশ র‌্যাঙ্কিং খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই সিলেটের। সালমান খান, মাঙ্গল সিংহ, গৌরব সিংহদের তাই ঢাকায় না এলেও চলছে। কিন্তু অন্যরা খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না উডেনফ্লোরে। অথচ আগামী ১ এপ্রিল শুরু বাংলাদেশ গেমস। ব্যাডমিন্টন শুরু হয়ে যাবে ২৮ মার্চ।
এমনিতে ফেডারেশনের কার্যকর উদ্যোগের অভাবে নতুন খেলোয়াড় উঠে আসছে না বলে ক্ষুব্ধ ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়েরা। সর্বশেষ ব্যাডমিন্টন লিগ হয়েছে পাঁচ বছর আগে। লিগ আয়োজনের কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ক্লাব কাপ ও ফেডারেশন কাপও অনিয়মিত। দায়সারাভাবে হচ্ছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ও র‌্যাঙ্কিং টুর্নামেন্ট। সব মিলিয়ে ব্যাডমিন্টনে অশনিসংকেত দেখছেন সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এনামুল হক, ‘আমার খেলার জীবনে এমন অদ্ভুত কাণ্ড দেখিনি। এভাবে বৈদ্যুতিক বোর্ডে তালা মেরে খেলাধুলা বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। এমনিতেই দেশের ব্যাডমিন্টনের দুরবস্থা। এভাবে চললে ব্যাডমিন্টন খেলাটাই হারিয়ে যাবে দেশ থেকে।’